শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রিভেঞ্জ পর্নের বিরুদ্ধে এক নারীর লড়াই

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৬ পিএম

প্রতিশোধমূলক পর্নের শিকার হওয়া ইনেস মরিনিও তার জীবনের লক্ষ্য হিসাবে নিয়েছেন এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াকে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন ডিজিটাল আইন কি অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে?

ইনেস মরিনিও পর্তুগালের লিসবনে নিজের দিনের কাজ গুছিয়ে অফিস থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷ তখনই তার ফোন বেজে ওঠে৷ তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সম্বলিত একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে, এমন একটি ম্যাসেজ আসে তার ফোনে৷

ঘটনাটি যখন ঘটে তখন তার বয়স কেবল ২১৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমি অসাড় বোধ করতে শুরু করি এবং পরিবারের কাছে ছুটে যাই৷ যাকে আমি বিশ্বাস করতাম এমন একজন আমার নাম উল্লেখ করে ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে৷ পর্ন প্লাটফর্মে এবং টুইটার ও টেলিগ্রামেও এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে৷ ঘটনাটা আমাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল৷’

মরিনিওর মতো অনেক নারীই ছবি-ভিত্তিক এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ এদের সাবেক প্রেমিকেরা বিচ্ছেদের পর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছেন৷ বিনা সম্মতিতে এমন পর্নোগ্রাফি আইনত দণ্ডনীয়৷ তিনি বলেন, ‘অনলাইনে ভিডিওটি দেখার পরপরই আমি পুলিশের কাছে যাই৷ তারা আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে এমন একই ধরনের আরো ঘটনার সন্ধান পান৷ ২০২২ সালেও এই মামলা চলছে৷’

মরিনিওর বয়স এখন ২৪ এবং এমন যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের সহায়তার জন্য ‘নো পারচিলিস’ নামের একটি সংগঠন চালান৷ তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যখন হাঁটছি, তখনও মাঝেমধ্যে মনে হয় যে কেউ হয়তো আমাকে ভিডিও করছে৷ আমি যেন ক্যান্সার থেকে সেরে উঠেছি এবং নিজেকে সবসময় মনে করিয়ে দেই যে এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে জিতেছি, মামলাটিতেও জিতবো৷’

জীবনযাপনের নানা দিকই এখন ক্রমশ ডিজিটাল হয়ে উঠছে৷ অনলাইনে রিভেঞ্জ পর্নের মতো ঘটনাও বেড়ে চলেছে৷ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান হেইটএইড এবং ল্যান্ডেকার ডিজিটাল জাস্টিস মুভমেন্টের জরিপে দেখা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ নারীই অনলাইনে আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয় পান৷ এদের অন্তত ৩০ শতাংশ ভুয়া নগ্ন ছবি বা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার ভয় পান৷

ডারহাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্লেয়ার ম্যাকগ্লিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অনেক নারী জানতেও পারেন না যে তারা অনলাইনে এমন অপরাধের শিকার হচ্ছেন৷ দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু দেশে টয়লেটে বা কাপড় বদলানোর স্থানে তাদের অজ্ঞাতে তোলা ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ ফলে অজানা একটি ভয়ও তাদের মধ্যে কাজ করে৷’

অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপের অইনপ্রণেতারা বৃহস্পতিবার ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট নামে একটি আইন পাসে সম্মত হয়েছেন৷ অনলাইনে অবৈধভাবে থাকা যেকোনো কিছুর ব্যপারে ব্যবস্থা গ্রহণে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে বাধ্য করাটাই এর লক্ষ্য৷

ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য আলেক্সান্দ্রা গিজ এই আইন পাসের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘এই আইনের ফলে হয়রানির শিকার নারীরা অনলাইনে থাকা এসব ছবি সহজে সরিয়ে ফেলতে পারবেন৷ কারণ নাম প্রকাশ না করে পরিচয় নিশ্চিত করার একটি পদ্ধতি এক্ষেত্রে রয়েছে৷ এর ফলে অনলাইনে গিয়ে কেবল নিজেদের চেহারা দেখিয়েই এইসব সরিয়ে ফেলার দাবি জানানো যাবে৷’ তিনি জানান, বড় পর্ন প্লাটফর্মগুলোর জন্যও ফোন নাম্বার নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং কনটেন্ট ব্যবস্থাপনা টিমকেও সম্ভাব্য অবৈধ ছবি চিহ্নিত করার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে৷

ইউরোপের যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ইউরোপিয়ান সেক্স ওয়ার্কার্স রাইটস অ্যালায়েন্স অবশ্য ফোন নাম্বার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলে তা তাদের অধিকারের পরিপন্থি হবে বলে আপত্তি জানিয়েছে৷ কিন্তু অধ্যাপক ম্যাকগ্লিন মনে করেন, এই আইনের ফলে আদতে তাদের লাভই হবে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘যৌন কর্মীদের সম্মতি ছাড়াই তাদের নানাভাবে ব্যবহার করে আসছিল বড় পর্ন ওয়েবসাইটগুলো৷ এসব থেকে তারা লাভবানও হচ্ছিলেন না৷ বরং এখন প্লাটফর্মগুলো যৌনকর্মীরা নিজেদের আয় ও নিরাপত্তা বজায় রেখেই কাজ করতে পারবেন৷’ সূত্র: ডয়চে ভেলে৷

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন