বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

জুমার দিনের আমল ও জুমার নামায

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

জুমার নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মু’মিনগণ! জুুমার দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলদ্ধি কর। (সূরা জুমআ, আয়াত-৯) । আল্লাহ তাআলা জুমার দিন ও জুমার নামাযকে এতো বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন যে, কুরানে ‘জুমাআ’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করেছেন। জুমআ শব্দটি আরবি, এর অর্থ সম্মিলিত হওয়া, একত্রিত হওয়া, ইত্যাদি। আর জুমার নামাজ ইসলামের একটি ফরজ আমল। সপ্তাহে একবার মুসলমানগণ একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত হয়ে যে নামায আদায় করে, তাকে ‘জুমার নামাজ’ বলে। এই নামাজটি ফরজে আইন। মুসলিম শরীফে জুমার দিনের মর্যাদা সম্পর্কে বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন হলো সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এই দিনেই কিয়ামত সংগঠিত হবে।

হাদীস শরীফে জুমার দিনের কিছু ইবাদত বা সুন্নত বর্ণিত হয়েছে। যেমন- জুমার দিন খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা, গোসল করা, মিসওয়াক করা , উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, জুমার দিন আজানের সাথে সাথেই বেচাকেনা বন্ধ করা, তাড়াতড়ি মসজিদে যাওয়া। কোন ওজর না থাকলে পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া, সূরা কাহাফ পড়া। এ প্রসঙ্গে আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে, দাজ্জাল বের হলে তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা।
আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত, নবী কারীম সা. বলেন. তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণে দুরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মখে পেশ করা হয়। এ দিনে দুআর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, কেননা এই দিনে দুআ বেশি কবুল হয়। বিষেশ করে জুমার নামাযের পূর্বে দুই খুৎবার মাঝখানে আর আছরের পর মাগরীবের পূর্বে।
বুখারী শরীফের এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগমণকারীর নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে মসজিদে আসে, সে একটি উট কুরবানি করার সমান সওয়াব পায়। এরপর যে আসে, সে একটি গাভি কুরবানি করার সওয়াব পায়। এরপর আগমনকারী আল্লাহর রাস্তায় একটি মুরগী দানকারীর মতো সওয়াব পায়। এভাবে ক্রমানুসারে আগমণকারীদের সওয়াব লেখা হয়। তারপর ইমাম যখন মিম্বরে দাড়ান, তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন।
আবু দাউদ শরীফে হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতপর তেল ব্যবহার করবে, সুগন্ধি লাগাবে, জুমার নামাযের জন্য মসজিদে গমন করবে, দুই মসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নিবে না এবং ইমাম যখন খুৎবা দেন, চুপ করে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনবে, একাগ্রচিত্তে নামায আদায় করবে, তাহলে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। সুবহানাল্লাহ । মুসনাদে আহমদে আরো ইরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তি জুমার নামায পড়ার জন্য গোসল করল, আগে আগে মসজিদে গমন করল, কোন ওজর না থাকলে পায়ে হেঁটে মসজিদে গেল, ইমামের কাছাকাছি সবল, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনল, কোনো কথা বলল না, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রতি কদমে এক বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব দান করবেন।
রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমার নামায বিনা ওজরে ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। রাসূল সা. আরো বলেন, জুমার নামায ত্যাগকারী লোকেরা হয় জুমার নামায আদায় করবে নতুবা আল্লাহ তাআলা তাদের এই পাপের শাস্তিতে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। পরে তারা অত্মভোলা হয়ে যাবে। অতঃপর সংশোধন লাভের সুযোগ হবে না। (তিরমিজি, নাসাঈ মুসলিম)
কুরান হাদিস থেকে অমরা বুঝলাম, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতাভাবে জুমার নামায ছেড়ে দেয়, তাহলে তার ব্যাপারে রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। তাফসীরে মাজহরীতে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া লাগাতার তিন জুমা বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তনও করা যাবে না। রাসূল সা. বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামায ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। চার শ্রেণির লোক হল- স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জুমার দিনের হক আদায় করার এবং জুমার নামায যথাযথ আদায়ের তাওফিক দান করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন