মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুঅভ্যাস পরিত্যাগের সকল প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয় আমাদের মস্তিষ্ক

প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : কুঅভ্যাস পরিত্যাগের সকল প্রচেষ্টাই নস্যাৎ করে দেয় আমাদের মস্তিষ্ক। আমরা নিজেরাই আমাদের সবচেয়ে খারাপ শত্রু, এটি আশ্চর্যজনক শোনালেও বিষয়টি কঠিন সত্য। নতুন এক গবেষণায় এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, আমাদের মস্তিষ্কই হচ্ছে আমাদের সাফল্যের সবচেয়ে অন্তর্ঘাতক। বড় অন্তরায় যা বড় মাপে আমাদের আত্মপ্রতারণার দিকে নিয়ে ঠেলে দেয়। আমাদের মস্তিষ্ক কি আসল অপরাধী? মস্তিষ্কের ডোপামিন হচ্ছে এই শত্রু।
অনেকেই হয়তো এটা জানেন যে, ডোপামিন সেই রাসায়নিক যা আমাদের আনন্দের অনুভূতি যোগায়। এটি নিউরোট্রান্সমিটার এবং এপিনেফ্রিনসহ অন্যান্য পদার্থের একটি অগ্রদূত হিসেবে শরীরের মধ্যে একটি যৌগ হিসেবে কাজ করে।
কোনো পুরস্কার পেলে আমরা খুশি হই। ডোপামিন এই খুশির অনুভূতি জাগায় আমাদের মনে। আপনি আগেই ঘুম থেকে উঠতে বা এখন রাতের খাবার খাওয়ার জন্য নিজেকেই হয়তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কি। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নতুন গবেষণা বলছে, আপনি যাই প্রতিশ্রুতি দেন না কেন তাতে কিছু যায়-আসে না। কারণ মস্তিষ্কে এমন কিছু স্মৃতি থাকে যা সবসময়ই অনেক বেশি মিষ্টি এবং থাকেও দীর্ঘক্ষণ।
ডিপার্টমেন্ট অব সাইকোলজিক্যাল এবং ব্রেইন সায়েন্সের অধ্যাপক সুসান এম কার্টনি বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আমাদের মনোযোগে পক্ষপাতদুষ্টের কারণে আমরা আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করি না। বার্গারের অতীত স্মৃতি আমাদের প্রলুব্ধ করে, কারণ আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিন এই স্মৃতিকে খুবই সজীব রাখে। আামাদের স্বাদের আস্বাদন পাওয়ার জন্য আমাদের দরকার এমন একটি অতীত পুরস্কারের স্মারক। অনুরূপ অভিজ্ঞতা, এমনকি নতুন প্রতিশ্রুতি ছাড়াই অর্থহীন আত্মনিয়ন্ত্রণে মনের ধারণাই যথেষ্ট।
এই কারণেই কোনো কিছুর আসক্তির চক্র ভাঙা খুবই কঠিন এবং আরো ব্যাপার হচ্ছে এতে আপনি কোন কিছু থেকে নিজেকেই বঞ্চিত করছেন। এমনকি কোনো বিরক্তিকর কিছু প্রতিভাত হলে আপনার ¯œায়বিক সিস্টেম তখন স্মৃতিকে বন্ধ করে দিতে পারে।
কার্টনি কৌতুক করে বলেন, আমি স্বাস্থ্যকর বা অস্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করতে পারি, তবে আমার মনোযোগ সব সময়ই ফেটিসিনি আলফ্রেডোর দিকে আকৃষ্ট রাখে।
অতীতে আমরা যা কিছু করেছি সে দিকে তাকানো বা চিন্তা করা অথবা মনোযোগ দেয়ার যে প্রবণতা আমাদের রয়েছে, তার মূলে রয়েছে পুরস্কৃত হওয়ার আনন্দ।
এই গবেষণাপত্রের লেখকরা তাদের গবেষণার উপসংহারে পৌছুতে ২০ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে একটি ছোট কম্পিউটার গেম খেলেন। এই খেলার প্রতিটিতে ছোটখাটো অর্থ পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়। নানা রঙিন বস্তু দিয়ে ভরা কম্পিউটার স্ক্রিনে লাল ও সবুজ বস্তুও রাখা হয়। এই খেলায় উত্তরদাতা লাল বস্তু চিহ্নিত করলে পাবেন ১ দশমিক ৫০ ডলার। কিন্তু সবুজ বস্তুর জন্য পাবেন মাত্র ২৫ সেন্ট।
উত্তরদাতারা এরপর ঘুমিয়ে পড়েন এবং পরের দিন তাদেরকে আরেকটি খেলা খেলার জন্য বলা হয়। তবে এই সময়ে তাদের রঙ বা আকার যাই হোক তাদেরকে বিশেষ কাঠামো চিহ্নিত করতে বলা হয়। এতে কোনো পুরস্কার ছিল না। মজার ব্যাপর হলো, অংশগ্রহণকারীরা আগের তুলনায় এবারে লাল বস্তুর ওপর শূন্য পায়।
এই মহড়ায় যখন তারা অংশ নেয় তখন গবেষকরা তাদের উপর ‘পিইটি’ স্ক্যান পরিচালনা করেন এবং দেখেন যে মনোযোগ আকর্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের অংশটি ডোপামিন দ্বারা এক রকম মাতাল অবস্থায় রয়েছে। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা লাল রঙের বস্তুতে মনোযোগ দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ডোপামিন নিঃসরণের মাত্রা ছিল বেশী।
কার্টনি বলেন, অতীত পুরস্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু রয়েছে যা এখনো ডোপামিন নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই উদ্দীপক পুরস্কার সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে। তবে এর প্রভাব পরিবর্তনশীল। যারা বিষণœতায় ভোগে তারাসহ মানুষ সাধারণত অভ্যাসজনিত আচরণের প্রতি আসক্ত। এই ক্ষেত্রে তাদের উত্তর হবে বিভিন্ন রকম। সাধারণভাবে প্রথম গ্রুপটি সাহায্য করতে পাওে না তবে তারা অনেক বেশী আমুদে বোধ করে এবং পরের গ্রুপটির প্রবণতা হচ্ছে পুরস্কারের দিকে কম মনোযোগ দেয়া।
জন হপকিন্স-এর এই গবেষক দলটি মনে করেন এই ফলাফল ডোপামিন রাসায়নিকের ভারসাম্যহীনতা দূর করার উপায় হিসেবে নতুন কোনো ওষুধ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা শুরু করার জন্য যথেষ্ট। সূত্র : রয়টার্স, নিউজ রিপাবলিক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
জামাল ১০ এপ্রিল, ২০২০, ১:১০ পিএম says : 0
ভালো লাগার অনুভুতি নাই
Total Reply(0)
জামাল ১০ এপ্রিল, ২০২০, ১:১০ পিএম says : 0
ভালো লাগার অনুভুতি নাই
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন