বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

প্রত্যেক নবী ও রাসূল মাসুম তথা নিষ্পাপ

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

বিভিন্ন যুগে ও বিভিন্নকালে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বিশ্ব মানবতার হেদায়েতের জন্য বহু নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। প্রত্যেক নবী ও রাসূল মাসুম তথা নিষ্পাপ ছিলেন। অর্থাৎ কোনো সগীরা বা কবিরা গোনাহ স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোনো নবী ও রাসূলের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। নবী ও রাসূলগণের ইসমাত বা মাসুম হওয়া এমন একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য যা কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ ছাড়াই নবী ও রাসূলগণকে গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে। প্রত্যেক নবী ও রাসূলের মাসুমিয়াত বা নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়টি মহান আল্লাহপাক সুস্পষ্টভাবে আল কোরআনে বিবৃত করেছেন। এতদ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে : (১) তিনি ছিলেন অঙ্গীকারে সত্যাশ্রয়ী, তিনি ছিলেন রাসূল-নবী। (সূরা মারইয়াম : ৫৪)। (২) আমরা তোমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছি এবং আমরা অবশ্যই সত্যবাদী। (সূরা আল হিজর : ৬৪)। (৩) আমি তোমাদের হিতাকাক্সক্ষী, বিশ্বস্ত। (সূরা আল আ’রাফ : ৬৮)।

(৪) অবশ্যই তোমাদের নিকট সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী আগমন করেছেন। (সূরা আল মায়িদাহ : ১৯)। (৫) আমি তো বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য সুসংবাদদানকারী সতর্ককারী বৈ কিছু নই। (সূরা আল আ’রাফ : ১৮৮)। (৬) নিশ্চয়ই হে নবী! আপনি উত্তম চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা আল ক্বালাম : ৪)। (৭) অবশ্যই আমি তোমাদেরকে এমন কিতাব দিয়েছি যা নিশ্চিত জ্ঞানের দ্বারা বিশদ ব্যাখ্যা করেছি, তা’ বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও করুণা। (সূরা আল আ’রাফ : ৫২)।

(৮) আমি তোমাদের নিকট তাবলীগের জন্য পারিশ্রমিক কামনা করি না। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই দান করবেন। (সূরা আশ্ শুরা : আয়াত ১০৯)। (৯) আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে তাদেরই শ্রেণিভুক্ত একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে শোনাবেন, তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। (সূরা বাকারাহ : ১৫১)।

মোটকথা সকল নবী ও রাসূল উম্মতের নিকট আল্লাহ তায়ালার সংবাদ বাহক ও দ্বীনের প্রচারক ছিলেন। তাদের কাজ আখবার ও তাবলীগের মধ্যেই বিদ্যমান ছিল। কেননা, নবী সংবাদ দেন এবং রাসূল হুকুম-আহকাম কাক্সিক্ষত স্তর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন। এটি একটি অত্যন্ত সুক্ষ্ন বিষয়। এরমধ্যে সৃষ্টির কল্যাণ নিহিত রয়েছে। (নিবরাস : পৃষ্ঠা-২৮২-২৮৩)।

আর একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম ব্যতীত অন্য কোনো মানুষ মাসুম বা নিষ্পাপ নয়। আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে : (১) তোমাদের সাথী (প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.) বিপথগামী, বিভ্রান্ত হননি। (সূরা আন্নাজম : ২)। (২) নবীগণ তাবলীগের ব্যাপারে বিশেষত: শরয়ী বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় পথ নির্দেশনা ও বিধানসমূহ উম্মতের নিকট পৌঁছাতে অসত্য হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ছিলেন। উম্মতে মোহাম্মাদীর সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত মতে, নবীগণ ওহী প্রাপ্তির পূর্বে ও পরে কুফুরি হতে বিমুক্ত ও নিষ্পাপ ছিলেন। (নিবরাস : পৃষ্ঠা ২৮৩)।

(৩) বস্তুত : নবীগণ শয়তানী প্রতারণা, মিথ্যা, সগীরা বা কবীরা গোনাহ ইত্যাদি হতে স্বেচ্ছায় ও ভুলক্রমে, নাবুওয়াতের কার্যক্রম আরম্ভ করার পূর্বে বা পরে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ তারা নিষ্পাপ ছিলেন। (মারামুল কালাম : পৃষ্ঠা-৩২)। (৪) নবীগণ সকলেই সগীরা-কবীরা গোনাহ থেকে পবিত্র ছিলেন। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ৫৬)। (৫) কাজী আয়ায (রহ:) বলেন-দেহ, মন ও মুখের দ্বারা শয়তানী প্রতারণা থেকে আম্বিয়াগণের নিষ্পাপ হওয়ার ব্যাপারে উম্মাতে মোহাম্মাদী একমত পোষণ করেন। (তাফসীরে খাজেন : খন্ড ২, পৃষ্ঠা-২৭০)।

(৬) সকল নবী ও রাসূল নিষ্পাপ, ভুলেও তাদের দ্বারা কোনো গোনাহ হয়নি। আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের ব্যাপারে তাদের দ্বারা কোনো ভুল ত্রুটি হওয়ার অবকাশ মোটেই নেই। (আল ইউওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহিরু: খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২)। (৭) হযরত আল্ আগাররুল মুযানী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই হাত উঁচু করে একথা বলতে বলতে আমাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করলেন : হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের পরওয়ারদিগারের নিকট ইস্তিগফার কর। অতঃপর তাঁর নিকট তাওবা কর। আল্লাহর শপথ। আমি প্রতিদিন আল্লাহর নিকট একশত বার ইস্তিগফার ও তাওবা করি। (সুনানু ত্বাহাভী : খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৬৮)।

এই হাদীসের ব্যাখ্যাকার ওলামাগণ বলেন : বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) একথা বলেছেন, উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। যেন তারা তাওবা ও ইত্তেগফারের মাধ্যমে গোনাহ থেকে মার্জনা লাভের পথ তালাশ করে। কেননা, তিনি গোনাহ হতে পরিপূর্ণ মাসুম ছিলেন। অন্যদের জন্য এটা শোভনীয় নয়। কারণ তারা মাসুম নন। তাদের জন্য গোনাহ হতে তাওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন সম্ভব। এ শিক্ষাই উপরোক্ত হাদীস বিবৃত হয়েছে।

উস্তাদুনা আল্লামা সাইয়্যেদ মুফতী মোহাম্মাদ আমিমুল ইহসান (রাহ.) শামসুল ওলামা উস্তাদুনা সফী উল্লাহ মুসা পুরী (রাহ.); উস্তাদ আবু ইসহাক ইসফারায়েনী (রাহ.); উস্তাদ আবুল ফাতাহ শাহরাস্তানী (রহ.); উস্তাদ কাজী আয়াজ (রহ.); উস্তাদ তাক্কীউদ্দিন সুবকী (রহ.) প্রমুখ মোহাক্কেকীনে কেরাম এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা তাদেরকে আ’লা ইল্লিয়্যিনে স্থানদান করুন! (আল ইউওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহিরু : খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মামুন রশিদ চৌধুরী ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:১৭ এএম says : 0
নবী-রাসূলগণ সকলেই যেহেতু ঈমান-আকীদা, আমল-আখলাক, ইবাদত-বন্দেগী, কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, ইত্যাদি বিষয়ে ভিতর ও বাহির সবদিক থেকে শয়তান ও নফসের কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র ছিলেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও তাঁরা যেহেতু আল্লাহর হিফাজত থেকে বাইরে থাকতেন না, বরং আল্লাহ্ যা হুকুম করেছেন তাই তাঁরা বলেন ও করেন, কাজেই নবী-রাসূলগণ সকলেই হলেন মাসুম বা নিষ্পাপ।
Total Reply(0)
কাজী আনাস রওসন ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:১৮ এএম says : 0
তাঁরা সগীরা ও কবীরা উভয় প্রকারের গুনাহ থেকেও মাসুম। নবুওয়াত প্রাপ্তির পরে তো মাসুম বটেই নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বেও মাসুম। তাই তাঁরা হলেন উম্মাতের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তাঁদের প্রতিটি কথা ও কর্ম মানবতার জন্য কল্যাণকর আদর্শ। তাঁদের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের জন্য অকল্যাণকর।
Total Reply(0)
জি এম জাহাংগীর আলম ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:১৮ এএম says : 0
আকীদা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আম্বিয়ায়ে কিরাম (আ.) সকলেই মাসুম বা নিষ্পাপ। আকীদাগত বিষয়ে তাঁদের থেকে কোনরূপ বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তির হয়নি।
Total Reply(0)
সাইমুম চট্টগ্রাম ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:১৯ এএম says : 0
নবী-রাসূলগণের অন্তর গুনাহের উৎস-প্রবৃত্তি ও শয়তানের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। আল্লাহর বিশেষ হিফাজত এক মুহূর্তের জন্যও তাঁদের থেকে পৃথক হয় না।
Total Reply(0)
Monjur Rashed ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৪৯ এএম says : 0
Tribute to honorable writer. Such a true Ashique E Rasul ( sm) is really rare in this society.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন