এ বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাকিস্তান সফরে কী হবে তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য ইসলামাবাদ এবং মস্কো আলোচনা করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে একথা জানিয়েছেন। গত দু’বছর ধরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে দুই পক্ষের আলোচনা চলছিল, কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। মস্কো আরো চায়, ‘বিশাল টিকিট প্রকল্প’ বা অন্যান্য উদ্যোগ থাকতে হবে যা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান সফরে যাওয়ার সময় ঘোষণা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে তার সাম্প্রতিক টেলিফোন কথোপকথনের সময় পুতিনকে আমন্ত্রণ পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আগামী মাসে বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ফাঁকে দুই নেতার দেখা হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আমন্ত্রণ জানাবেন। তবে, কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, পুতিন এমন সময়ে সফরে যেতে চান যখন তার কাছে ‘বিক্রির মতো বড় কিছু’ থাকবে। পাকিস্তান স্টিম গ্যাস পাইপলাইন চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে পুতিনের পাকিস্তান সফরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে উজ্জ্বল হয়েছে। পাকিস্তান আগ্রহী যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন বহু বিলিয়ন ডলারের গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন, যা এ বছরের শেষের দিকে শুরু হতে পারে। পাকিস্তান চায় রুশ কোম্পানিগুলো করাচি থেকে কাসুর পর্যন্ত পাইপলাইন বসাক।
নর্থ সাউথ গ্যাস পাইপলাইন, যাকে এখন পাকিস্তান স্টিম গ্যাস পাইপলাইন নামে নামকরণ করা হয়েছে, এটি একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প যা দুই দেশ তাদের শীতল যুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কবর দেওয়ার এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই গ্রহণ করতে চায়।
চুক্তিটি মূলত ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, কিন্তু রাশিয়ান কোম্পানিগুলোর ওপর সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে ১ হাজার ১২২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের কাজ শুরু করা যায়নি। তবে, উভয় পক্ষ অবশেষে সেসব বাধা অতিক্রম করে এবং একটি সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর করে যা এখন পাইপলাইনের ৭৪ শতাংশ অংশ পাকিস্তানকে দেবে। এর আগে, বিল্ট, অপারেট এবং ট্রান্সফার মডেলের অধীনে রাশিয়া সম্পূর্ণভাবে পাইপলাইনটি নির্মাণ করার কথা ছিল।
প্রকল্পটির ব্যয় হবে প্রায় ২২৫ কোটি ডলার। এটি সম্পন্ন হলে পাইপলাইন পাঞ্জাবে গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করবে। পাকিস্তান এখন যে এলএনজি আমদানি করছে তা এই প্রস্তাবিত পাইপলাইনের মাধ্যমে পুনরায় গ্যাসীকরণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন যে, প্রকল্পটিতে পাকিস্তানের জন্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত তাৎপর্যও রয়েছে।
তারা বলেছেন, পাকিস্তান তার পররাষ্ট্র নীতির সুযোগগুলোকে বৈচিত্র্যময় করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বিস্তৃত করতে চায়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ প্রায় নয় বছর পর গত বছরের এপ্রিলে ইসলামাবাদ সফর করেন। সফরের সময়, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের নেতৃত্বের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেন যে, মস্কো ইসলামাবাদকে সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করতে ইচ্ছুক। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সম্ভাব্য সফরটি হবে তাদের সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় খুলতে দুই পক্ষের বছরের পর বছর প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পরিণতি যা শীতল যুদ্ধের বৈরিতার কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
দুই দেশ শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো গভীর করার উপায় অন্বেষণ করছে না, বরং রাশিয়াও পাকিস্তানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে আগ্রহী, যা অতীতে ভারতের বিরোধিতার কারণে এড়িয়ে গিয়েছিল। মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর করার আরেকটি চিহ্ন হিসেবে দুই দেশ ইতোমধ্যেই ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত যৌথ সামরিক মহড়া করছে। এছাড়া আফগানিস্তানসহ গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও দুই দেশ একই মত পোষণ করে। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন