শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সফলতা লাভের জন্য চেষ্টা ও সাধনা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

মুমিন মুসলমানদের স্মরণ রাখা উচিত যে, পরম কৌশলী ও মহাবিজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ইহকাল ও পরকালের সফলতা চেষ্টা ও সাধনার মধ্যে নিহিত রেখেছেন। আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে : (ক) মানুষ তা-ই পায়, যার জন্য সে চেষ্টা ও সাধনা করে। (সূরা নাজম : ৩৯)। (খ) (কেয়ামতের দিন) মানুষ যে সকল চেষ্টা ও সাধনা করেছে, তা স্মরণে আসবে। (সূরা নাযিয়াত : ৩৫)। (গ) যে ব্যক্তি আখেরাতের জীবনের সফলতা প্রত্যাশা করে এবং তার জন্য চেষ্টাও সাধনা করে এবং সে মুমিন, এই শ্রেণির লোকদের চেষ্টা ও পরিশ্রম গৃহীত ও মর্যাদাশীল হবে। (সূরা বাণী ইসরাঈল : ১৯)।

উল্লেখিত তিনটি আয়াতে কারীমার অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে সত্যান্বেষী লোকদের মনের পর্দায় যে বিষয়গুলো উদ্ভাসিত হয় তা হলো, জীবন ও জগতের যাবতীয় সফলতা কামিয়াবী, উন্নতি ও অগ্রগতি চেষ্টা ও সাধনার সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। এতদপ্রসঙ্গে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহ.) বলেন : এটি হলো অন্তর দিয়ে চেষ্টা ও সাধনা করা। আর এটি চেষ্টা ও সাধনার চারটি স্তরের মধ্যে একটি। স্তর চারটি হলো নিম্নরূপ। (১) অন্তর সহযোগে চেষ্টাও সাধনা করা। (২) রসনা ও জিহ্বা দ্বারা সাধনা করা। (৩) অর্থ সম্পদ দ্বারা চেষ্টা করা এবং (৪) সমগ্র শরীর দ্বারা পরিশ্রম করা।

এ প্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘তোমরা অবিশ্বাসী অংশীবাদীদের সাথে জিহ্বা, অন্তর এবং অর্থ সম্পদ দ্বারা চেষ্টা, সাধনা ও সংগ্রাম করো।’ (সুনানে আবু দাউদ : ২৫০৪; সুনানে নাসাঈ : ৬/৭)। এই হাদীসটির মর্ম বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) বলেছেন : শারীরিক অধিক আমলের উপরেই মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর করে না। বরং তা নির্ভর করে আল্লাহ পাকের জন্য খাঁটি ও বিশুদ্ধ নিয়ত এবং সুন্নাত বা হাদীসের সঠিক অনুবর্তিতার মাধ্যমে এবং অন্তর সম্পর্কে অধিক সজাগ ও অধিক পরিচয় লাভেল মাধ্যমে এবং তা কার্যত : বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

সুতরাং এর দ্বারা স্পষ্টতই অনুধাবন করা যায় যে, চেষ্টা, সাধনা, পরিশ্রম, রিয়াজত, সোজাহাদাই হলো সফলতা লাভের চাবিকাঠি। এটা হলো আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের বিশেষ অনুগ্রহ। তিনি যাকে চান তা দান করেন। কেন না, আল্লাহ পাকের নৈকট্য, তাঁর দিকে অগ্রবর্তিতা, সুদৃঢ় ইচ্ছা, অভিপ্রায়, খাঁটি আগ্রহ এবং চূড়ান্ত সংকল্প দ্বারাই সম্ভব। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওজরের কারণে আসলে পশ্চাদ গানীতা দেখা দেয়া অসম্ভব নয়।
প্রকৃতপক্ষে মুমিন মুসলমানদের অন্তরের পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, তাকওয়া ও পরহেযগারী সহযোগে সে চেষ্টা ও সাধনা এগিয়ে চলে তাই হলো মূল বিষয়। বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের তাকওয়া বা পরহেযগারী প্রতিপাদ্য বিষয় নয়। মহান রুব্বুল ইজ্জত আল্লাহপাক কুরবানীর পশু এবং হজ্জ আদায়কালে ‘হাদী’ অর্থাৎ কুরবানী করা সম্পর্কে যা নির্দেশ প্রদান করেছেন, তা এ বিষয়ের প্রমাণ হয়ে আছে।

আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর কাছে কুরবানীর পশুর গোশ্ত এবং রক্ত পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের (অন্তরের) তাকওয়া। (সূরা হাজ্জ : ৩৭)। এতে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, আল্লাহপাকের কাছে অন্তরের তাকওয়া ও পরহেযগারীই পৌঁছে থাকে। মহান আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়টিকে আরো সহজতর করে বিশ্লেষণ করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : তাঁরই (আল্লাহর) দিকে পবিত্র বাণীসমূহ উর্ধারোহণ করে এবং নেক আমল একে সমুচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করে। (সূরা ফাতির : ১০)।
সুতরাং এ সকল বাণীর মূল মর্ম হচ্ছে এই যে, মুমিন মুসলমানের যাবতীয় আমল, চেষ্টা ও সাধনার মূল উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহ ভীতি, তাকওয়া ও পরহেযগকরী। এবং তা সম্ভব হবে আল্লাহর ভালোবাসা মহব্বত এবং মর্যাদা ও সম্মানের সাথে একমাত্র আল্লাহর জন্য অন্তরের ইবাদত ও বন্দেগির মাধ্যমে। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কাছে ইবাদত, আমল চেষ্টা, সাধনার প্রকাশ্য আকৃতির কোনো মর্যাদা নেই।

বরং তা মর্যাদাশীল হওয়ার জন্য ঈমান ও আন্তরিকতার ওপর নির্ভরশীল। যাতে আল কোরআন ও সুন্নাত-এর পরিপূর্ণ দিক নির্দেশনার বাস্তবায়ন ঘটে থাকে। তবে, যে চেষ্টা ও সাধনায় এই লক্ষ্য মাত্রার ছোঁয়াচ পাওয়া যায় না বা নেই, তার মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধির আশা পোষণ করা বাতুলতা ছাড়া কিছুই নয়। আল কোরআনের দিক নির্দেশনা এটাই। ইরশাদ হয়েছে : যে দিন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না। সেদিন উপকৃত হবে শুধুমাত্র সে ব্যক্তি, যে বিশুদ্ধ অন্তঃকরন নিয়ে আল্লাহ পাকের নিকটে উপস্থিত হবে। (সূরা শোয়ারা : ৮৮-৮৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
M A Badsha ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৭ এএম says : 0
মানুষ চেষ্টা করলেই সফল হতে পারে। এর জন্য শূন্য থেকেই যাত্রা শুরু করতে হয়। চেষ্টা করলে বিজয় সবার হবেই।
Total Reply(0)
Noman Mobarak ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৭ এএম says : 0
বিজয়ের জন্য অনেক গুণ থাকতে হয় না। শুধু দক্ষতা, চেষ্টা, ধৈর্য, আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম থাকলেই যথেষ্ট।
Total Reply(0)
Kajal Motahar Alam ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৮ এএম says : 0
যে কোনো কিছু অর্জনের ব্যাপারে কারো উপর নির্ভরতার চেয়ে নিজের উপরই বেশি নির্ভর করতে হয়। ব্যর্থতার জন্য কারো ওপর কোনো অভিযোগ থাকতে নেই। অভিযোগটা আসলে নিজের কাছেই করতে হয়।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৮ এএম says : 0
ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধির জন্য সবসময় চেষ্টা করে যাবেন। কোনো নতুন ফল না পেলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। তখন লেগে থাকার ধৈর্য শক্তি অর্জনের চেষ্টা বাড়াতে হবে। একটা বিষয় নিয়ে অনেক দিন গবেষণা এবং ধৈর্য নিয়ে লেগে থাকলে সেটাতে দক্ষতা আসবেই।
Total Reply(0)
Noman Mobarak ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৯ এএম says : 0
কোনো কিছু অর্জন করা এতো সহজ নয়। বিশাল আত্মত্যাগেই কিছু অর্জন করা সম্ভব। সফলতার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। বরং আপনার কাজই আপনাকে সফলতার কাছে নিয়ে যাবে। এ অর্জনটির জন্যই অনেক আত্মত্যাগ এবং কষ্ট করতে হয়।
Total Reply(0)
Ujjal Hasan ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৯ এএম says : 0
আপনার সব অর্জন নিজের পরিশ্রমের জন্য। পরিশ্রমের কোনো সংজ্ঞা নেই। পরিশ্রমটাই সফলতা বের করে নিয়ে আসে। পরিশ্রম করার পরের দিনই কিছু পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে নেই। পরিশ্রম করলে ফল কিছু না কিছু পাবেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন