মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

জলবায়ু সংকট নিয়ে ‘ডোন্ট লুক আপ’, বিতর্ক শুরু

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:২৫ পিএম

পরিচালক অ্যাডাম ম্যাককে নির্মিত অ্যাপোক্যালিপটিক প্যারোডি ‘ডোন্ট লুক আপ’৷ সিনেমায় দেখানো হয়েছে পৃথিবীর দিকে একটি বিশাল ধূমকেতু ধেয়ে আসছে৷ এরপর জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আমাদের ব্যর্থতা নিয়ে সারা বিশ্বে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷

গবেষক-ছাত্রী কেট ডিবিয়াস্কি (জেনিফার লরেন্স) একটি শোয়ে এসে সংবাদ সঞ্চালককে বলেন, আমরা বলছি যে, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে৷ ‘ডোন্ট লুক আপ’ চলচ্চিত্রের এই দৃশ্যে উপস্থাপ্ক (কেট ব্লানশেট) অনুরোধ করেন, খারাপ খবর একটু হালকাভাবে বলা যায় না? তখন গবেষক-ছাত্রী চিৎকার করে ওঠেন, ‘‘হ্যাঁ আমরা সবাই মরে যাব৷’’ঠিক তখনই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এবং সামাজিক মাধ্যমের তারকারা বলে ওঠেন ‘ডোন্ট লুক আপ’৷

নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্র দর্শকমহলে সাড়া ফেলেছে৷ এক সপ্তাহের মধ্যে সবথেকে বেশিবার এই চলচ্চিত্র দেখেছেন দর্শকেরা৷ নেটফ্লিক্সের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক দেখা চলচ্চিত্র এটি৷ জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় সরকারি ব্যর্থতাকে সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে৷ ‘ডোন্ট লুক আপ’ নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র৷ জনসাধারণের মতামত দ্বিধাবিভক্ত৷ শুধু জলবায়ু সংকট নয়, দ্রুত নির্গমন হ্রাসের ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের সময়সীমা ঘনিয়ে এসেছে৷ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এটির গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়ার উপায়টি সত্যি অভিনব৷

যুক্তরাজ্যের ক্লাইমেট কমিউনিকেশন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ক্লাইমেট আউটরিচের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ মার্শালের মত, ‘‘তারকা সমাবেশ রয়েছে এই চলচ্চিত্রে৷ জলবায়ু সংকট নিয়ে সচেতনতা এবং বিষয়টিকে নিয়ে ভিন্নধারার উপস্থাপনা এই বিষয়ে আমাদের আগের ধারণাকে ছাপিয়ে গিয়েছে৷’’তিনি আরও বলেন, ‘‘গবেষণার মাধ্যমে আমরা এটা বুঝেছি যে, আপনি যদি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে থাকা অনুমান এবং কুসংস্কারগুলি উসকে না দিয়ে কথা বলেন, তাহলে সাধারণ মানুষ সেটি বুঝতে সক্ষম৷’’

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ছবিতে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন৷ হলিউডের অভিনেতাদের মধ্যে লিও নিজে জলবায়ু সংকট নিয়ে সবসময় সরব৷ ডিক্যাপ্রিও বলেন, ‘‘অনন্য উপহার হিসেবে আমরা এই চলচ্চিত্রটিকে দেখতে পারি৷’’ জলবায়ু সংকটের কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন এবং পেরেছেন, জানান টাইটানিক খ্যাত অভিনেতা৷

বিজ্ঞানীদের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন লিও৷ তার কথায়, ‘‘টুপি খুলে অভিবাদন জানাই বিজ্ঞানীদের, যারা এই ইস্যুতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷’’ জলবায়ু বিজ্ঞানী পিটার কালমাস সামাজিক মাধ্যমে ছবিটির প্রশংসা করেছেন৷ নাসার এই বিজ্ঞানীর বক্তব্য, ‘‘১৫ বছর ধরে চিৎকার করে চলেছি এই বিষয়ে৷ বারবার এই বিষয়টিকে অবহেলা করা হয়েছে৷’’

জর্জ মার্শালের মত মানুষকে একগাদা বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে লাভ নেই৷ ‘হাউ টু সেভ আ প্ল্যানেট’ পডকাস্টের সহ-নির্মাতা এবং সমুদ্রবিজ্ঞানী আয়ানা এলিজাবেথ জনসন বলেন, ‘‘জলবায়ু সংকট নিয়ে হলিউডের কাছে আরও অনেক চলচ্চিত্রের দাবি জানাচ্ছি৷ এর ফলে সমস্যাগুলি বোঝাতে সুবিধা হবে, সমাধানও খোঁজা সম্ভব হবে৷’’

একটি গবেষণা বলছে, জলবায়ু সংকটের কথা বেশি রাতের দিকের কোনো অনুষ্ঠানে সরস করে বললে সেই বিষয়ে মানুষজন অনেক বেশি আকৃষ্ট হন৷ এ প্রসঙ্গে চার্লি চ্যাপলিনের ফ্যাসিবাদবিরোধী চলচ্চিত্র এর কথা উল্লেখ করেছেন জলবায়ুবিদ এবং ‘দ্য নিউ ক্লাইমেট ওয়ার’-এর লেখক মাইকেল ই মান৷ তিনি লিখেছেন, মানুষকে আনন্দ দিয়েছে বলে নয়, সমাজ ও রাজনীতিকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে দেখানোই এই চলচ্চিত্রের সাফল্য৷

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত স্টাডিতে ৩৩ শতাংশ মানুষ গত বছরের জলবায়ু সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ সংকট নিয়ে উদ্বেগ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এমনটা বোঝা যাচ্ছে৷ ওয়াশিংটন ডিসির জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিউনিকেশনের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই স্টাডির সহ-লেখক জানান, অনেক মানুষ জলবায়ু সংকট নিয়ে সচেতন৷ এ জাতীয় চলচ্চিত্র বিশেষ করে ব্যঙ্গের মাধ্যমে বোঝালে তা সহজেই সংযোগ স্থাপন করে৷

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা রাজনীতিবিদদের কথাও জর্জ মার্শাল এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন৷ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জেনি অরলেয়ানের চরিত্রে মেরিল স্ট্রিপ৷ শক্তিধর দেশের প্রশাসক, তার চিফ অফ স্টাফ এবং ছেলে জ্যাসন অরলেয়ান (জোনা হিল) ধূমকেতু আছড়ে পড়ার কথা জেনে তা অস্বীকার করেন৷ যদিও পরে দেখানো হয়েছে, নিজস্ব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সেটিকে ব্যবহার করছেন তারা৷

ট্রাম্পের পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের প্রাক্কালে সহ দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম বছরেই তেল এবং গ্যাস খনন করার অনুমতি দিয়েছেন৷ ক্লাইমেট কমিউনিকেটর এডওয়ার্ড মেলবাখের মত, ইতিবাচক চলচ্চিত্র প্রয়োজন৷ কীভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে চলচ্চিত্রটি৷ সেটি দেখাও জরুরি৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন