মেট্রো রেলের ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার পথে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো অংশের কাঠামো দৃশ্যমান হলো। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে ৫৮২ ও ৫৮৩ নম্বর পিয়ারের মাঝে শেষ ভায়াডাক্টটি বসানো হয়। তবে ব্যস্ততম মিরপুর-আগারগাঁও-ফার্মগেট-মতিঝিল সড়কের প্রায় অর্ধেক অংশে চলমান মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের। বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে ফেলা হয়েছে ফুটপাথ। বাস যাত্রী ও পথচারীদের ভোগান্তি বেড়েছে সড়কের ধুলাবালি। মেট্রোরেলে যে ১৬টি স্টেশন থাকছে, এর নিচে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে যাত্রীরা সহজে ওঠা-নামা করতে পারবেন না বলে মনে করছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, উত্তরা-আগারগাঁও অংশ চলতি বছরের ডিসেম্বরেই চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া পুরো মেট্রোরেলই আগামী বছরের ডিসেম্বরে চালু করতে চায় সরকার। এসব লক্ষ্যপূরণে বিভিন্ন স্থানে এখন দিনেও নির্মাণকাজ চলছে। মেট্রোরেলের নিচের সড়কের মাঝ বরাবর গড়ে তোলা হয়েছে পিয়ার। মধ্যবর্তী অর্ধেক অংশ ঘিরে রাখা হয়েছে। স্টেশন এলাকাগুলোয় রাস্তার প্রায় পুরো অংশজুড়েই চলছে নির্মাণকাজ। এগুলোর ভেতর দিয়ে কোনো রকমে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলটি (এমআরটি-৬) তৈরি হচ্ছে উত্তরা-মিরপুর-আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট-শাহবাগ-দোয়েল চত্বর-মতিঝিল রুটে। এর মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশে সড়কের নিচে থাকা বিভিন্ন সংস্থার পরিষেবা লাইন স্থানান্তরের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের শেষ দিকে। উড়ালপথের পাশাপাশি রেললাইন, শব্দ প্রতিরোধী দেয়াল, ক্যান্টিলিভার, ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেমের কাজ সম্পন্ন হলেও এখনো নিচের সড়কটি আগের অবস্থায় ফেরেনি। কিছু কিছু স্থানে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে সড়কটি যান চলাচলের জন্য স্বাভাবিক করা হলেও এখনো অনেক জায়গায় নির্মাণসামগ্রী সরানো হয়নি। ফলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
মিরপুর-আগারগাঁও সড়কটি স্বাভাবিক হতে এপ্রিল পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে কাজের নতুন অনুষঙ্গ যোগ হওয়ায় স্টেশন এলাকাগুলোয় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে উড়ালপথের কাজ শেষ হলেও সবকটি স্টেশনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিচের সড়কে অব্যাহত থাকবে দুর্ভোগ। উড়ালপথের কাজ শেষ হলেও আগারগাঁও-মতিঝিল সড়কটিতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে আরো অন্তত এক বছর সময় লাগার কথা জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা।
মেট্রোলাইনটি মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করার কাজ এখনো মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়নি। শিগগিরই এ অংশে মাঠ পর্যায়ে নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশটির নির্মাণকাজ আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য ওই অংশের সড়ক ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগে ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাজিম নামের এক পথচারী বলেন, মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলাচল সহজ হবে। এই প্রকল্পটি চলমান থাকার কারণে এখন যেসব সড়কে কাজ চলছে সেগুলোতে সমস্যা হচ্ছে। তবে এতে আমাদের তেমন খারাপ লাগছে না। শুধু সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বাস চলাচল ও লোকজনের হাঁটাচলায় খুবই সমস্যা হচ্ছে।
মেট্রোরেলের উড়ালপথ নির্মাণকাজ শেষ হওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, মিরপুর-আগারগাঁও সড়কে রক্ষিত নির্মাণসামগ্রীর বেশির ভাগ আগামী এপ্রিলের মধ্যে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। তখন সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। তবে স্টেশন এলাকাগুলোয় যান চলাচল এর পরও কিছুদিন ব্যাহত হতে পারে। মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোয় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলো জনসাধারণের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন