বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বিজয়ী চেয়ারম্যানের গলায় ফুল দিলেন, খেলেন মিষ্টিও, এখন ফল বাতিল চেয়ে করলেন মামলা

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ পিএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের পরের দিন চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন এক পরাজিত প্রার্থী। নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে মিষ্টিমুখও করেছেন একে অপরকে। এরিমধ্যে সরকারি গেজেট প্রকাশ ও শপথ শেষ করে চালাচ্ছেন পরিষদ। কিন্তু নির্বাচনের প্রায় দুই মাস পর ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে মামলা করেন সেই পরাজিত প্রার্থী। তিনি আদালতে মামলার এজাহারে বিজয়ী প্রার্থীর গেজেট বাতিল চেয়ে তাকে (পরাজিত প্রার্থী ) চেয়ারম্যান ঘোষণার আবেদন জানিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নে।
জানা গেছে, ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ। নির্বাচনী ফলাফলে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন আঃলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের আশ্রাফ উদ্দিন রাজন ওরফে রাজু। তিনিই ফলাফল বাতিল চেয়ে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বী ছয় প্রার্থীকে বিবাদী করা হয়েছে। বিবাদীরা হলেন- বিজয়ী চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ, প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন আহম্মদ হাওলাদার (প্রতীক: আনারস), আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. নুরুল ইসলাম (প্রতীক: নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী ইব্রাহিম বাবুল মোল্লা (প্রতীক: চশমা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মহি উদ্দিন হাওলাদার (প্রতীক: ঘোড়া) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শরীফ হোসেন (প্রতীক: অটোরিকশা)।

মামলায় তিনি নির্বাচনে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তোলেন। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ মামলার কারণ দর্শানো নোটিশ পেয়েছেন বলে জানান।

সূত্র জানায়, গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচিত হন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ। গত ২৯ নভেম্বর তার নামে গেজেট প্রকাশিত হয়। শপথ গ্রহণ করে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগেও তিনি ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। নির্বাচনের পরের দিন আশ্রাফ উদ্দিন রাজন ওরফে রাজু ফুলের মালা দিয়ে খালেদ সাইফুল্লাহকে বরণ করে নেন। এসময় একে অপরকে মিষ্টিমুখও করান।

কিন্তু নির্বাচনের দুই মাস পর গত ২ জানুয়ারি পরাজিত প্রার্থী আশ্রাফ উদ্দীন রাজু ভোটের ফলাফল বাতিল চেয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন। এতে তাকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ঘোষণা করার আবেদন জানান তিনি।

পরাজিত প্রার্থী রাজন মামলায় দাবি করেন, নির্বাচনে ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেন। ভোটাররা তার মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট দেন। তিনি ৮ নম্বর কেন্দ্রে ৮৬৩ ভোট পান। অপর কেন্দ্রগুলোতেও অনুরূপ ভোট পেয়েছেন। ফলাফল বিবরণীতে তিনি মোট ৩৭৯৭ ভোট পেয়েছেন বলে দেখানো হয়। প্রকৃতপক্ষে তার এজেন্টদের দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি আরও অনেক বেশি ভোট পেয়েছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু মামলায় প্রথম বিবাদী হাতপাখা প্রতীকের খালেদ সাইফুল্লাহর প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয় ৪৭৬৮টি। যা প্রকৃত অবস্থার বিপরীত। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, উপরের মহলের নির্দেশে প্রিজাইডিং অফিসাররা মোটরসাইকেলের প্রাপ্ত ভোটের ব্যালট উল্লেখযোগ্য অংশ হাতপাখার ব্যালটের বান্ডলের সঙ্গে যুক্ত করেছেন এবং মোটরসাইকেলের প্রাপ্ত ভোট কম দেখিয়ে বেআইনিভাবে তাকে পরাজিত ঘোষণা করে হাতপাখার প্রার্থীকে বিজয়ী দেখান।

রাজু দাবি করেন, সঠিকভাবে ভোট গণনা করলে তিনি নির্বাচিত হতেন। তাই হাতপাখার প্রার্থী নন, তিনি নির্বাচিত হয়েছেন মর্মে ঘোষণা ও গেজেট চেয়ে ট্রাইব্যুনালে নালিশ করেছেন।

রাজু সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ২০১১-১৬ সাল পর্যন্ত তিনি চরকাদিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত হন তিনি।

মামলার বিষয়ে জানতে বাদী রাজুকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিজয়ী চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন,সোমবার বিকেলে আমি নোটিশ পেয়েছি। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে নোটিশের জবাব দেব। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর রাজন আমাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন। এখন আবার কেন ফলাফল বাতিল চেয়ে মামলা করেছেন, তা জানি না।

কমলনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জায়েদুল হোসেন চৌধুরী বলেন, মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
সালমান বিন ইসহাক ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৫৮ পিএম says : 0
এটা একটা 'পাগলের মাথা খারাপ' কাহিনী! দ্বিতীয় পর্বে হুজুর চেয়ারম্যান হয়ে যেভাবে কাজ করছেন, এতে সবাই চোখে সরেষ ফুল দেখছেন! সবাই ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন! তাই এসব মাতলামি! রাজন এমনটি হুজুরের কাছে প্রথমবার হেরেও করেছিলো!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন