যিকির একটি ধ্যানময় ইবাদত। যিকিরে জিন্দা হয় প্রাণ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘জেনে রাখ, আল্লাহর যিকিরেই অন্তর প্রশান্ত হয়।’ [সূরা রাদ : আয়াত-২৮]। হযরত আবু সা‘য়ীদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত- হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলার একদল ফেরেশতা আছেন, যারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান। তারা যখন একদল লোককে আল্লাহর যিকির করতে দেখেন, তখন তারা পরস্পরকে বলেন, এসো! তোমাদের কাক্সিক্ষত বস্তুর দিকে। তারা সকলে চলে আসে এবং তাদেরকে ঘিরে নেয়। তারা যখন আসমানে আরোহণ করে, তখন আল্লাহ তাআলা বলেন- যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত রয়েছেন- তোমরা আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় ছেড়ে এসেছো? তারা বলে- আমরা তাদেরকে এমতাবস্থায় ছেড়ে এসেছি যে, তারা আপনার হামদ করছে, আপনার তাসবীহ পাঠ করছে এবং আপনার যিকির করছে।
আল্লাহ বলেন- তারা কী চাইছে? ফেরেশতারা বলেন- জান্নাত। আল্লাহ তাআলা বলেন- তারা কি আমাকে দেখেছে? তারা বলে- না। আল্লাহ বলেন-যদি তারা দেখতো তাহলে কেমন হতো? ফেরেশতারা বলে- তারা যদি দেখতো তাহলে তা আরও বেশি চাইত এবং আরও বেশি উৎসাহ প্রকাশ করত। তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন- তারা কী থেকে আশ্রয় চায়? ফেরেশতারা বলে- তারা জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়। আল্লাহ তাআলা বলেন- তারা কি তা দেখেছে? ফেরেশতারা বলে- না। আল্লাহ তাআলা বলেন- যদি তারা দেখত, তাহলে কেমন হত? ফেরেশতারা বলে- যদি তারা দেখত, তাহলে তারা তা থেকে আরও বেশি পালিয়ে থাকতো এবং আরও বেশি ভীত হতো। আল্লাহ তাআলা বলেন- হে আমার ফেরেশতারা! আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি- আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। ফেরেশতারা বলবে- তাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি খুব গোনাহগার। সে তাদের মধ্যে ছিল না; বরং অন্য প্রয়োজনে এসে তাদের সাথে বসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- এরা এমন একদল লোক, যাদের সাথী দুর্ভাগা হয় না।
চারটি অমূল্য সম্পদ-
হযরত কাতাদাহ রহ. থেকে বর্ণিত- হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- চারটি বস্তু যাকে দান করা হয়েছে, তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করা হয়েছে। যথা- (১) যিকিরকারী জিহ্বা, (২) শোকরকারী মন, (৩) ধৈর্যশীল শরীর, (৪) মুমিন নেককার স্ত্রী। এখানে প্রথমেই যাকেরীনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দাউদ আ.-এর দুআ-
মনীষীরা বলেন- হযরত দাউদ আ.-এর একটি দুআ ছিল এই যে, তিনি বলতেন- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চারটি বস্তু প্রার্থনা করি আর চারটি বস্তু থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনার নিকট আমি যে বস্তুগুলো প্রার্থনা করি, তা হলো যিকিরকারী জিহ্বা, শোকরকারী মন, ধৈর্যশীল শরীর ও এমন স্ত্রী যে আমাকে দুনিয়া ও আখেরাতে সাহায্য করবে। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই এমন সন্তান থেকে যে আমার উপর মনীব হবে। এমন স্ত্রী থেকে যে আমাকে বার্ধক্যের সময়ের পূর্বেই বৃদ্ধ করে ফেলবে। এমন সম্পদ থেকে যা আমার জন্য বিপদ হবে। এমন প্রতিবেশী থেকে যে আমার মধ্যে কোন সৎগুণ দেখলে গোপন করবে আর অসৎগুণ দেখলে প্রকাশ করবে। মূল কথা হলো-এখানে দাউদ আ. এর দোয়ার মধ্যেও তিনি সর্বপ্রথম যেটা চেয়েছেন তা হলো- যিকিরকারীর জিহ্বা। এক দ্বারাই প্রতীয়মান হয়- যিকিরের ফজীলত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া যিকির মানুষের মন হালকা করে। সজীবতায় পূর্ণ করে দেহপ্রাণ।
আল্লাহ আমাদের এখলাসপূর্ণ যিকিরকারী হিসেবে কবুল করুন! আল্লাহ প্রেমের নিভৃত যিকিরের ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত করে দিন আমাদের চারপাশ। সাথে সাথে এ জীবন ও জবানকে যিকিরের রশ্মিতে ভরপুর করে দিন। যিকিরের মাধ্যমে উম্মাহর কলবে ঢেলে দিন ফোটা ফোটা প্রেমের নির্মল শরাব। পাগল হোক প্রাণ।
লেখক : প্রশিক্ষণ সম্পাদক- বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন