বরগুনার বেতাগীতে টেন্ডারের শিডিউল বিক্রির আগেই প্রায় অর্ধ কোটি টাকার কাজ পছন্দের ঠিকাদারের মাঝে বণ্টন হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে ওই ঠিকাদার কাজও শুরু করেছেন। গত ১৫ দিন ধরে চলছে এসব কাজ। দরপত্র আহবান করার পর কাউকে কিছু না জানিয়েই হঠাৎ করে এতবড় কাজ কিভাবে গোপনে একজন ঠিকাদার শুরু করতে পারেন তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন একাধিক ঠিকাদাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম এর স্বাক্ষরে একটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে গত ০৯ জানুয়ারি ০২/২০২১-২০২২ নং ই-টেন্ডার নোটিশ আহবান করা হয়। ওই নোটিশে ১ ও ২ নং প্যাকেজে বিবিচিনি ইউনিয়নের বেগম লুৎফুন্নেছা মেমোরিয়াল ব্রিট স্কুল এর সীমানা প্রাচীর ও স্কুলের ভেতরে আরসিসি রাস্তা নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়।
এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা। ওই দুইটি প্যাকেজের শিডিউল বিক্রির শেষ সময় উল্লেখ করা হয়েছে ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ইং বিকাল ৫টা। দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় আগামী ২৭ জানুয়ারি দুপুর ১টা। ই-টেন্ডার পদ্ধতি হওয়ায় সারাদেশ থেকেই অনলাইনে টেন্ডার শিডিউল ক্রয় ও জমা দেয়ার কথা। সেই হিসেবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ অবস্থায় হঠাৎ করেই মো. জাকির নামের স্থানীয় একজন ঠিকাদার লোকজন নিয়ে গত ১৫ দিন আগে ওই স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দরপত্রে অংশগ্রহণ ছাড়া এভাবে হঠাৎ করে কাজ শুরু করায় হতবাক হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ঠিকাদার জানান, টেন্ডার নোটিশ প্রচার করার পর টেন্ডারে অংশগ্রহণ ছাড়াই কাজ শুরু করা নজিরবিহীন। প্রায় অর্ধ কোটি টাকার কাজ এভাবে করার কোন নিয়ম নেই।
তারা আরও জানান, টেন্ডারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচিত হলে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা যেমন সাশ্রয় হতো, তেমনি একজন ভালমানের ঠিকাদারের হাতেই কাজটি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
একজন ঠিকাদার বলেন, ‘নোটিশ পাওয়ার পর টেন্ডার শিডিউল নিয়ে দরপত্রে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু দরপত্রে অংশ নেয়ার আগেই কাজ শুরু হয়ে গেছে জেনে হতবাক হয়েছি। এ ধরণের কথা কখনো শুনিনি।’
সরেজমিনে বেগম লুৎফুন্নেছা মেমোরিয়াল ব্রিট স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য স্কুলের চারপাশে কলাম ঢালাই এবং মাটি কাটার কাজ চলছে। সেখানে ৭/৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকরা জানান, ঠিকাদার জাকির এই কাজ করছেন।
প্রতিষ্ঠানটির (ব্রিট সেন্টার) ইনচার্জ মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে এই প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। এরপর রাস্তা কাজ শুরু হবে। গত ১৫ দিন আগে এই কাজ শুরু হয়। এই কাজের টেন্ডার এখনও সম্পন্ন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদার মো. জাকির বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাকে কাজ করতে বলেছে তাই আমি কাজ করছি। আমি নিজেও দরপত্র ক্রয় করেছি। পরবর্তীতে যে কাজ পাবে তার সাথে সমন্বয় করে নিবো।
এ বিষয় স্থানীয় সরকার প্রকৗশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)‘র বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, ওইখানে এখন কে কাজ করে সেটা আমার দেখার বিষয় না। টেন্ডার সম্পন্ন হবার পর আমি ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দিবো। ব্যক্তিগতভাবে কেউ হয়তো এই কাজ করতে পারে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী এস.কে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এই কাজটি আমার দপ্তরের না। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন