ছারছীনা শরীফের পীর আলহাজ হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ বলেছেন, মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের জীবনে অনেক দায়িত্ব রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও রাসূল (সা.)’র সুন্নতের পুরোপুরি আমল করার মাধ্যমেই নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করার তাওফীক লাভ হয়। আমল ছাড়া ব্যক্তি ও সামাজিক জীবন অসুন্দর। আমল ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় না। আমল কোনো স্বার্থের জন্য নয় বরং আমল হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহর রাসূল (সা.)’র তরীক্বায়ই আমাদেরকে আমল করতে হবে। হক্কানী আলেম থাকলে দ্বীন থাকে। হক্কানী আলেম না থাকলে আমল থাকেনা না আর আমল না থাকলে দ্বীনও থাকে না। আমরা শুধু ইসলামের কথা বলে যাচ্ছি, কিন্তু ইসলাম হয় আমল দ্বারা। আমল দ্বারাই ঈমানী শক্তি মজবুত হয়। একা আমল করে শুধু নিজের ঈমানকে মজবুত করা নয় বরং দ্বীনের ত্বরীকায় সকলকে আহ্বান করে সেই পথে পরিচালনা করাই প্রত্যেক ঈমানদারের মুখ্য মিশন ও ভিশন হওয়া দরকার। এ কাজে সদা সচেষ্ট থাকাই আমাদের সকলের ঈমানী দায়িত্ব।
পীর ছাহেব আরো বলেন, তরীকা-তাসাউফের অনুশীলন, হক্কানী পীরের নির্দেশ পালন, তার আনুগত্য করা এবং তাকে মহব্বত করা প্রত্যেক মুরীদের জন্য অপরিহার্য। যতক্ষণ না সে শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজের নির্দেশ না দেন। আল্লাহকে পাওয়ার জন্য হক্কানী পীরের সোহবত গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। তিনি গত মঙ্গলবার রাতে ছাগলনাইয়া পৌরসভার পূর্ব ছাগলনাইয়ার বাগানবাড়ী খানকায়ে ছালেহীয়া মোহেব্বীয়া দ্বীনিয়া কমপ্লেক্সের উদ্যোগে বার্ষিক ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পরিপূর্ণ মুসলমান হওয়ার জন্য ইলমে শরীয়ত ও মা’রেফাতের চর্চা করা সবার একান্ত প্রয়োজন। এই উভয় জ্ঞান ছাড়া যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় না, তেমনি খাঁটি মুমিনও হওয়া যায় না। এজন্য নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নিয়মিত জিকির-আজকার, মোরাকাবা-মোশাহাদা এবং বেশি বেশি নফল ইবাদত করা জরুরী।
তিনি বলেন- আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ তথা উত্তরাধীকারী। সে হবে হক্কানী আলেম। যারা ঠিকমত কোরআন, হাদিস, তাফসীর, ফেকাহ পড়েছে অথচ নামায ঠিকমত পড়ে না, রোজা ঠিকমত রাখে না, ঘরে পর্দা করে না, সুদখায়, ঘুষ দেয়, সর্বদা মিথ্যা বলে, হিংসা-ফ্যাসাদ, গীবত শেকায়েত করছে তারা হক্কানী আলেম নয়। হক্কানী আলেম নেক আমল দ্বারা হয়, বদ আমল দ্বারা নয়। কেননা হক্কানী আলেমের অনুসরণ করলে রাসূলের অনুসরণ করা হয়। আর রাসূলকে অনুসরণ করলে আল্লাহকে পাওয়া যায়।
আমরা দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে সমাজে আমলের পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করছি। রাষ্ট্রের কল্যাণে ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে যুগ ধরে ছারছীনা দরবার কাজ করে যাচ্ছে। দেশ ও জাতির ক্ষতি হবে এমন কাজ ছারছীনা দরবার করে না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আমাদের উদ্দ্যেশ্য নয়। আমরা চাই, প্রিয় নবীর আদর্শে, সিদ্দিকিন, শোহাদা, ছালেহীনদের পথে ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ গড়তে।
শান্তির ধর্ম ইসলামের নাম ব্যবহার করে যারা লম্বা জুব্বা ও দাড়ির লেবাসে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে। অশান্তির দাবানল ছড়াতে চায় তাদের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। জীবনকে পবিত্র ও সুন্দরময় করতে হক্কানি আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে নামাজ ও রোজাসহ ইসলামী আহকাম মেনে জীবন পরিচালিত করতে হবে। তবেই পৃথিবী ও পরপারে মহান আল্লাহ ও নবীর সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব হবে। আজ আমল বিদায়ের পথে বিধায়, দ্বীন বাঁচাতে বাংলাদেশের সর্বত্র দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও সন্তানদেরকে সেখানে পড়ানোর জন্য জোড় তাকিদ প্রদান করেন।
আখেরি মুনাজাতে ছরছীনার পীর দেশ, জাতি, মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ কামনা ও বিশ্বের মহামারী করোনাভাইরাসের জন্য দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন। মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন বাগানবাড়ী খানকায়ে ছালেহীয়া মোহেব্বীয়া দ্বীনিয়া কমপ্লেক্সের পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। সকাল ১০টায় মাদরাাসা মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্র হিযবুল্লাহর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন