মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ছদ্মবেশে রেল স্টেশনে ঘুরে বেড়াতেন বাউল মডেল হেলাল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৩৭ পিএম

বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানো সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামি ও “ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল” গানের বাউল মডেল মো. হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম ওরফে খুনি হেলালকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারের আগে দীর্ঘ দিন থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন রেল স্টেশনে ও মাজারে ঘুরে রেড়াতেন । সেখানে তিনি বাউল গানও গাইতেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আনুমানিক ৬ মাস পূর্বে এক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে র‌্যাবের কাছে তথ্য পদান করে। এ সময় ওই ব্যক্তি জানায়, বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি হলেন বাউল মডেল মো. হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম। এরপর থেকে র্যাব ছাড়া তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ ছয় মাস তদন্ত শেষে গতকাল বুধবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে মো. হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম ওরফে খুনি হেলালকে (৪৫) গ্রেফতার করে। পরে তাকে দফায়া দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় সে তার অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃত জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ২০০১ সালের বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি। এছাড়াও সে আরও ০২টি হত্যা মামলার আসামি। ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি বলে সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।

র্যাব জানায়, ১৯৯৭ সালে বগুড়াতে চাঞ্চল্যকর বিষ্ণু হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। গ্রেফতারকৃত হেলাল ২১ বছর বয়সে ওই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয় বলে জানা যায়। এভাবেই সে বিভিন্ন অপারাধমূলক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে শুরু করে এবং এলাকায় দূধর্ষ হেলাল নামে পরিচিতি পায়।

গ্রেফতারকৃতের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, ২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ধারালো দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয় এবং বাম হাত পঙ্গু হয়। এই ঘটনার পর থেকে দূর্ধর্ষ হেলাল ও হাত লুলা হেলাল হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।

র্যাব আরো জানায়, গত ২০০১ সালে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎকে (২০) পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের পরিবার বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা হত্যা মামলা দায়ের করেন; যার নাম্বার মামলা নং-০২(১০)২০০১; ধারা-৩০২/৩৪। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন।

২০০৬ সালে বগুড়াতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রবিউল নামক এক ব্যক্তিকে কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্তৃক দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গ্রেফতারকৃত হেলাল ওই হত্যাকান্ডের একজন চার্জশীটভুক্ত আসামি।

গ্রেফতারকৃত হেলাল ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়েরকৃত একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়। একই সাথে ২০০১ সালের বিদ্যুৎ হত্যা মামলার বিচারকার্যও চলমান থাকে। ২০১৫ সালেই উক্ত চুরির মামলায় সে জামিনে মুক্ত হয় এবং একই দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। এছাড়াও, ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রয়েছে।

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, হেলাল ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করে এবং এলাকায় মুদি দোকানদারী শুরু করে। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে পড়লে এলাকায় তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে দায়েরকৃত চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিন প্রাপ্তির দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলে সে সু-কৌশলে এলাকা ত্যাগ করে এবং ফেরারি জীবন যাপন শুরু করে। প্রথমে সে বগুড়া থেকে ট্রেনযোগে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসে। পরবর্তীতে কমলাপুর থেকে ট্রেনযোগে সে চট্টগ্রামে চলে যায় এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করে। সেখান থেকে ট্রেনযোগে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যায়। সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন অবস্থান করে।

জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে সে বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করত। সে কিশোরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করে। আনুমানিক ৫ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত হেলাল নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশের একটি গানের শুটিং চলাকালে রেললাইন এর পাশে বাউল গান গাচ্ছিল। তখন শুটিং এর একজন ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে বহুল জনপ্রিয় “ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল” শিরোনামের গানের বাউল মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়।

সে প্রায় ৭ বছর যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারী জীবন যাপন করছে এবং গত প্রায় ৪ বছর যাবৎ কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন মহিলার সাথে সংসার করে আসছে। বিভিন্ন রেলস্টেশনে সে বাউল গান গেয়ে মানুষের নিকট হতে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত বলেও জানান র্যাবে ওই কর্মকর্তা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন