শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইরাকে চীনের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি

তিনটি বড় চুক্তি চূড়ান্ত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

৯ ডিসেম্বর ২০২১ এ দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘যুদ্ধ মিশনের’ আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পর, চীন ইরাকে পাওয়া ভূ-রাজনৈতিক সুবিধার জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে। সম্পূর্ণ তেল খাতের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবার ইরাকের সাথে তিনটি বিশাল চুক্তি করেছে চীন। যার মাধ্যমে দেশটিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দৈত্যাকার মানসুরিয়া গ্যাসক্ষেত্র এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলির জন্য উন্নয়ন চুক্তির চূড়ান্ত ফলাফল পরিবর্তন করার সুযোগ তাদের এখনও থাকতে পারে। গত সপ্তাহে ২৫ বছরের চুক্তি ‘চূড়ান্তকরণ’ এর মাধ্যমে চায়না পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড কেমিক্যাল কর্পোরেশন (সিনোপেক) মানসুরিয়া গ্যাসক্ষেত্রের ৪৯ শতাংশ পেয়েছে। বাকি অংশ থাকছে ইরাকের নিজস্ব মিডল্যান্ড অয়েল কোম্পানির হাতে।

ইরাকের ওই অঞ্চলে গ্যাস উন্নয়ন প্রকল্পে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের আগ্রহের কারণে ২০২১ সালের এপ্রিলে করা চুক্তিটি অনেককে অবাক করেছিল। ‘২০২১ সালের শুরুতে একটি অনানুষ্ঠানিক চুক্তি করা হয়েছিল যে, ইরাকের জন্য, চীন প্রথমে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করবে। যার মধ্যে একটি ছিল মানসুরিয়া,’ ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে এমন একজন তেল ও গ্যাস শিল্পের ব্যক্তিত্ব বলেছেন, ‘এটি একটি বৃহত্তর সহযোগিতার নীতির অংশ যা এই ধারণা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যে কোনো দেশে চীন-রাশিয়ান অক্ষকে প্রসারিত করার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংঘাতের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে সিরিয়া- যেখানে রাশিয়া নেতৃত্ব দেয়, যখন অন্য যেকোনো দেশে, যেখানে শুধুমাত্র অর্থের প্রয়োজন, চীন নেতৃত্ব দেয়।’

তিনি বলেন, ‘তবে, রাশিয়ার কাছে মনসুরিয়ার সামরিক কৌশলগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে চীনের সাথে বেশ কয়েকটি রাশিয়ান কোম্পানিও মনসুরিয়া উন্নয়নে উপস্থিত থাকবে যারা সিনোপেকের সাথে কাজ করছে, মূলত প্রযুক্তিগত এবং সরঞ্জামের দিকে।’ ইরানের সীমান্তের খুব কাছে, এবং বাগদাদের ঠিক উত্তরে, মানসুরিয়া গ্যাসক্ষেত্রে আনুমানিক ৪ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএএফ) গ্যাস রয়েছে, যার উৎপাদন কমপক্ষে ৩২০ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফুট বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাশিয়ার কাছে এর বিস্তৃত তাৎপর্য - এবং, বর্ধিতভাবে, চীনের কাছে - দ্বিগুণ।

প্রথমত, ইরাক সর্বদাই মানসুরিয়া, আক্কাস এবং সিবার তিনটি ক্ষেত্রকে একটি উন্নয়ন প্যাকেজ হিসাবে একসাথে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এই তিনটি স্থান দক্ষিণ ইরাক জুড়ে একটি তির্যক ত্রিভুজ গঠন করে, ইরানের সাথে পূর্ব সীমান্তের কাছে মানসুরিয়া থেকে দক্ষিণে সিবা পর্যন্ত (প্রধান ইরাকি বসরা রফতানি কেন্দ্রের অত্যন্ত কাছাকাছি) এবং তারপরে পশ্চিমে আক্কাস পর্যন্ত বিস্তৃত (সিরিয়া সীমান্তের কাছাকাছি)।

দ্বিতীয়ত, এই ত্রিভুজটিকে বসরা থেকে সিরিয়া পর্যন্ত চলমান একটি ট্রানজিট রুটের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছিল, যার বেশিরভাগই ইরাকের সংঘাতপূর্ণ আনবার প্রদেশের মধ্যে পড়েছে। এই রুটটিকে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইসলামিক স্টেটের ‘মেরুদন্ড’ বলে ডাকত, যেখানে ইউফ্রেটিস নদী পশ্চিমে সিরিয়ার দিকে এবং পূর্ব দিকে পারস্য উপসাগরে প্রবাহিত হয়েছে, ইরানের সীমান্তের খুব কাছে। কেবল সিরিয়ায় এবং এই অঞ্চলের অন্যত্র রাশিয়ান অভিযানের জন্য নয়, চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ স্থল ও সামুদ্রিক রুটের বিভিন্ন উপাদানের জন্যও এর কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।
ঠিক এই কারণেই, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, রাশিয়ার স্ট্রয়ট্রান্সগাজ এবং ইরাকের তেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল যা এখনও পর্যন্ত কার্যত অজানা ব্লক ১৭ বিকাশের জন্য, কারণ ব্লকটি এই ‘মেরুদন্ডের’ মাঝখানে অবস্থিত। ইরানের সূত্র বলেছে, ‘রাশিয়ার উপস্থিতি, বা চীন যদি রাশিয়ার সাথে পরিচালিত হয়, তাহলে ইরান-ইরাক-সিরিয়া তেল ও গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম তৈরি করতে এবং হাইড্রোকার্বন পণ্যগুলির অবাধ চলাচলের অনুমতি দেবে।’ এই অত্যাবশ্যক গ্যাস ক্ষেত্র উন্নয়ন প্রকল্পে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর চাপ বাড়ছে। এবং এর সাথে যে অতিরিক্ত প্রকল্পগুলি ‘ইরাকের মেরুদন্ড’-এর সাথে যুক্ত - তেল মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে চীনের কোম্পানিগুলির সাথে আরও দুটি বিশাল চুক্তি ঘোষণা করেছে। ইরাকের তেল মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি অনুসারে, বসরা প্রদেশের আল-ফাহা তেলক্ষেত্রের ব্লক ৯-এ অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণ কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।

তেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইহসান আবদুল-জব্বার ইসমাইল বলেন, হালকা তেল উৎপাদনের জন্য এই উন্নয়নটি গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা প্রতিদিন ১ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত অপরিশোধিত তেল (বিপিডি) এবং প্রতিদিন ১৩ কোটি ৫০ লাখ স্ট্যান্ডার্ড ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন। ক্ষেত্রটির উন্নয়ন ২০১৪ সালে কুয়েত এনার্জি কোম্পানি (কেইসি) দ্বারা শুরু হয়েছিল এবং তারপরে ২০১৮ সালে কেইসি অধিগ্রহণের পর স্বল্প পরিচিত চীনা কোম্পানি ইউনাইটেড এনার্জি গ্রুপ (ইউইজি) দ্বারা বাছাই করা হয়েছিল।

এই ঘোষণার ঠিক আগে আরেকটি এসেছে যে, পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন অফ চায়না (পাওয়ার চায়না) মিসান রিফাইনারি প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য ইরাকের মিসান ইন্টারন্যাশনাল রিফাইনারি কোম্পানির সাথে ৮৮ কোটি মার্কিন ডলারের প্রকৌশল, সংগ্রহ এবং নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। গত সপ্তাহে ইরাকের তেল মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য অনুসারে, প্রকল্পটি এখন আগামী ৫৪ মাসের মধ্যে শেষ হবে। সূত্র : অয়েলপ্রাইসডটকম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
জব্বার ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:২৯ এএম says : 0
মধ্যপ্রাচ্য ঐক্যবদ্ধ হলে কারো সাহায্যের দরকার হতো না
Total Reply(0)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:১৩ এএম says : 0
চীন এখন বিশ্ব নেতা চীন সবাইকে সহযোগিতা করেন,কথায় বলে দুধ যে গাই দেয় সেই গাই লাথি দিলেও ভালো,কিন্তু আমেরিকা তো সব জোর জবরদস্তি করে নিয়ে যায়।যেমন সাদ্দাম হোসেন কে বিনা কারনে হত্যা করলেন,আমেরিকার বিচার হওয়া উচিত,কোথায় ইরাকে পারমাণবিক বোমা কোথায় রাসায়নিক অস্রে ডান্ডার একটি নাম জাতিসংঘ কিন্তু দেখা যাচ্ছে মিথ্যা সংঘ। যদি সত্যি জাতির সংঘ হতেন,তবে সাদ্দামের হত্যার বিচার করতেন,বিনা দোষে একজন রাষ্ট্রপতি হত্যা করেছে এত বসর হলেন কেউ এই বিচার দাবি করলেন না।
Total Reply(0)
হাবিব ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:১৯ পিএম says : 0
আমেরিকা খালি নিতে জানে, তাই সবাই চীনের দিকে ঝুকছে
Total Reply(0)
ইলিয়াস ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৩ পিএম says : 0
আমেরিকা ইরাককে একশ বছর পিছিয়ে দিয়েছে
Total Reply(0)
শাফায়েত ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৫ পিএম says : 0
ইরাক যে কবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সমক্ষম হবে ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন