মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

মেয়াদ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির দাবি ব্যবসায়ীদের

ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

করোনা মহামারির মধ্যে এখনো দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এমন অবস্থায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে অন্তত জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছেন সারাদেশের ব্যবসায়ী নেতারা। গতকাল শনিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস-২০২২ এর মতবিনিময় সভায় এই দাবি জানান তারা। সভায় বক্তব্য রাখেন সারাদেশ থেকে আগত জেলা, সিটি ও নারী উদ্যোক্তাদের চেম্বারগুলোর সভাপতি, সহ-সভাপতিবৃন্দ। ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনার ২য় ঢেউয়ের পর এখন করোনার ওমিক্রণ সংক্রমণে আবারো ব্যবসা বাণিজ্যে নাজুক পরিস্থিত তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীর ঋনের কিস্তি দেয়ার সক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সময় না বাড়ালে ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই খেলাপি হবেন, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।

এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সভাপতি বলেন, ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধার মেয়াদ না বাড়ালে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী খেলাপি হবেন। মহামারিকালীন মন্দা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা এখন আরো বেশি দরকার। তা না হলে, ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়বে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশে যেসব খাতের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিলো সেখাতগুলোই এখনো প্রণোদনার ঋণ পায়নি। মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেনক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। কিন্তু অন্যান্য প্রণোদনা তহবিলের অর্থ প্রায় শতভাগ ছাড় হলেও, এসএমই প্রণোদনার বড় অংশ বিতরণ হয়নি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ছোট আকারের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর অনীহা আছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যাংকগুলো মনে করে ছোট আকারের ঋণ দেয়া লাভজনক নয়। বড় ব্যবসা খাতে ঋণ দিলে ব্যাংকের জনবল ও খরচ কম হয়। কিন্তু এ ধারণা ভুল, বরং এতে মন্দ ঋণের ঝুঁকি বাড়ে। এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ নেই বললেই চলে।

দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে বেসরকারিখাতকে রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে ৮২ শতাংশ অবদান রাখছে বেসরকারিখাত। তাই বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যে কোন নীতি প্রণয়নে এফবিসিসিআই’র মতামত থাকা জরুরি।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস এর সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, দেশে এখনো শুল্ক-কর ও ভ্যাট আদায়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। কোম্পানি আইন, আমদানি ও রফতানি আইন নতুন করে হচ্ছে। এসব আইন যেন ব্যবসা বান্ধব হয় সেজন্য এফবিসিসিআই কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, করোনা মহমারিতে বিপর্যস্ত ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যেও রাজস্ব আদায় করতে নানাভাবে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি ও ভীতির পরিবেশ তৈরি করছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজিরও শিকার হচ্ছেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও জেলা পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। এ কারণে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের পক্ষের মহামারি পরবর্তী উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়ছে।
এ ছাড়াও অডিটে সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট বাস্তবায়ন হলে তা পুরো অর্থনীতিতে বিপর্যয় আনবে বলে মত দেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন কারখানা স্থাপনে ৩৩টি লাইসেন্সের দরকার হয়। এসব সনদ নিতে বিপুল পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হতে হয় উদ্যোক্তাদের। এই সমস্যা সমাধানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে লাভ ক্ষতি নির্বিশেষে টার্নওভার ট্যাক্সের বিধান বাতিল করে শুধু আয়ের ওপর কর আরোপের দাবি জানান তারা।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বেলাল, রাজশাহী ওমেন চেম্বারের সহ-সভাপতি তাহেরা হাসেন, সাতক্ষীরা চেম্বারের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ড মোহাম্মদ গোলার জাকারিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বারের সভাপতি আলহ্বাজ আজিজুল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মো. এরফান আলী, পটুয়াখালী ওমেন চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইসমত জেরিন খান, বাগেরহাট চেম্বারের সভাপতি এস কে লিয়াকত হোসেইন, ফিকির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, নীলফামারি চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফারহানুল হক, লালমনিরহাট চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবির, খুলনা চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শরীফ আতিয়ার রহমান, নরসিংদী চেম্বারের সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক আলী হোসেইন শিশির, গোপালগঞ্জ চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন, দিনাজপুর চেম্বারের সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক শামীম, বান্দরবান চেম্বারের সহ-সভাপতি লক্ষীপদ রায়, ঝিনাইদহ চেম্বারের সহ-সভাপতি মো. নাসিম উদ্দিন, দিনাজপুর উইমেন চেম্বারের সভাপতি জান্নাতুস সাফা শাহীনুর, লক্ষীপুর চেম্বারের এম আর মাছুদ, সিরাজগঞ্জ চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ইসহাক।
এফবিসিসিআই’র পরিচালকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মো, রেজউল করিম রেজনু, তাহমিন আহমেদ, প্রীতি চক্রবর্তী, মো. নিজাম উদ্দিন, আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. আমিনুল হক শামীম, মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দীন আলমগীর, হাবীব উল্লাহ ডন,ও এম এ রাজ্জাক খান রাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন