প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যোগ্যতা হবে বাংলাদেশি নাগরিক যার ৫০ বছর বয়স এবং সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা। অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংবিধানের ১১৮(১)-এ বিধান আছে, প্রেসিডেন্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ আইনটি নিয়ে আসা হয়েছে। খুব বেশি বড় আইন না এটি। এ জাতীয় আইন যেহেতু আমরা হ্যান্ডেল করে আসছি, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন আছে। মোটামুটি সেই অনুযায়ী এটা করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ দিতে একটা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। অন্যান্য আইনে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই। একটি অনুসন্ধান কমিটিও করা হবে, সেটাও প্রেসিডেন্টের অনুমোদন নিয়ে। অনুসন্ধান কমিটি যোগ্য প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার কারা হতে পারবেন আর কারা হতে পারবেন না তা খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি বা বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাহলে কেউ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন। অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আদালতের মাধ্যমে কেউ অপ্রকৃতস্থ হিসেবে ঘোষিত হন, দেউলিয়া ঘোষণার পর দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্ত না হলে, অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন, নৈতিক স্থলন এবং সেক্ষেত্রে যদি ফৈৗজদারি অপরাধে কমপক্ষে দু-বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ে দন্ডি হলে, রাষ্ট্রীয় পদে থাকলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হতে পারবেন না। আগামী নির্বাচন কমিশন কী এ আইনের অধীনে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি এরমধ্যে হয়ে যায় তাহলে হবে। আজকে অনুমোদন দেওয়া হলো, হয়তো কাল-পরশু দুদিন লাগবে আইন মন্ত্রণালয়ের। তারপর যদি ওনারা সংসদে পাঠান, সংসদেও তো কয়েক দিন লাগবে। স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে, ওনারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। যদি হয় তো হয়ে যাবে, অসুবিধা তো নেই। আইনটি চূড়ান্ত করতে আমরা আশা করছি খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়, ছোট আইন। আইনের জন্য বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি বিধি করে দেওয়া হবে। যাতে প্রক্রিয়াগত বিষয়ে বারবার আইন সংশোধন করতে না হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর আগে যেসব নির্বাচন কমিশন হয়েছে সেগুলোকে হেফাজত দেওয়া হয়েছে এ আইনে। যেহেতু এর আগে আইন ছিল না প্রেসিডেন্ট যেসব নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন তা এ আইনের অধীনে করেছেন বলে ধরে সেগুলোকে হেফাজত করা হয়েছে। আইন ভাঙলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণ কীভাবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার তো যতদূর মনে পড়ে, যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা অপসারণ হন একই পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে। বাকিগুলো হয়তো বিধিতে উল্লেখ করে দেওয়া হবে।
সার্চ কমিটির বিষয়ে আইনে কী বলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সার্চ কমিটিতে এক নম্বরে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, তিনি কমিটির চেয়ারম্যান হবেন। এরপর থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, কম্পট্রলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, পিএসসির চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডেন্ট মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটিতে সাচিবিক সহায়তা দেবে। এ সার্চ কমিটি ৬ সদস্য বিশিষ্ট। কিন্তু আগের অনুসন্ধান কমিটিগুলো ছিল বিজোড় সংখ্যার-এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা আমরা আইন মন্ত্রণালয়কে বলব কমিটির সদস্য সংখ্যা জোড় রাখা হবে, নাকি বিজোড় রাখলে সুবিধা হবে। কোনো বিষয়ে মত দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনজন হলে তো সমস্যা হয়ে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন