মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নিরাপদ-হালাল বিনিয়োগের জন্য সুকুক বন্ড-৪

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

আধুনিক অর্থনীতির সাথে পাল্লা দিয়ে ইসলামী সিস্টেমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য যে মূলনীতি আল্লামা তাকী উসমানী ও অন্য কিছু ইসলামী অর্থনীতিবিদ বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন। যে নীতি এখন আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোও অনুসরণ করছে। সিটি ব্যাংক ইনক আমেরিকা, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এখন ইসলামী নিয়মে উইন্ডো ও প্রোডাক্ট চালায়। এই টাকা শরীয়ত মেনে ব্যবসা বিনিয়োগে নিয়োগ করে এবং শরীয়তের নীতি মেনে ম্যানেজমেন্ট, মালিক ও গ্রাহকদের মাঝে লাভ লোকসানের সমবণ্টন করে। বাংলাদেশেও রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক ইসলামী নিয়মের বিভাগ খুলেছে। আমরা সরকারের কাছে আশা করব, তারা রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংক সুদমুক্ত করেন। সরকার রাষ্ট্রের উদ্যোগে একটি জাতীয় উন্নয়ন তহবিল করতে পারেন। সভরেইন গ্যারান্টি, চুরি দুর্নীতি ও সুদমুক্ত এই বিনিয়োগ তহবিলে ইনশাআল্লাহ রিজার্ভের চেয়ে বেশি টাকা জমা হবে। আমানতদারির সাথে এ জাতীয় তহবিলের বাণিজ্যিক বিনিয়োগ বাংলাদেশের উন্নয়নের পথ সুগম করবে। নাগরিকদের সব সঞ্চয় ও টাকা পয়সা হালাল তহবিলে এলে তারাও সামান্য আয়ের নিশ্চয়তা পাবেন।

বাংলাদেশে ১০টি ইসলামী ব্যাংক শরীয়তমতো ব্যাংকিং করছে। এসবের মৌলিক নীতিমালা খতীব মাওলানা উবায়দুল হক, শায়খুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক, মুফতি আবদুল রহমান, মুফতি শামসুদ্দিন জিয়ার মতো পরহেজগার আলেমগণের অংশগ্রহণে তৈরি। বর্তমানে ব্যাংক মালিক, ম্যানেজমেন্ট ও ব্যাংকারগণের দায়িত্ব শরীয়তের নীতিমালা প্রতি ক্ষেত্রে পরিপালন করা। বেতন, ভাতা, সম্মানী, বাড়ি গাড়ির লোন পাওয়া নিজস্ব বলয়ভুক্ত আলেমদের তুলনায় এসব ক্ষেত্রে আল্লাহভীরু, দুনিয়াবিমুখ, নির্লোভ, প্রভাবশালী ফিকাহবিদ আলেমদের নির্দেশনা মানা বেশি জরুরি।

সুকুক বন্ডের ক্ষেত্রেও পরহেজগার আলেমগণের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কাতার ও মালয়েশিয়ায় মাওলানা তাকী উসমানী সাহেবের নির্দেশনা মানা হয়। বাংলাদেশের কিছু তরুণ আলেম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুকুক বন্ডের গবেষণায় যুক্ত। ইউরোপেও সুকুক বন্ড সমাদৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে সুকুক বন্ডের সম্পত্তি সুরক্ষা, ঝুঁকি কমানোর জন্য পর্যাপ্ত গ্যারান্টি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শরীয়াহ পরিপালন নিশ্চিত করা হলে, দেশি বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় পাবলিক যোগান হতে পারে সুকুক। দেশে বহু মানুষ সুদের ভয়ে ব্যাংকে এফডিআর করে না। যখন তখন তা তোলাও সমস্যা। মেয়াদের আগে ভাঙালে পূর্ণ মুনাফা পাওয়া যায় না। সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড কিনলে সুদ এসে যায়।

হালাল ও নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সুকুক বেশ ভালো। বড় বড় খানাকাহ, দরবার, দীনি প্রতিষ্ঠান তাদের তহবিল বিনিয়োগে লাগাতে পারে সুকুক বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশের বাহিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীরাও সুকুক বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। যা যখন তখন বিক্রি ও ভাঙানো যায়। বছর শেষে প্রায় ৯% লাভের অনুমান থেকে থাকে। দাম ফেইস ভ্যালুর নিচে নামে না। দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিবছর লাভ আসে। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর মূল টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার পাশাপাশি বন্ডের বাজার মূল্য বৃদ্ধি পেলে এখানেও বহু মুনাফা অর্জন করা যায়। সুদী অর্থনীতির ভিড়ে শরীয়াসম্মত ব্যবসা, বিনিয়োগ ও আর্থিক কর্মকাণ্ড সচল হলে ইসলামী সমাজ ও অর্থব্যবস্থা বই কিতাব থেকে জনগণের জীবন পর্যন্ত পৌঁছাবে। যা ইসলামী অঙ্গনের সব ধরনের চেষ্টা সাধনার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
শোয়েব ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:২৩ এএম says : 0
হালাল ও নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সুকুক বেশ ভালো মনে হচ্ছে
Total Reply(0)
রায়হান ইসলাম ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৩ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে হালাল ইনকাম করার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
হাবিব ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৫ এএম says : 0
সুকুক চালু করা হয়েছে। এটাকে ভালো উদ্যোগ
Total Reply(0)
চৌধুরী হারুন আর রশিদ ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৬ এএম says : 0
প্রচলিত আর্থিক বাজারে মুসলিম বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার আগ্রহ থাকলেও, নানা সীমাবদ্ধতায় তারা তা করতে পারছেন না। কারণ, শরিয়াহ্ আইন অনুযায়ী সুদ, জুয়া, ও ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এ সমস্যাগুলোর বড় সমাধান হিসেবে সুকুক বা ইসলামিক বন্ড আবির্ভূত হয়েছে। ইসলামি আর্থিক নীতিমালার সম্মতিতে মুনাফার জন্য ট্রেজারি বন্ডের অনুরূপ হচ্ছে ইসলামি বন্ড সুকুক।
Total Reply(0)
উবায়দুল্লাহ ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৭ এএম says : 0
সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান। সুকুক ইস্যুকারী চুক্তি অনুসারে মেয়াদ শেষে ফেস ভ্যালুতে বন্ড কিনতে বাধ্য থাকে।
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৭ এএম says : 0
মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে সুদের বন্ডের চেয়ে ইসলামিক বন্ডের (সুকুক) চাহিদা অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড এই সুকুক।
Total Reply(0)
নিজাম উদ্দিন ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৮ এএম says : 0
সুকুক বন্ডে ফিক্সড সুদ নেই। এটি ট্রাস্টির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে মূলত বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। আর ওই প্রকল্পের মালিকানার অংশীদার হয় সুকুক বন্ডের বিনিয়োগকারীরা। যা অন্য বন্ডে সুযোগ নেই। এছাড়া সুকুক বন্ড ব্যর্থ হলে, ওই প্রকল্পের সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৯ এএম says : 0
সুকুক ছাড়ার দিক থেকে বর্তমানে মালয়েশিয়া বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, কাতার, সউদী আরব, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সুকুক প্রচলিত। মুসলিম দেশের পাশাপাশি অমুসলিম দেশেও এখন সুকুক চালু রয়েছে।
Total Reply(0)
লিয়াকত আলী ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:০০ এএম says : 0
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড সুকুক
Total Reply(0)
তফসির আলম ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:০১ এএম says : 0
মুসলিম দেশের পাশাপাশি অমুসলিম দেশেও এখন সুকুক চালু আছে। সুকুকের মধ্যে নৈতিক উপকরণও আছে, কারণ শূয়োরের গোশত, অ্যালকোহল, জুয়া, পর্নোগ্রাফি এবং তামাকের মতো কার্যকলাপের সাথে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং এটি মুসলিম এবং অমুসলিম উভয় বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়।
Total Reply(0)
জান্নাতুল ফেরদাউস নূরী ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:০২ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নবীর সুন্নত ব্যবসাকে আপন করে নেয়ার এবং ঈমানদারী, চেষ্টা-প্রচেষ্টা, মন দিয়ে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
করিম উদ্দীন ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:০৩ এএম says : 0
সুদমুক্ত সমাজ গঠনে এ ধরণের বন্ড বাজারে আনায় বেক্সিমকোকে ধন্যবাদ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন