শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব কখন হবে

এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

মানুষ শান্তি চায়, স্বস্তি চায়, নিরাপত্তা চায়। নিঝর্ঞ্ঝাট জীবন অতিবাহিত করার প্রত্যাশা করে। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম পৈঠায় অবস্থানরত মানুষ কি শান্তিতে আছে? উত্তর নেতিবাচক, নেই। কেন নেই, কি জন্য নেই, এর সংবাদ প্রদান করে গেছেন সাইয়্যেদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যিন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)। হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলে আকরাম (সা.) বলেছেন : ‘আমার মৃত্যুর পর ক্রমেই কতকগুলো নিদর্শন প্রকাশিত হতে থাকবে। এগুলোকে মহাপ্রলয়ের পূর্বাভাস বলে জানবে।

যথা, দেশের শাসনকর্তাগণ জনগণের সম্পদকে আপনাপন ব্যক্তিগত সম্পদ বলে মনে করবে। জাকাতকে জরিমানা স্বরূপ আদায় করা হবে। আর জাকাত দেয়াকে জাকাত দাতাগণও জরিমানা বলেই মনে করবে। মানুষ আমানতের মালকে যুদ্ধলব্ধ লুটের মাল বলে মনে করে তা নিজ প্রয়োজনে ইচ্ছামতো ব্যয় করবে। স্বামীগণ স্ত্রীর বাধ্য ও অনুগত হবে এবং স্ত্রীদের অনুসরণ করবে। ছেলে-মেয়েরা, পিতা-মাতার অবাধ্য হবে ও অসৎ লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে। দেশের জনসাধারণের দুরবস্থা এত অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে যে, অধিকাংশ লোকই মৃত্যু কামনা করবে। পার্থিব লাভের আশায় লোকে দ্বীনি এলেম অর্জন করবে। মূর্খতা ও অধর্মাচরণ অত্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।

প্রত্যেক জাতি ও গোত্রের অসৎ ও লোভী ব্যক্তিগণ সমাজের নেতা নির্বাচিত হবে। অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ লোকের হাতে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার অর্পিত হবে। দেশের নেতাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেশের জনগণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদেরকে সম্মানপ্রদর্শন করতে বাধ্য হবে। নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ প্রকাশ্যে মদ্যপান করবে। ব্যভিচার অত্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। নিত্যনতুন নাচ-গানের প্রবর্তন হবে। খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদের সাজ সরঞ্জাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে। লোকে পূর্ববর্তী সৎ ও পরহেজগার লোকদের নিন্দাবাদ করবে।

বড়দের প্রতি বৃদ্ধা, ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতা এবং পরস্পরের প্রতি মায়া-করুণা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি হবে। লজ্জা-শরম, আদব-কায়দা উঠে যাবে। কথা ও কাজ-কারবারে মিথ্যা প্রচারণা, প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা অত্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মাটি ধসে যাওয়া, আকাশ হতে পাথর বর্ষিত হওয়া, আকৃতি পরিবর্তিত হওয়া প্রভৃতি আশ্চর্য ঘটনা সংঘটিত হতে থাকবে। মুসল্লিগণ মসজিদে বসে উচ্চঃস্বরে হাসি-তামাশা, গল্প-গুজব, তর্ক-বিতর্ক এমন কি অশ্লীল গালিগালাজ করবে।

লোকে প্রবঞ্চনা, প্রতারণা ও মিথ্যাকে বুদ্ধির পরিচয় বলে মনে করবে। মানুষের অন্তর হতে আল্লাহর ভয় তিরোহিত হবে। মুসলমানদের ওপরে কাফের ও মুশরিকগণ ক্রমেই প্রভাব বিস্তার করতে থাকবে। মুসলমানগণ পরাজিত ও তাদের বিত্তশালী নেতা শহীদ হবেন। খ্রিস্টানগণ শাম দেশ (সিরিয়া), কনস্টান্টিনোপল এবং খায়বার পর্যন্ত অধিকার করে নেবে। মুসলমানগণ পরাজিত হয়ে মদিনায় আশ্রয় গ্রহণ করবে। এ সময়ে মুসলমানগণ উপযুক্ত নেতার অভাবে নিজেদের নিতান্তই অসহায়বোধ করবে ও সাইয়্যেদেনা হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর সন্ধানে ব্যাপৃত হবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

এ সময়ে যে বছর রমজানে সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ হবে, সেই বছরই সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব হবে। হাদিস শরিফে এটাও উল্লেখ আছে যে, মহাবিশ্বের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত এ রকম চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের ঘটনা মাত্র একটি বছরই ঘটবে। এতদসংক্রান্ত কতিপয় হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হলো। ১. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূর্যগ্রহণ হবে রমজান মাসের মধ্যভাবে এবং চন্দ্রগ্রহণ হবে শেষভাগে। (আল বুরহান ফি আলামাতির মাহদি (আ.) পৃ. ৩৮)।

২. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তখন রমজান মাসে দুইটি গ্রহণ (সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ) হবে। (আল কাওলুল মুখতাছার : পৃ. ৫৩)। ৩. হাদিস শরিফে এসেছে, তখন রমজান মাসে সাইয়্যেদেনা হজতর ইমাম মাহদি (আ.)-এর আত্মপ্রকাশের পূর্বে দুইটি গ্রহণ হবে। (মুখতাছর তাজকিরাতুল কুরতুবি : পৃ. ৪৪০)। ৪. হাদিস শরিফে এসেছে, চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ রমজান মাসেই অনুষ্ঠিত হবে। (আল ইশারা লি আশরাতিস সায়াহ : পৃ. ১৯৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মিফতাহুল জান্নাত ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৫ এএম says : 0
প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। সেই ধারায় তিনি হজরত ইমাম মাহদি (আ.) এর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণীও করে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাই তার আবির্ভাবের বিষয়টি এখন অকাট্যভাবে প্রমাণিত।
Total Reply(0)
কায়কোবাদ মিলন ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৫ এএম says : 0
হজরত মাহদি (আ.) এর আবির্ভাবের আকিদা পোষণ করা ওয়াজিব। তবে তার আবির্ভাবকে কেন্দ্র করে যুগে যুগেই পানি ঘোলা করা হয়েছে। বহু মানুষ নিজেকে মাহদি দাবি করেছে। অথচ এর কোনোই ভিত্তি ছিলো না।
Total Reply(0)
মামুন আহাম্মাদ ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৬ এএম says : 0
হাদিসের কিতাবগুলো থেকে ঘটনার বিবরণ জানা যায় যে, ‘একজন রাষ্ট্রপ্রধানের মৃত্যু হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্বে কাকে বসানো হবে, এ নিয়ে সভাসদগণের মাঝে তুমুল মতবিরোধ দেখা দেবে। কেন্দ্রীয় অব্যবস্থাপনার কারণে, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটবে। অন্যান্য ফেতনা ফাসাদও ব্যাপকভাবে হতে থাকবে। যে রাষ্ট্রে এই ঘটনা ঘটবে, হাদিসের মধ্যে এর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে মদিনা রাষ্ট্র হওয়ার ব্যাপারে অনেকে মত পোষণ করেছেন। অন্য কোনো রাষ্ট্রও হতে পারে। ওই অবস্থায় এক লোক সেখান থেকে পালিয়ে মক্কায় আশ্রয় নিবে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও অন্যান্য ফেতনা ফাসাদ থেকে বাঁচার জন্য মক্কায় এসে আশ্রয় নিবে। কারো কারো মত হচ্ছে, সবাই মিলে তাকে ক্ষমতায় বসাতে চাইবে। ক্ষমতা থেকে দূরে থাকার জন্য সে পালাবে। পালিয়ে আসা ওই লোকই হচ্ছেন, হজরত মাহদি (আ.)।
Total Reply(1)
Mohammad Noor Uddin ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:১৩ এএম says : 0
100 % truth Imam Mahdi will come But any Preparation from our site?
তরিকুল ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৭ এএম says : 0
হজরত মাহদি (আ.) সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন- দুনিয়া ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না আমার পরিবারে এক সদস্য সমগ্র আরবের মালিক হবে। তার নাম, আমার নামে হবে।’
Total Reply(0)
বুলবুল ইসলাম ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৭ এএম says : 0
রাসূল (সা.) এর আদর্শ, নীতি ও আচার ব্যবহারের অনুসারী হওয়ায় তার খেতাব হবে মাহদি। এটা আরবি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, হেদায়াতপ্রাপ্ত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন