বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

রাজবাড়ীতে ৯০টির মধ্যে ৫৫টির পরিবেশ ছাড়পত্র নেই

মো. নজরুল ইসলাম, রাজবাড়ী থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

রাজবাড়ী জেলায় চলতি মৌসুমে অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। যাদের দেখার কথা তারা দেখেও না দেখার ভান করে চলছে। ফলে ফলবান বৃক্ষ ও বনসম্পদ দিন দিন হ্র্রাস পাচ্ছে। রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, কালুখালী, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে ৯০টি ইটভাটা রয়েছে। সদর উপজেলার কল্যানপুর ও বসন্তপুরে ইটভাটাগুলো জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসলি জমি ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এএইচএম রাশেদ জানান, ৩৫টি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে। ৫৫টি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। চলতি বছর ১২টি ইটভাটায় জরিমানা ও ফায়ার সার্ভিস দিয়ে ইটভাটার আগুন নিভিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। অধিকাংশ ইটভাটার মালিককে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনবল সংকটে অভিযান ধীর গতিতে চলছে। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত বছর ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে রাজবাড়ী জেলায় বিভিন্ন স্থানে ১৭টি ইটভাটা জরিমানা ও ফায়ার সার্ভিস দিয়ে আগুন নিভানো হয়। কয়েকটি ইটভাটা চিপনি ধ্বংস করা হয়। রহস্যজনক কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান শেষ হওয়ার পরেই পুনরায় ইটভাটার মালিকরা কাঠ পোড়ানো শুরু করে। যে সকল ইটভাটার মালিকরা পরিবেশ অফিসে তদবির করে তাদের ভাটায় অভিযান হয় না। বালিয়াকান্দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির মাটি কেটে অবৈধ ইটভাটা চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকটে ইটভাটা তৈরির নিয়ম না থাকিলেও অনেক স্থানেই ইটভাটা চালু রয়েছে। ৩ ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরি সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা ১ ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরিতে উৎসাহিত করছেন। ফলে জেলায় ইটভাটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। গোয়ালন্দে দৌলতদিয়া এলাকায় আবাদি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি হচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ চরপাঁচুরিয়া এলাকার একেএফ ইটভাটার মালিক শাহারিয়া কবির জানান, গত ৩০ বছর ধরে এখানে ইটভাটা চালু রয়েছে। গত সপ্তাহে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তর ও ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তামজিদ আহম্মেদ পরিবেশ ছাড়পত্র নেই বলে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে। গত ২ বছর থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট অনেকেই ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলেও নবায়ন পায়নি।
বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম ফরিদ হোসেন বাবু জানান, তার মালিকানায় রনি ইটভাটা রয়েছে। পূর্বে টিনের চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানো হতো। কিছুদিন পর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসে জানান, টিনের চিমনি সরকার বাতিল করে ১৩০ ফিট উচ্চতার চিমনি দিয়ে ইটভাটা চালু করতে হবে। এর কয়েক বছর পরেই ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস থেকে জানানো হয় ১৩০ ফিট চিমনি দিয়ে ইটভাটা চালানো যাবে না। হাওয়াই চিমনি দিয়ে ইটভাটা চালাতে হবে। এভাবে ঘন ঘন নিয়ম পরিবর্তনের ফলে তাদের ইটভাটার ব্যবসায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। হাওয়াই চিমনি করার পরেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া যায় নি।
হাওয়াই ইটভাটায় যশোর জেলা নওয়াপাড়া থেকে প্রতি টন কয়লা ইটভাটায় পৌছায়তে ২১/২২ হাজার টাকা খরচ হয়। গত বছর উক্ত কয়লার মূল্য ছিল টন প্রতি ৮/৯ হাজার টাকা। ফলে ইট পোড়ানোর খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে ইটের ভাটার ব্যবসা বন্ধ হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপর দিকে যে সকল ইটভাটায় গত বছর ১০০ টাকা মণ দরে কাঠ ক্রয় করতো বর্তমানে কাঠ খড়ির দাম বৃদ্ধি পেয়ে ১৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় ইটের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ১ম শ্রেনীর ইট সাড়ে ৯ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি হিসাবের চেয়ে বেসরকারিভাবে ইটভাটার সংখ্যা অনেক বেশি রয়েছে।
রাজবাড়ী বিভাগীয় কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া জনান, রাজবাড়ী জেলায় ১০২টি ইটভাটা চালু রয়েছে। এই সকল ইটভাটা থেকে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে।
অপরদিকে ফরিদপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কেএইচএম রাশেদ জানান, রাজবাড়ী জেলায় ৯০টি ইটভাটা চালু রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন