বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দিশেহারা নিম্নআয়ের মানুষ

ভরা মৌসুমেও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী বেড়েছে তেল-আটাও

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

বর্তমান সময়ে চালের মজুদ আগের যেকোন বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ থাকলেও গত এক মাস ধরেই রাজধানীর বাজারে চালের দাম বাড়তি অবস্থায় আছে। ভরা মৌসুমেও চালের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে পুরনো চালের দাম কেজিতে অন্তত দুই টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। যদিও সরকারের কাছ থেকে চালের শুল্ক সুবিধা কমানোসহ সংগ্রহকালীন সুবিধা নিয়েছেন মিলার ও ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া বেড়েছে তেল ও আটার দাম। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত এক মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। বাজারে এখন মোটা চাল কেজিপ্রতি ৪৪-৪৬, মাঝারি ৫৪-৫৫ ও চিকন চাল ৬২-৬৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চাল কিনতে আসা ক্রেতারা বলেন, দুদিন পর পর চালের চালের দাম বাড়ছে। নিম্নআয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভরা মৌসুমেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নানা কৌশলে চালসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করেই চলেছে। খাদ্যপণ্যের বাজার যাতে যখন-তখন অস্থির হতে না পারে সেজন্য সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
গত বছর ৩১ অক্টোবর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমন সংগ্রহ কার্যক্রম ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর শুরু হয়ে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ মৌসুমে সরকারিভাবে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ৩ লাখ টন আমন ধান, ৫ লাখ টন সিদ্ধ আমন চাল সংগ্রহ করা হবে। গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ৪২ হাজার ১৫৪ টন আমন ধান ও ৪ লাখ ৪৫ হাজার ১৯ টন সিদ্ধ আমন চাল সংগৃহীত হয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ ১৯ দশমিক ৭৮ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ১৬ দশমিক শূন্য ৯ লাখ টন, গম ৩ দশমিক ৪৪ লাখ টন এবং ধান শূন্য দশমিক ৩৮ লাখ টন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার মৌসুমি ধান বিক্রেতার সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে তা বিভিন্ন স্থানে মজুদ করে রেখেছে। মজুদকৃত ধান এখন বিক্রি করছে বাড়তি দরে। এর প্রভাব পড়ছে চালের বাজারে।
এদিকে আগামী ১৫ দিন ভোজ্য তেলের দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পরই লিটারে তা বেড়েছে ৫ টাকা। একই সঙ্গে বেড়েছে খোলা আটার দাম। প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকায়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। চাল, ডাল, তেল ও সবজি থেকে শুরু করে সব কিছুর দামই বাড়তি। প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একই সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারকে খোলাবাজারে চালের বিক্রি ও পরিমান বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা কঠোর করতে হবে। মিল থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় কঠোর নজরদারি করতে হবে, বর্তমানে যা খুবই দুর্বল। এদিকে এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতকালীন সবজি। সপ্তাহের ব্যবধানে আরেক দফা দাম বেড়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা ও বেগুনের। প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৫০ ও বাঁধাকপি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজি। তবে টমেটো ও আলুর দাম কমেছে। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে ৫ টাকা কমে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি শিম ৪০, পেঁপে ৩০, করলা ৬০, মুলা ২০, কাঁচামরিচ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম না বাড়লেও গত সপ্তাহের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মসুর ডাল। বড় দানার মসুর ডাল ৯৫-১০০ ও ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকা। দাম কমেছে দেশি পেঁয়াজ ও রসুনের। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০, দেশি রসুন ৬০ এবং চায়না রসুন ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল ডিমের দাম ডজনপ্রতি কমেছে ৫ টাকা। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। তবে দেশি হাঁসের ডিম ডজনপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। তবে বেশ খানিকটা কমেছে মুরগির দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। ব্রলার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০-১৭৫ টাকা। পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকা কেজি।
এ ছাড়া রুই ও কাতলা মাছ সর্বোচ্চ ৪৫০, শিং ও টাকি ৩৫০, শোল ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ও পাঙাশ বিক্রি হয়েছে ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকায়। ছোট ইলিশ ৬০০, নলামাছ ২০০ ও চিংড়ি ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন