শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। কেননা এটি পবিত্র আমানত। প্রতিটি নাগরিকের এ আমানত রক্ষা করা উচিৎ। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেন যে, তোমাদের আমানতগুলো প্রাপকের কাছে পৌছে দাও।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৫৮)।
পেয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘লা ঈমানা, লিমান লা আমানাতা লা’। অর্থাৎ- ‘যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই’। (মুসনাদে আহমদ)। রাষ্ট্রের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য, রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সহীহ বুখারী)। রাষ্ট্রীয় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পাহাড়, মাটি, বন, বালি, আরো যে কোন সম্পদ যথাযথ ব্যবহার না করলে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় হবে। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই’। (বনী ঈসরাইল : আয়াত ২৭)।
আমাদের দেশে রয়েছে অনেক সরকারি খাস জমিন, যা রাষ্ট্রীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে অবৈধ স্থাপনা, পাহাড় কাটা, বন উজাড় করা, নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের শামিল। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে, এক বিঘা জমি দখল করে, কিয়ামতের দিন ৭ স্তবক জমিন, তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। (আল হাদীস)।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা কবিরা গোনাহ। এর ফলে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘ যারা আত্মসাৎ করে, তারা কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকৃত সম্পদসহ উপস্থিত হবে। আর প্রত্যেকে তার উপার্জিনের ফল ভোগ করবে’। (আল কুরআন)। সুনানে আবু দাউদ ও ইবনে মাজায় এসেছে, হজরত যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘খায়বার যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি কোনো দ্রব্য আত্মসাৎ করে। পরে সে মারা গেলে, রাসূলে কারিম (সা.) তার জানাযা পড়াননি। বরং বললেন, সে সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার জিনিসপত্র তল্লাসী করে তাতে একটি রেশমি বস্ত্র পেয়েছিলাম।
সহীহ মুসলিম ও বুখারী শরীফে বর্ণিত, একবার রাসূল (সা.) ইবনুল লুতবিয়া কে বায়তুল মালের অর্থ আদায়ের জন্য নিয়োগ করেন। তিনি ফিরে এসে আদায়কৃত অর্থগুলো দু’ভাগে ভাগ করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ, আর এগুলো আমার সম্পদ। যা মানুষ আমাকে হাদিয়া দিয়েছে। তার কথা শুনে রাসূল (সা.) খুব রেগে গেলেন। তিনি সাহাবাদের বললেন, তোমাদের কাউকে আমি সদকা আদায়ের জন্য পাঠালে, সে ফিরে এসে বলে, এগুলো রাষ্ট্রের আর এগুলো আমার সম্পদ, যা মানুষ আমাকে হাদিয়া দিয়েছে। তার চিন্তা করা উচিৎ, যদি সে বাড়িতে বসে থাকতো, তাহলে মানুষ তখন তাকে হাদিয়া দিতো না।
রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহর কসম! যারা রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করবেনা, আমানতের খেয়ানত করবে, কিয়ামতের দিন তারা উট কাঁধে নিয়ে উঠবে। সে চিৎকার করে আমার কাছে সাহায্য চাইবে, কিন্তু সে দিন আমি তার কোনো সাহায্য করবো না। আলোচ্য কুরান ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটি একটি বিশাল আমানত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অমাদের সবলকে, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন