শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ি অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় ১৫-২০ গ্রামে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে কষ্টে পানি এনে খাওয়া, রান্না-বান্না ও গেরহস্থাালী কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে ফি-বছর ৪-৫ মাস পানির অভাব থাকে গারো পাহাড়ে। সমস্যা দূরিকরণে সাবমারসিবল পাম্প স্থাপরে দাবি স্থানীয়দের।
জানা যায়, ঝিনাইগাতী সীমান্তবর্তী পানবর, গুরুচরণ দুধনই, বড় গজনী, ছোট গজনী, গান্ধিগাঁও, বাঁকাকুড়া, হালচাটি, নওকুচি,রাংটিয়া, সন্ধাকুড়া, হলদিগ্রাম, গারোকুনা, শ্রীবরদীর কর্ণঝোড়া, রানীশিমুলসহ পাহাড়ি অঞ্চল এবং নালিতাবাড়ির পাহাড়ি অঞ্চলের ১৫-২০ গ্রামে মাটির নিচে পাথরের কারণে নলকূপ্র স্থাপন সম্ভব হয় না। মাটির কূপের পানি খেতে হয় শুস্ক মৌসূমের ৪-৫ মাস। পাহাড়ি অঞ্চলে পানির লেয়ার অনেক নিচে এবং মাটির নিচে পাথরের কারণে গভীর নলকূপও বসানো সম্ভব হয় না। নওকুচি গ্রামের বাবু ধীরেন্দ্র কোঁচ, রংটিয়া গ্রামের জাগেন্দ্র কোঁচ ও যোগল কিশোর কোঁচ বলেন, বিদ্যুৎচালিত গভীর সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন করা সম্ভব। কিন্তু এতে কমপক্ষে দেড় থেকে তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়-যা দরিদ্র পাহাড়ি মানুষের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
বিত্তশালি ২-১ জন কৃষক বিদ্যুৎচালিত গভীর সাবমারসিবল পাম্প বসিয়েছেন। সেখান থেকে পানি নেওয়ার জন্য শুষ্ক মৌসুমে আশপাশের লোকজনের ভির বাড়ে জগ, বালতি, কলস, বোতলে পানি নিতে। দূর-দূরান্তের মানুষ ভ্যানগাড়িতে খাবার পানি নিয়ে যান পাম্প থেকে।
গান্দীগাাঁও গ্রামের মিজান বলেন, প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠে না। বসাতে হয় সাব মারসিবল পাম্প। অনেক ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় দরিদ্র মানুষের পক্ষে এই নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। ফলে পানিসংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েন পাহাড়ি মানুষ।
দরিকালিনগর,সারিকালিনগর, প্রতাবনগরের লোকজন বলেন, গরিবের সব বিষয়েই কস্ট! পানির অভাবে পুকুরের পচা পানিতে গোসল করতে বাধ্য হই। এই ভোগান্তি অবসানে সাবমারসিবল পাম্প দরকার। কিন্তুু এতো টাকা পামু কই?
কালিনগরের আলহাজ, শরিফ উদ্দিন সরকার, প্রতাব নগরের শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী ও আলহাজ রেজায়ুর রহমান মাস্টার বলেন ফি-বছর শু¯ক মৌসুমে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, শুকনো মৌসুমে কোনো টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। তখন পাম্প থেকেই এলাকার মানুষ পানি নিয়ে যায়। মেশিন চালু করলেও মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাদেরও কষ্ট হয়, পাম্প মালিকেরও অসুবিধা হয়।
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ছামিউল হক জানান, পাহাড়ি এলাকায় পানি সঙ্কট নিরসনে সম্ভাব্য সব চেষ্টা করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় পানির সমস্যা বেশি, ওইসব এলাকায় বরাদ্দ সাপেক্ষে গভীর নলকূপ ও সাবমারসিবল পাম্প বসানো হবে। চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে সব গ্রামেই পাম্প স্থাপন করা হবে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও ) মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, উপজেলার ৫ ইউনিয়নের কিছু গ্রামে শুষ্ক মৌসুমে নলকূপে পানি ওঠে না। আমরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে কিছু জায়গায় সাবমারসিবল পাম্প বসাচ্ছি। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চাহিদা পাঠাবো। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন