শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরই মাঝে এই ভিসির একটি বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের সহজে কেউ বউ হিসেবে নিতে চায় না’ এমন একটি মন্তব্যের সূত্র ধরে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন শাবিপ্রবির এই ভিসি। গত মঙ্গলবার ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি অডিওতে ওই মন্তব্য করতে শোনা যায় প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে। শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা তার ওই অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেন। ভিসির সঙ্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন তিন শিক্ষার্থীও অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ফেসবুকে ভাইরাল ওই অডিও বিষয়ে জানা যায়, গত বছর শাবিপ্রবির সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এর অংশ হিসেবে ভিসির সঙ্গেও তারা সাক্ষাৎ করেন। তখন তাদের দাবি ছিল ৩৬৫ দিন হল খোলা রাখা, ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে হলে প্রবেশের সময়সীমা চাপিয়ে না দেওয়া। এ প্রেক্ষিতে এক ছাত্রলীগ নেতার বরাত দিয়ে ওই বিরূপ মন্তব্য করেন ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
অডিওতে ভিসিকে বলতে শোনা যায়, ‘যারা এই ধরনের দাবি তুলেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় সারা রাত খোলা রাখতে হবে, অবশ্যই এই দাবিটা এসেছে এবং এইটা একটা জঘন্য রকম দাবি। আমরা মুখ দেখাইতে পারতাম না। এখানে আমাদের ছাত্রনেতারা বলছেন যে, জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের কেউ সহজে বউ হিসেবে নিতে চায় না। কারণ সারা রাত এরা ঘুরাফিরা করে। বাট আমি চাই না যে, আমাদের যারা এত ভালো ভালো স্টুডেন্ট, যারা এত সুন্দর সুন্দর... আমাদের এখানকার যে ডিপার্টমেন্টগুলো এবং আমাদের যে বিখ্যাত শিক্ষকরা... তারা যাদের গ্র্যাজুয়েট করে তোমাদের বের করতে চায়, তাদের এ রকম একটা কালিমা লেপুক তাদের মধ্যে’।
শাবিপ্রবি ভিসি আরও বলেন, ‘ওই জায়গাটা কেউ চায় না, কোনো গার্ডিয়ান চায় না কিন্তু। এখন, আমরা যদি কাউকে বলি, তোমার বাবা-মা কাউকে ফোন করব। তখন তোমরাই তো এটা বাধা দিবা না না না, এইটা হবে না, দেখ হয়রানি করতেছে। এটা তো প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব, তোমাদেরও নৈতিক দায়িত্ব যে, এই মেয়ে কেন রাতের বেলা সোয়া দশটা পর্যন্ত স্যাররে সময় দিছে। ’
ভিসি বলেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে সোয়া দশটা পর্যন্ত মেয়েরা অফিসে থাকতে পারে না। তারপরেও আমরা সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু তোমরা কেন বল না যে... কি তুমি একদিন রাস্তায় বের হও.. তোমরা, এটা বল যে, তুমি বারোটা-একটায় কী করতেছ? দুইটার সময় কী করতেছ’? ‘আমি মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে যখন আসি রাতে বারোটা-একটা বেজে যায়। আমি দেখি যে, আমাদের ওয়ান কিলোমিটার রাস্তা দিয়া ছেলেমেয়ে হাত ধরাধরি করে কনসালটিং করতেছে। একটা অঘটন ঘটলে কিন্তু দায়দায়িত্ব ভাইস চ্যান্সেলরকে নিতে হবে। যত দোষ, নন্দ ঘোষ। ভাইস চ্যান্সেলর দায়ী সে জন্য’।
এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রীদের নিয়ে এমন ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন জাবি শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন করা হয়। পরে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন শিক্ষার্থীরা।
শাবিপ্রবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট বডির পদত্যাগসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসির পদত্যাগের একদফা দাবিতে এখন আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে এমন একটি মন্তব্যের সূত্র ধরে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন শাবিপ্রবি ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। গত মঙ্গলবার ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই অডিওটি গত বছরের বলে জানা যায়। এ ঘটনায় জাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
মানববন্ধন চলাকালে জাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও জ্ঞান উৎপাদনের জায়গা। সেখানে দলদাস ও বিকৃত মস্তিষ্কের লোকেদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গবেষণার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। শাবি ভিসির জানা উচিত আমাদের মেয়েরা গবেষণা, শিক্ষা ও খেলাধুলাসহ সকল অঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মির্জা সোহাগ বলেন, ফরিদ উদ্দিন একজন অথর্ব ভিসি। তার মনমানসিকতা নোংরা। তার এমন মন্তব্যে নারীদের হেয় করা হয়েছে। এই সময়ে তার বক্তব্য নারী শিক্ষার অন্তরায়। প্রকাশ্যে তাকে সকলের নিকট ক্ষমা চাইতে হবে।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান শুভ বলেন, একুশ শতকে এসে এমন মন্তব্য শোনা খুবই দুঃখজনক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ ঘণ্টাই নারীরা নিরাপদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি তাদেরকে এ নিরাপত্তা দিচ্ছে। জাবি প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ফরিদ উদ্দিনের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া লিতুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন রাসেল, জিল্লুর রহমান প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন