শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘সরকারের গুম হত্যার চিত্র ধরা পড়েছে’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশ সরকারের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের চিত্র জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের চোখে ধরা পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গোটা পৃথিবীব্যাপী এই সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠেছে। এদের (সরকার) গুম খুন ও ফ্যাসিবাদের আস্ফলনের মুখে দেশের অনেক লোক বলতে সাহস করেনি। কিন্তু কোনো কিছু ঢেকে রাখা যায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে সব কিছু ধরা পড়েছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বিবৃতি দিচ্ছে। সরকার কত গুম করেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে- সব আস্তে আস্তে গর্তের ভিতর থেকে বের হচ্ছে।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইউনির্ভাসিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ইউটাব) এর উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর তাজমেরী এসএ ইসলামের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
গুম ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ গিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুলিশ সরকারের পক্ষ থেকে গুম ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। সাথে করে ‘আমার ছেলে বা আমার স্বামী সে নিজে নিজেই হারিয়ে গেছে’ এরধরনের স্টেটমেন্ট লিখে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে পরিবারের সদস্যদের স্বাক্ষর করতে বলছে। অনেকেই প্রতিবাদ করেছে। এই ধরনের একটি প্রচেষ্টা সরকার নিয়েছেন যাতে বিশ্বকে দেখানো যায় যারা গুম হয়েছে তারা নিজে নিজে হারিয়ে গেছে।
রিজভী বলেন, আসলে তো কোনো কিছু আটকিয়ে রাখা যায় না। আটকিয়ে রাখায় যায় না বলেই বিএনপি ব্যস্ত থাক তাজমেরী এস এ ইসলামকে নিয়ে, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে। আর ফাঁক দিয়ে আমরা (সরকার) এই কাজগুলো করি। কারণ চারিদিকে আজকে ধিক্কার উঠেছে, সমালোচনা ঝড় বইছে। কোনো লাভ হবে না। পতন যখন অত্যাসন্ন হয় সেই পতনকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।

লাস্ট পেরেকটা আপনি (প্রধানমন্ত্রী) নিজেই মেরেছেন আপনার কফিনে, আপনার সরকারের কফিনে তাজমেরী ইসলামের মতো একজন শিক্ষাবিদকে কারাগারে পাঠিয়ে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ শিক্ষকরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে তাদের রাস্তায় থাকার কথা নয়। তাদের থাকার কথা ছিল শ্রেণি কক্ষে পাঠদান রত অবস্থায়। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী আপনার মধ্যে ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানের আত্মা ভর করেছে। ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম একজন শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নাম্বার ওয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন, চেয়ারম্যান, ডিন, হল প্রাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বপালন করেছেন। আপনি কী কারণে তাকে কারাগারে প্রেরণ করলেন? কী উদ্দেশ্যে? প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, কোন রুচিতে কোন যুক্তিতে তাকে কারাগারে পাঠালেন? আমরা ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি। তাজমেরী ইসলামকে যেদিন কারাগারে নেওয়া হয়েছে, সেই দিনকে আমরা বুদ্ধিজীবী নির্যাতন দিবস পালন করব।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এই মুহুর্তে তাকে মুক্তি দিন। অন্যথায় এইটাই অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো আন্দোলনের এমন দাবানল তৈরি হবে সেই দাবানলে প্রধানমন্ত্রী আপনার র‌্যাব, পুলিশ, আপনাকে যারা পাহারা দেয়, কেউ আর আপনাকে পাহারা দেবে না। আপনার পতন হবেই।
ইউটাবের প্রেসিডেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খানের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেটে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর লুৎফর রহমান, প্রফেসর আখতার হোসেন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শামসুল আলম, কামরুল আহসান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আনিসুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর মতিনুর রহমান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমজাদ হোসেন, জিয়া পরিষদের প্রফেসর আবদুল কুদ্দুস, প্রফেসর এমতাজ হোসেন, ডক্টরস অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর হারুন আল রশিদ, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রফেসর গোলাম হাফিজ কেনেডি, শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, রাকিবুল ইসলাম, আমানউল্লাহ আমান প্রমূখ।
২০১৮ সালেল ২৩ সেপ্টেম্বর মারপিটসহ দন্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় উত্তরা পশ্চিম থানার এক মামলায় বৃহস্পতিবার তাজমেরী এসএ ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক প্রফেসর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন