শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জীবনের ঝুঁঁকি নিয়েও পুলিশ কাজ করেছে

পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি স্বাধীনতা রক্ষা এবং গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে কাজ করার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মনে রাখবেন জাতির পিতার দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, যা আমাদেরকে এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আপনাদের পূর্বসূরীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সকল আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২২’ উদ্বোধনকালে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে পুলিশের সদস্যদের প্রতি এ আহ্বান জানান। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজবারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পুলিশের সদস্যরা মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিবেশন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একটি খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃর্তি পুলিশ সদস্যদের মাঝে পুলিশ পদকও বিতরণ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমার বিশ্বাস জনবান্ধব পুলিশিং এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, গণতন্ত্র সমুন্বত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। সর্বোপরি পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠান পুলিশকে শান্তির সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে নব উদ্যামে কাজ করতে প্রেরণা জোগাবে, এটাই আমার প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে পূর্বসূরীদের ঐতিহ্য ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, এই রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই, তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।

বিএনপি’র ধংসাত্মক কর্মকাণ্ড স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, বৃক্ষ কর্তন, রাস্তা কেটে ফেলাÑ নানান ধরনের কাজ তারা করেছে, এমনকি পুলিশের উপর আক্রমণ করেছে। যেভাবে পুলিশের সদস্যদের তারা নির্মমভাবে মেরেছে সেটা সত্যিই ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে তারা দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল। কত মানুষকে তারা হত্যা করেছে তার কোন সীমা নেই। তিনি সে সময় সহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকবেলায় পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সেই সময় পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিয়ে এসেছে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা কাজ করেছেন।এ জন্য সবাইকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২০ সালে ১১৫ এবং ২০২১ সালে ১১৫ জনসহ মোট ২৩০ পুলিশ সদস্যকে পদক প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে ৯ জনকে মরণোত্তর পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে র‌্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও রয়েছেন। পদকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা, প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম), প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম)। পদক প্রাপ্তদের পদাংক অনুসরণ করে অন্যরাও ভাল কাজ করে যাবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

৭৫’র বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলিতে আহত ছিলেন আমার ফুফু এবং আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সাহেবের ছেলে, স্ত্রীসহ আমার ফুফাতো ভাই ও বোনেরা। যখন এই খুনীরা আক্রমণ করে চলে যায় তখন রমনা থানা থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাড়িতে গিয়ে আহত-নিহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান। শুধুমাত্র পুলিশের এই সাহসী ভূমিকায় আমার ফুফু বেঁচে ছিলেন। তিনি পঙ্গু অবস্থায় বাকি জীবন কাটান। আমার দুই ফুফাতো বোন এবং ভাই বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে হামলায় বাধা দিতে যেয়ে গুলিতে নিহত পুলিশের বিশেষ শাখার এএসপি সিদ্দিকুর রহমানকে তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর তাকে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতি নির্বাচন করায় দেশে ফেরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, তখন জাতির পিতার খুনীরা ক্ষমতায়, তথাপি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সংকল্প নিয়ে একরকম জোর করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে গত ১৩ বছরে পুলিশের উন্নয়নে নানা বিধি কর্মকাণ্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে মোট ৮২ হাজার ৫৮৩টি নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। পুলিশের নতুন ইউনিট যেমন ইন্ডাস্ট্রিয়াল-ট্যুরিস্ট-নৌ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, এন্টি টেররিজম ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, রংপুর ও ময়মনসিংহে রেঞ্জ, রংপুর এবং গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট, রংপুরে আরআরএফ এবং সিআইডি’তে সাইবার পুলিশ সেন্টার গঠন করা হয়েছে। ২টি সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন, এয়ারপোর্টে একটি ও কক্সবাজারে ২টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং র‌্যাবের জন্য ৩টি ব্যাটালিয়ন, ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, ৬২টি থানা, ৯৫টি তদন্ত কেন্দ্র এবং ১টি ফাঁড়ি এবং জাতীয় জরুরি সেবায় ৯৯৯ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। জরাজীর্ণ থানাগুলো পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন পুলিশ বাহিনী প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন পুলিশ বাহিনীতে উন্নীত হয়েছে। সকল র‌্যাঙ্কের পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি বছর ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন যুগোপযোগী ট্রেনিং মডিউল প্রণয়ন, ট্রেনিং মডিউলের মধ্যে মানবাধিকার সংরক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ চালু করার ফলে আজকে পুলিশ বাহিনী দ্রুত সেবায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে। যে করণে আজকে মানুষের মধ্যে একটা আস্থা ও বিশ^াস সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ সদস্যদের আর্তমানবতার সেবায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রশংসা করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে পুলিশ বাহিনীর অংশ গ্রহণ বিশেষ করে নারী সদস্যদের দায়িত্ব পালনেরও প্রশংসা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব মন্দার পর এসেছে করোনা, এত প্রতিকূলতার মাঝেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে, ব্যাপকভাবে যোগোযোগ ব্যবস্থা এবং আর্থসমাজিক উন্নয়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক করে দিচ্ছে এবং দায়িত্ব পালনে বিশেষ সুবিধার সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার, বলেন তিনি। তার সরকার এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চায় উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই তার সরকারের লক্ষ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ আনোয়ার আলী ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৭ এএম says : 0
ধন্যবাদ পুলিশ ভাইদেরকে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন