শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মূল্যস্ফীতিতে দিশেহারা মানুষ

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

করোনাকালে মানুষের আয় কমে গেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। যাদের চাকরি আছে, তাদেরও বেতন বা মজুরি কমেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও মন্দা চলছে। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লে তা সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক চাপের সৃষ্টি করে। দুঃখের বিষয়, দেশের খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব পণ্যের দাম বাড়েনি, সেসব পণ্যের দাম কেন দেশি বাজারে বাড়বে?

এর পেছনেই সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে। আগে ছোটবড়ো সব ধরনের ব্যবসায়ী আমদানি করতেন। এখন গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে পণ্য আমদানি করে এবং ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেয়। রাজধানীতে ভরা মৌসুমেও এবার বেশির ভাগ সবজির দর বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে তো বাড়ছেই, প্রতিদিন কিছুটা করে বেশি দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। শসা, ফুলকপি, শিম, ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পাকা টমেটো, গাজর, মুলা, শালগমের। সাধারণত পণ্যের সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে আর সরবরাহ বাড়লে দাম কমে। কিন্তু বাংলাদেশে সব সময় এ নিয়ম খাটে না। বর্তমানে বাজারে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে এর কোনোটির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। গত কয়েক বছর মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় থাকায় সরকার এক ধরনের সন্তুষ্টির মধ্যে ছিল। কিন্তু এখন যেভাবে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে, তখন আর আগের সন্তুষ্টি নিয়ে আত্মতৃপ্ত থাকার সুযোগ নেই। পণ্যের দাম বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষ তথা নিম্নবিত্ত মানুষই বেশি কষ্ট পায়। তাই বাজার নিয়ে বেশি কথা না বলে মন্ত্রীদের উচিত বাজার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা। পণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকলে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াতে পারবেন না।

স্থানীয় বাজারে অনেক পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বেশি। এর অর্থ হলো, ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামের অজুহাতে মানুষের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করছেন। সরকারের উচিত অবিলম্বে এই বিষয়ে নজর দেওয়া এবং যেসব ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করে ভোক্তাদের শোষণের চেষ্টা করছেন তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।

দাম কমিয়ে আনার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে সরকারের কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করা উচিত। পাশাপাশি, দামের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে- এমন লোকজনকে সরকারি সহায়তা হিসেবে নিজস্ব স্টক থেকে কিছু নিত্যপণ্য সরবরাহ করা উচিত বা ভর্তুকি দেওয়া উচিত এবং খুচরা বাজারে সরকারের মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এসব পণ্য বিক্রির ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সরকারকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি আরও সাবধানে প্রণয়ন করতে হবে। কারণ কিছু বিশ্লেষক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে মুদ্রাস্ফীতির যথেষ্ট চাপ থাকবে। যেহেতু বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারি থেকে থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

বর্তমানে নিত্যপণের দামের যে পরিস্থিতি তাতে সরকার যদি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে শক্ত হাতে ধরতে না পারে তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না। অর্থনীতির একটা নিয়ম হলো, জোগান কমলে দাম বেড়ে যায়। এই সমস্যা দুইভাবে সমাধান করা যায়। প্রথমটি হলো- যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে, সেসব পণ্য সরকারকে নিজে বিক্রি করতে হবে ভোক্তাদের কাছে। এজন্য প্রতিটি জেলায়, থানায় সরকার নিজস্ব বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। এখানে সরকারের বাড়তি টাকা খরচ হবে না। কারণ, সরকারও ব্যবসা করবে। সরকার যখন এটি করবে তখন সিন্ডিকেটের কাছে একটা বার্তা যাবে যে, তারা যদি পণ্য মজুত করে তাহলে একটা সময় তা নষ্ট হয়ে যাবে তবুও ভোক্তা বেশি দামে কিনবে না। কারণ, ভোক্তা তখন বিকল্প হিসেবে সরকারের বাজার থেকে কিনবে। আর দ্বিতীয় সমাধান হলো- যখন সংকট দেখা দেবে তখন পণ্য আমদানি করতে হবে।

আমরা আশা করব, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। সে সঙ্গে বাজারব্যবস্থা যথাযথ তদারকির আওতায় এনে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের কারসাজি কিংবা কারো অসদাচরণের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন