শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ

৯ বছরেও পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি

প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৮ পিএম, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬

সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে আমলে নিতে গড়িমসি
মালেক মল্লিক : ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ আছে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কাজ। দীর্ঘ ৯ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে করে নিম্নআদালতের বিচারকদের বদলি, অসদাচারণের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উচ্চ আদালতকে আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ আমলে নিতে গড়িমসি করেন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এদিকে বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন না হওয়ায় আদালতে মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। উন্নয়ন হয়নি বিচার বিভাগের অবকাঠামো। স্থান সংকুলানের অভাবে বিচারকরা সমন্বয় করে এজলাসে বসে বিচার কাজ করতে হচ্ছে। এক এজলাস ব্যবহার করতে হচ্ছে একাধিক বিচারককে। এক বিচারকের বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য বিচারককে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন, আইনত বিচার বিভাগ স্বাধীন করা হয়েছে। কিন্তু এটাকে স্বাধীন রাখার যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা তো করা হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন। তাদের মতে, বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করার দ্রুত উদ্যোগ নেয়া সরকারের দায়িত্ব।
গতকাল সোমবার বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের নয় বছর পূর্তি উপলক্ষে দেয়া একবাণীতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ১১৬ অনুচ্ছেদে যে বিধান দেয়া হয়েছে তা বিচার বিভাগরে ধীরগতির অন্যতম কারণ। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্রে জানা যায়, পৃথক সচিবালয় না হওয়ায় এখন আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী বিচার প্রশাসনের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এমনকি এ সংক্রান্ত বিধিতে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিধিতে আরও রয়েছে, মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতানৈক্য হলে সুপ্রিম কোর্টের মতামত প্রাধান্য পাবে। তা সত্ত্বেও কার্যত সুপ্রিম কোর্টের সব পরামর্শও বাস্তবায়ন করা হয় না। জানা যায়, বিচারকের অনিয়মসহ প্রায় অর্ধশত সুপারিশ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। কিন্তু দেখা যায়, সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রণালয়ের নানা গড়িমসি করেন বলে সূত্রে জানা যায়। অনেক সময় ফাইল চালাচালি মধ্যে চলে যায় কয়েক মাস। সর্বশেষ আর চূড়ান্ত পথে অগ্রসর হয় না দেশের উচ্চ আদালতের সুপারিশ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩১ লাখ ৯ হাজার ৯৬৭। যার মধ্যে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১২ হাজার ৭৯২টি এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৩টি। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে সহকারী জজ আদালত হতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ সকল প্রকার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৮ লাখ ৯ হাজার ৪৬১টি এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আদালতসমূহে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪১১টি। পৃথকীকরণের ৯ বছরে একটি নতুন পদও সৃষ্টি হয়নি। ৪৬০টি উপজেলা ৪৮৭টিতে উন্নীত হওয়াসহ বহু ধরনের নতুন আদালত সৃষ্টি করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রেষণ পদসংখ্যা বেড়েছে কিন্তু একটিও নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়নি। ২০০৭ সালে বিচারক ও বিচারাধীন মামলার অনুপাত ছিল ১:৪১৫। গত ৯ বছরে প্রত্যেক বিচারকের ওপর প্রায় পাঁচগুণ বেশি মামলার বোঝা চেপেছে। বর্তমানে নিম্নআদালতে বিচারক রয়েছেন ১৫০০ এবং উচ্চ আদালতে রয়েছেন ১০০ এর বেশি। সেই হিসাবে অনুপাত এখন ১:১৮২৩ এসে দাঁড়িয়েছে। নিম্নআদালতে প্রায় ৩০০ বিচারক প্রেষণে রয়েছেন। তাছাড়া প্রতিদিন মামলা দায়ের হচ্ছে। ২১ জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি বিল্ডিং জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে বিল্ডং নির্মাণ ধীর গতিতে শুরু হয়েছে। ৯ জেলা শুরু হয়নি। ১৭০ জন বিচারক এজলাস ভাগাভাগি করে বিচার কাজ করেন। বাংলাদেশে জনসংখ্যা অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। যেখানে আমেরিকা ১০ লাখ জনসংখ্যার জন্য ১০৭ জন, কানাডা ৭৫ জন রয়েছে।
আইনজ্ঞরাদের মতামত : এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, ব্রিটিশ আইন দিয়ে আমাদের বিচারকার্য চলছে। আমি মনে করি বিচারকার্য গতিশীল করতে তথা মামলা জট কমাতে আইনগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তির জোড় দেন তিনি। ৯ বছর পর পৃথক সচিবালয় কেন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না তা সরকার ভাল বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন। পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে বিচার বিভাগের কাজের গতি আরো বাড়বে বলেও মতামত দেন। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন করা হলে পুরো বিচার বিভাগের কাজে গতিশীলতা আসবে। তিনি বলেন, এখন হাইকোর্ট বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির উপর পড়ে, এতে আপিল বিভাগের আইনের ব্যাখ্যার মতো মূল ভূমিকা নির্লিপ্তভাবে পালন করতে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের অধীনে সচিবালয় হলে আপিল বিভাগ সেসব কাজ করতে পারতো। বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, বিচার বিভাগের পৃথককরণে চলমান প্রক্রিয়া। আমি আশা করব ধীরে ধীরে এসব কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি আরো বলেন, যাদের মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথককরণ হবে তাদের মন মানসিকতা পরিবর্তন হবে। তারা এখনো আগের কলোনিয়াল চিন্তা-ভাবনা করে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সারাদেশের নি¤œআদালতগুলোর বিচারকদের কার্যক্রম, মামলা-মোকাদ্দমা সংক্রান্ত খোঁজ-খবর রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে কাজ করতে একটি পৃথক সচিবালয় গঠনের কথা বলা হয়েছে। সেই সচিবালয়ের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারি থাকবে, তারা সুপ্রিম কোর্টকে এসব বিষয় জ্ঞাত করবেন। যাতে সুপ্রিম কোর্ট সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তা না হওয়ার কারণে এখনো আমাদের নি¤œআদালতের বিচারকদের বদলি, অসদাচারণের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর আমাদের নির্ভরশীল থাকতে হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
সেলিম ১ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:৫৪ এএম says : 0
এই গড়িমসির কোন মানেই হয় না।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন