শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অবাস্তব

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য অনেকটা অস্থিতিশীল হলেও এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির কোনো কারণ নেই। লকডাউনের কারণে শিল্পোৎপাদন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ায় প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য অব্যাহতভাবে কমেছে। উল্লেখ্য, মূল্য সমন্বয়ের নামে সে সময়েও আমাদের দেশে জ্বালানির মূল্য বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝিতে করোনার প্রকোপ কমে আসায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু এবং জ্বালানির উৎপাদন ও চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মূল্য কিছুটা বাড়লেও ওমিক্রনে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য হ্রাস এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দেয়ার শুরুতেই বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য প্রায় ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। কথা ছিল, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও দাম কমানো হবে। এরপর মাসাধিককাল ধরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও আমাদের জ্বালানি বিভাগের আমলারা এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে গণপরিবহনের ভাড়া ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। করোনা মহামারিতে এমনিতেই কোটি মানুষের আয় কমে গেছে। লাখ লাখ মানুষ চাকরি ও কর্মসংস্থান হারিয়েছে। দেশের কয়েক কোটি মানুষ নিম্নমধ্যবিত্ত অবস্থান থেকে দরিদ্র মানুষের অবস্থানে নেমে যেতে বাধ্য হয়েছে। জ্বালানি ও গণপরিবহনের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সব পণ্যের উপর পড়ে। কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের জীবনযাপন এভাবেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে।

অনেকটা অযৌক্তিকভাবে অসময়ে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হলেও গত তিন বছরে দেশে গ্যাসের মূল্য বাড়েনি। আবাসন ও শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহের শতকরা ৭৮ ভাগ দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে সরবরাহ করা হয়। অবশিষ্ট ২২ শতাংশের মধ্যে ১৭ শতাংশ গ্যাস সংগ্রহ করা হচ্ছে কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়। বাকি মাত্র ৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক খোলা বাজার থেকে এলএনজি আকারে কেনা হয়। এ মুহূর্তে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির অন্যকোনো কোনো কারণও নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমে যাওয়ায় গত ডিসেম্বরে দেশীয় কোম্পানিগুলোও প্রতি লিটারে প্রায় ৫ টাকা হারে সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য কমিয়েছিল। এখন হঠাৎ করেই দেশের গ্যাস সরবরাহ কোম্পানিগুলো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে। জ্বালানি বিভাগের সম্মতি পেয়ে ইতোমধ্যে গ্যাস সরবরাহ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বিইআরসি’র কাছে মূল্যবৃদ্ধির যে প্রস্তাব পাওয়া যাচ্ছে তা বর্তমান মূল্যের দ্বিগুণের বেশি বলে জানা যায়। তবে বিইআরসি’র দু’জন শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাবকে তারা অযৌক্তিক ও অবাস্তব বলে মনে করছেন। করোনাকালীন অর্থনৈতিক মন্দার সময় দেশে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এ সময়ে ৯৭৫ টাকার গ্যাস বার্নারের খরচ ২১০০ টাকায় উন্নীত করার ন্যূনতম যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি গ্যাসের মূল্য বা দেশের গ্যাস সরবরাহ কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয় যদি বাড়েও তা কিছুতেই শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগের বেশি হতে পারে না।

ভর্তুকি কমাতে বা মূল্য সমন্বয় করতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ন্যূনতম প্রস্তাব মেনে নিলেও মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিবেচনার এটি সঠিক সময় নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি পেলেও মাত্র ৫ ভাগ গ্যাস খোলা বাজার থেকে সংগ্রহ করার অজুহাতে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধির প্রস্তাব সত্যিই দুঃখজনক ও বিস্ময়কর। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের ব্যয় বাড়বে, শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং আরেক দফা পণ্যমূল্য বাড়বে। অর্থাৎ সমাজের সব স্তরেই এই মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। ইতোমধ্যে ওয়াসার আবাসিক পানির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কার কথাও শোনা যাচ্ছে। করোনার কারণে যখন বিপুল সংখ্যক মানুষের গড় আয় কমে গেছে। নিত্যপণ্যের মূল্য আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন হয়ে পড়ছে। কোটি কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবন মানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এহেন বাস্তবতায় গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও গণপরিবহনের ব্যয়বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র মানুষের জীবন যাপন আরো দুর্বহ ও দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। এ সব বিষয় মাথায় রেখেই চাল-ডালের মতো নিত্যপণ্যের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, সারসহ বৃহত্তর প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সংকটের মুখে ঠেলে দেয়ার মতো যে কোনো মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব ও কারসাজি সরকার প্রত্যাখ্যান করবে, এটাই প্রত্যাশিত। গ্যাস-বিদ্যুতের ন্যূনতম মূল্যবৃদ্ধিরও এটা সঠিক সময় নয়। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব স্থগিত করার পাশাপাশি গ্যাস সর্বরাহ নিয়মিত করার ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২১ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:০৯ পিএম says : 0
আল্লাহর আইন না আসা পর্যন্ত এইসব দুর্নীতিবাজ সরকারের কাছ থেকে আমরা বাঁচতে পারব না আমাদের বাঁচার অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে আমাদের জীবনের কড়া নিরাপত্তায় মান-সম্মান নাই টাকা পয়সা নাই যে আমরা সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে জীবন-যাপন করতে পারব সব টাকা সরকার চুরি দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছে আর আমরা ভীষণ কষ্টে জীবন যাপন করছি
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন