বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভ্রমণ ভিসায় এসে ভয়ঙ্কর প্রতারণা

সাত বিদেশি নাগরিকসহ নয়জন গ্রেফতার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে ভয়ঙ্কর প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে সাত বিদেশি নাগরিকসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত বিদেশি নাগরিকদের সবাই ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসেছেন। এদের মধ্যে ছয়জন নাইজেরিয়ার ও একজন দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক। তাদের বেশিরভাগের ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা দেশ ছাড়েননি। ভ্রমণ ভিসায় এসে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন তারা। আর এর বাইরে বাংলাদেশিদের সহায়তায় অভিনব প্রতারণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর পল্লবী, রূপনগর এবং দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-নাইজেরিয়ার নাগরিক উদেজে ওবিনা রুবেন (৪২), ভিভিয়ান নাবাইক (৩১), শেডেরিক এজিম (৩২), চিনুডু মোজেস (৩৬), কলিমস আইসিনাকি তালাইক (৩০), চিডিমা অ্যাবেলি (২৬), দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক গ্যাবুজা (৩৬), ফেনীর মো. নাহিদুল ইসলাম (৩০) ও নরসিংদীর সোনিয়া আক্তার (৩৩)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে আটটি পাসেপোর্ট, ৩১টি মোবাইল, তিনটি করে ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভ, একটি চেক বই এবং নগদ ৯৫ হাজার ৮১৫ টাকা জব্দ করা হয়।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, চক্রটি প্রথমে বড় ব্যবসায়ী বা হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের টার্গেট করে মেয়েদের ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতো। এরপর টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে নিজেকে বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের সামরিক বা পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিতো। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পর প্রতারকরা জানাতো, তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে। কিন্তু তারা তা খরচ বা নিজেদের দেশে নিতে পারছে না। তাই সেই ডলার ভিকটিমের কাছে পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করতো। বলতো, তোমার কাছে রেখে দিও। পরে আমি নিয়ে নেবো। চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে বলা হতো, তাদের দিয়ে জনসেবামূলক কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করবে এবং এতে তারা একটি নির্দিষ্ট হারে কমিশন পাবেন। আর যারা ব্যবসায়ী তাদের বলা হতো নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করা হবে।

তিনি বলেন, ভিকটিমকে আকৃষ্ট করতে প্রতারক চক্রটি কিছু ক্ষেত্রে ছোট ছোট উপহার পাঠায়। উপহার পেয়ে ভিকটিম বিশ্বাস স্থাপন করে এবং এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা বলে আমি তোমার নামে একটি ‘দামি পার্সেল’ পাঠিয়েছি। পার্সেল পাঠানোর কিছুদিন পর দেশে তাদের নারী সহযোগী বিমানবন্দর কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে ভিকটিমকে ফোন করতো। বলতো, ওই ভুক্তভোগীর নামে একটি পার্সেল বিমানবন্দরে এসেছে। এরপর কাস্টমস চার্জ হিসেবে মোটা অংকের টাকা বিকাশ/ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে পরিশোধ করতে বলা হতো। যেহেতু পার্সেলটি মূল্যবান এবং এভাবে বিদেশ থেকে আনা আইনসিদ্ধ নয় তাই চার্জ একটু বেশি দেয়ার কথা জানানো হতো। এ সময় কেউ কেউ টাকা না দিতে চাইলে তাদের মামলার ভয়ভীতি দেখানো হতো। একপর্যায়ে বাংলাদেশি ভিকটিমরা প্রলুব্ধ হয়ে বা মামলার ভয়ে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এভাবে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয়ে আসছে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতারকৃত আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের বিদেশি নাগরিকেরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে রাজধানীর পল্লবী, রূপনগর ও দক্ষিণখান এলাকায় ভাড়া বাসায় অবস্থান করে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে এ অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ এবং আটক দুজনের নামে আগের মামলা রয়েছে। আটক সোনিয়া আক্তার ও নাহিদুল ইসলাম এই চক্রের দেশীয় সহযোগী। মূলত তাদের মাধ্যমেই প্রতারক চক্রের বিদেশি নাগরিকরা ভিকটিম সংগ্রহ, বন্ধুত্ব স্থাপন, কাষ্টমস অফিসার পরিচয় এবং শেষে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল। ২০১৮ সালে ফেসবুকে নাইজেরিয়ান নাগরিক উদেজে ওবিনা রুবেনের সঙ্গে পরিচয় হয় সোনিয়ার। সে সূত্রে তিনি এই চক্রে জড়িয়ে পড়েন। প্রতারণায় সহায়তার জন্য ভিকটিম প্রতি ২৫ শতাংশ অর্থ দেয়া হতো তাকে। গত এক বছরে ৩০-৩৫ জন ভিকটিমকে প্রতারিত করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে তিনি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন