বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু ৬৭ শতাংশ

প্রথম জাতীয় সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, অসংক্রামক রোগ বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি ও উদ্বেগের কারণ। ৬৭ শতাংশ মানুষ দেশে নানা রকম অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ২০ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, ১০ শতাংশ ডায়বেটিস ও ২০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে ভোগে। প্রতি বছর নতুনভাবে যোগ হয় ৫০ হাজার।
গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) বিষয়ক এক আয়োজনের প্রথম দিনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টাস ফোরামসহ আরও ৩০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সম্মেলন চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত।

জাহিদ মালেক বলেন, জীবন যাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন, ওবিসিটি, তামাকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, অপর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম, ওষুধের অপব্যবহারের কারণে এনসিডি বাড়ছে। এনসিডি প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। রেগুলার চেকআপ ও আর্লি ডিটেকশন এনসিডি কন্ট্রোলে গুরুত্বপূর্ণ। ট্রিটমেন্ট ফ্যাসিলিটি বাড়ানো ও প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। তিনি বলেন, সরকার এনসিডি প্রতিরোধে সেক্টর ভিত্তিক প্রোগ্রাম নিয়েছে। দেশের আট বিভাগে ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। দেশের সব জেলা হাসপাতালে ১০ বেডের ডায়ালাইসিস ও আইসিইড বেড স্থাপন করা হচ্ছে। উপজেলা হাসপাতালসহ দেশের সব হাসপাতালে এনসিডি কর্নার করা হয়েছে।

জাহিদ মালেক বলেন, হাসপাতালগুলো কোভিড রোগী দিয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়ায় এনসিডি রোগীরা সেবা বঞ্চিত হয়েছে। দেরিতে সেবা নেয়ায় মৃত্যু বেড়েছে। এখন দেশে কোভিড পজিটিভিটি রেট ৩২ শতাংশ, দিনে ১৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সংক্রমণ রোধে সবাইকে মাস্ক পরতে, জনসমাগম এড়ানো ও ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী। কনফারেন্স আয়োজনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ নন কমিউনিকেবল ডিজিজ ফোরাম ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রস গেব্রিয়েসাস ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, অসংক্রামক ব্যাধির কারণে বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। তামাকের ব্যবহার, আনহেলদি লাইফ স্টাইলের কারণে এনসিডি বাড়ছে। এনসিডি কন্ট্রোল ও প্রিভেনশনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে ডব্লিউএইচও। যারা এনসিডিতে ভুগছে তাদের ন্যায়সঙ্গত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার পর্যায়েও বলে উল্লেখ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক। এ দিন তিনটি সেশনে ভাগ করে এই কনফারেন্সে আলোচকরা বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী সেশনে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. সারওয়ার আলী। এতে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন কবির, পিওর আর্থের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, সাউথ ইস্ট এশিয়া রিজিওনাল এনসিডি অ্যালায়েন্সের চেয়ারপার্সন ডা. মনিকা আরোরা, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) প্রফেসর ডা. আখতার হোসাইন।

এরপর সাইন্টফিক সেশনে বক্তব্য রাখেন ডা. জামান, ডা. শামসুল আরেফিন, ভারতের ডা আরুন জোস, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রুবানা রাকিব, অর্গানিইজিং কমিটির সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. আলিয়া নাহিদ, ডা. আফরিন ইকবাল, ডা. আনোয়ার হোসেন, ডা. তাহনিয়াহ হক, ডা. মারুফা মুস্তারি, ডা. শাহাজাদা সেলিম, ডা. এস এম আশরাফুজ্জামান, ডা. নুসরাত হোসেন শেবা, ডা. সাদিয়া নুর, ডা. তনময় সরকার, ডা. জেবা মাহমুদ, প্রফেসর ডা. সানোয়ার হোসেন, ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ওসমানী, প্রফেসর ডা. ব্রায়েন গডম্যান, ডা. বেদোওরা জাবিন, ডা. থান চো, ডা. শেখ দাউদ আদনানসহ অন্যান্যরা।

প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ সম্মেলনের সাধারল সম্পাদক ডা. শামীম হায়দার তালুকদার বলেন, ৩৫ বছরের উপরে ৫০ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে। দেশে উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার সহ কয়েকটি রোগে ৭০ শতাংশ মানুষ মারা যায়। যারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রতিরোধের উপর জোর দিতে হবে। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অর্গানিইজিং কমিটির সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. আলিয়া নাহিদ বলেন, বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলের যদি খুঁজে দেখা হয় কতজনের উচ্চ রক্তচাপ আছে, দেখা যাবে ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন জানে না তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। মানুষ যখন ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে গিয়ে সেখান থেকে প্রাথমিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস লক্ষণ থাকার কথা শুনতে পারেন বা পরীক্ষা করে দেখেন, তখন থেকেই ওষুধ খাওয়া শুরু করে কিন্তু চিকিৎসকের কাছে যায় না। এ কারণে দেশে অসংক্রামক ব্যাধি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আমাদের শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত সবার মধ্যেই জ্ঞানের অভাব রয়েছে। সবাই মনে করে অসুখটা ধরা পড়ার পরে, অসুখটা হয়েছে। কিন্তু অসুখটা ধরা পড়ছে শেষ সময়। তারপর থেকে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে হবে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওষুধ খেতে হবে। অর্থাৎ আমাদের অসুখটা হওয়ার আগেই ডায়াগনোসিস করতে হবে।

তিনি বলেন, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর একবার করে অন্তত স্ক্রীনিং করতে হবে। স্ক্রিনিং এর মধ্যে শরীরের ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস সহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারলে ভালো। শরীরের মেদ, লবণ ও চিনি বেশি পরিমাণে খাওয়া, বসে বসে কাজ করা, মানসিক চাপে ভোগেন, খেলাধুলা করেন না, প্রতিদিন নিয়মিত ৩০ মিনিটের কম হাঁটাচলা করে এমন ব্যক্তিদের প্রতিবছর একবার করে স্ক্রীনিং করার পরামর্শ দেন তিনি। এইসব উপসর্গ যাদের মধ্যে আছে তারা অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া, হাটের নানা রকম অসুখ, লিভারের সমস্যা এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন।

সাবেক স্বাস্থ্য সচিব মো. হুমায়ুন কবির কলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সফলতা আছে, সীমাবদ্ধতাও আছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরো বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. রুহুল হক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবির, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) ভিসি প্রফেসর ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, ইউকে অ্যাম্বাসির হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাট্টার্টন ডিকসন, বিএনসিডিএফ’র প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. শাহ মনির হোসেন। ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ ভিরা মেনডনকা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এনসিডি লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর রোবেদ আমিন, ডব্লিউএইচও কনসালটেন্ট ডা. তৌফিক জোয়ার্দার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে ইউনিসেফ, ইউএনএফপি, অরবিজ ইন্টারন্যাশনাল, ট্রমা সেন্টার, ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল, রেনেটা ফার্মাসিটিক্যাল, নোভিস্থা ফার্মাসিটিক্যালসহ অনেক ন্যাশনাল ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান। সম্মেলনের তৃতীয় দিনে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ছয় জন বিশিষ্ট চিকিৎসককে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক এবং ছয় জন চিকিৎসককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন