রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

যেসব আমলে রিযিক বৃদ্ধি পায়

মিজানুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

আল্লাহ মুখ দিয়েছেন আহার তিনিই দিবেন। এমন দৃঢ বিশ্বাস যে মুমিনবান্দার ভেতরে পুষণ করে অবশ্যই তাকে মহান রব গায়েবী রিযিকের ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দুনিয়ায় বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল সম্পর্কে তিনি অবহিত। সব কিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৬)। আল্লাহ তাআলা যেমন সব প্রাণীর রিজিকের ব্যবস্থা করেন তেমনি কুরআনি আমলেও বেড়ে যায় বান্দার রিজিক। কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত হয়েছে সেসব আমল।
তাই রিজিকের বরকত লাভে মুমিন মুসলমানকে সে আমলগুলো আমল করে যেতে হবে। আর এগুলো আল্লাহর নির্দেশ এবং নসিহতও বটে। আর তাহলো- আল্লাহর প্রতি ভয় ও বিশ্বাস রাখা, মুমিন বান্দা যখন আল্লাহকে বেশি ভয় ও বিশ্বাস করবে, তখন আল্লাহ তাআলা তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কোনো না কোনো পথ বের করে দেবেন। আর তাকে (এমন উৎস থেকে) রিজিক দেবেন যা সে ধারণাও করতে পারবে না।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ২-৩)।
তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা দুনিয়ার কৃতকর্মের জন্য বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেননা তাওবা-ইসতেগফারে মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে রিজিক দান করেন বলেও কুরআনে ঘোষণা দেন-‘আমি বলেছি ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা নূহ : ১০-১২)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে তার সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন। সব সঙ্কট থেকে মুক্তি দেবেন এবং তাকে এমনভাবে রিজিক দিবেন, যা কোন মানুষ ধারণাও করতে পারে না।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)।
আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করা যারা আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ রূপে ভরসা করবে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট। তা যে প্রয়োজনই হোক না কেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সব কিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। (সূরা ত্বালাক : আয়াত ৩)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-‘তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা কর তাহলে তোমাদেরকে জীবিকা দেয়া হবে ঐভাবে যেভাবে দেয়া হয় পাখিকে। পাখি সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা ত্যাগ করে এবং (সন্ধ্যায়) পেট ভর্তি করে (বাসায়) ফিরে আসে।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান)। একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করা আল্লাহ তাআলা তার একনিষ্ঠ ইবাদতকারীর জন্য তার সব কল্যাণের দরজা খুলে দেন। দুনিয়ার সব অভাব পূরণ করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য গ্রহণ করো। আর আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৩)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেন-‘আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য (একনিষ্ঠভাবে) আত্মনিয়োগ কর; তাহলে আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত করব, তোমার অভাবকে মোচন করব, আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার হাতকে কর্মে ব্যস্ত করব এবং তোমার অভাব মোচন করব না।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও হাকেম)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে-আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য আত্মনিয়োগ কর আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত করব এবং তোমার হাতকে জীবিকায় পরিপূর্ণ করে দেব। হে আদম সন্তান! আমার থেকে দূরে সরে যেও না (যদি যাও তাহলে) তোমার অন্তরকে সঙ্কীর্ণ ও দরিদ্র করে দেব, আর তোমার দু-হাতকে কর্মে ব্যস্ত করে দেব।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)।
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা রিজিকের প্রশস্ততার অন্যতম আমল হলো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। হাদিসে পাকে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার বয়স বৃদ্ধি করা হোক, তার জীবিকা বৃদ্ধি করা হোক এবং জঘন্য মৃত্যু থেকে সে পরিত্রাণ পাক, তাহলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখে।’ (মুসনাদে আহমাদ)। অন্য বর্ণনায় এসেছে-‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে তার রিজিক অথবা তার হায়াত বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখে। (বুখারি)।
আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা দান সহযোগিতায়ও আল্লাহ তাআলা বান্দার সম্পদ ও রিজিক বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-হে নবি! তাদেরকে বলুন, ‘আমার রব তার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান মুক্ত হস্তে রিজিক দান করেন এবং যাকে চান মাপা-জোখা দেন। যা কিছু তোমরা ব্যয় করে দাও তার জায়গায় তিনি তোমাদের আরও দেন, তিনি সব রিজিকদাতার চেয়ে উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা : আয়াত ৩৯)। হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘আল্লাহ তাআলা বলেন : হে আদম সন্তান! খরচ কর। আমিও তোমার উপর খরচ করব।’ (বুখারি)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘বান্দাগণ যখন সকালে উপনীত হয় তখন দুইজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। (বান্দার জন্য) তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি তোমার পথে ব্যয় করে, তাকে উত্তম প্রতিদান দাও। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণের মাল ধ্বংস কর।’ (বুখারি)।
আল্লাহর পথে হিজরত করাআল্লাহর পথে হিজরত করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বেড়ে যায়। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য পেয়ে যাবে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০০)। হজ ও ওমরা আদায় করাহজ ও ওমরা মানুষের অভাব ও পাপকে মুছে দেয়। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন-হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহ পরস্পর আদায় কর, কেননা উক্ত কাজ দুইটি তেমনভাবে অভাব ও পাপকে মিটিয়ে দেয়, যেমন হাপর সোনা, চাঁদি এবং লোহার মরিচাকে মিটায়। আর কবুল হজের সওয়াব হচ্ছে একমাত্র জান্নাত। (নাসাঈ, তিরমিজি)।
এছাড়াও দুর্বল-অসহায়দের প্রতি মমতা দেখানো, সাধারণ মানুষের প্রতি মমতা দেখানো, দ্বীনি ইলম অর্জনকারীদের জন্য ব্যয় করাও রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। রিজিকের প্রশস্ততা লাভে এগুলো হলো কুরআনে বর্ণিত আমল। এ আমলেই বেড়ে যাবে বান্দার রিজিক। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনি আমলের মাধ্যমে রিজিকের প্রশস্ততা বাড়ানোর তাওফিক দান করুন। কুরআমি আমলগুলো করার মাধ্যমে দুনিয়ায় রিজিক ও উত্তম জীবনের পাশাপাশি পরকালের জীবনকে সুন্দর করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন