শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ব্রিটিশ রাজনীতিতে তোলপাড়

২৪ ঘণ্টায় পাঁচ উপদেষ্টার পদত্যাগ, গুঞ্জন বরিসকে নিয়ে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পাঁচ উপদেষ্টা একে একে পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ শুক্রবার অপরাহ্নে পদত্যাগ করেন এলেনা নারোজানসকি। মাত্র একদিনের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় টেন ডাউনিং স্ট্রিটের উপদেষ্টাদের পদত্যাগে রাজনীতিতে নতুন নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে আবহাওয়ার তাপমাত্রা যত কমে আসতে থাকে তত যেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

করোনাকালে নিয়ম ভেঙে পার্টি করা নিয়ে বরিস জনসন খোদ দলের ভেতরে প্রবল চাপে আছেন। দলের অন্দরে ও বাইরে তার ইস্তফার দাবি উঠেছে। এই অবস্থায় তার চিফ অব স্টাফসহ চারজন সহকারী বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন। প্রথমে তার ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশন জ্যাক ডয়েল ও পলিসি প্রধান মুনিরা মির্জা ইস্তফা দেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত মুনিরা দীর্ঘদিন ধরে বরিসের সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন। এরপর পদত্যাগ করেন চিফ অব স্টাফ ড্যান রসেনফিল্ড। প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল ব্যক্তিগত সহকারী মার্টিন রেনল্ডসও পদত্যাগ করেছেন। জনসন তাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, তারা করোনাকালে যে কাজ করেছেন, সরকার ও ১০ ডাউনিং স্ট্রিটকে যেভাবে সাহায্য করেছেন, তাতে তিনি কৃতজ্ঞ।

বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৭ জন এমপি জনসনের বিরুদ্ধে দলের কাছে অনাস্থার চিঠি দিয়েছেন। ৫৪ জন এমপি অনাস্থা জানালে দলে নেতৃত্ব নিয়ে ভোটাভুটি হবে। বিরোধী দল লেবার পার্টি ইতোমধ্যে পার্লামেন্টে জনসনের পদত্যাগ দাবি করেছে। ব্রিটেনের রাজনীতিতে শুক্রবারের বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি গতি পেলেও বরিস শিগগিরই দায়িত্ব ছাড়ছেন না, এমনটিই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। একজন প্রধানমন্ত্রী অন্য সাধারণ জনগণের উর্ধ্বে নন, তার প্রমাণ দিল ব্রিটেন।

লকডাউনকালে ডাউনিং স্ট্রিটে পানীয়ের পার্টি দেয়ার অপরাধে প্রচণ্ড চাপে পড়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। শুধু এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন তার দলের মন্ত্রী, এমপিরা। তার একটি ভুলকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না দল। বরিস জনসন ওই পার্টিকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করতে পারতেন এবং চাইলে কূটকৌশলের আশ্রয়ে দল তাকে ছাড় দিতে পারতো। কিন্তু নীতির ক্ষেত্রে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার। তা সেটা নিজের দলের প্রধানমন্ত্রী হোন বা অন্যকেউ হোন।

অনলাইন বিবিসি বলেছে, সরকারের শীর্ষ স্থানীয় একের পর এক কর্মকর্তার পদত্যাগে জটিল এক পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনের রাজনীতিতে নানা গুজব। কেউ কেউ বলছেন, তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। কিন্তু ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে তা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি নিয়ন্ত্রণ হারাননি। ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তার পদত্যাগের পরে ব্রিটেনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বরিস জনসনের মুখপাত্র এ কথা বলেছেন। ‘দ্য লায়ন কিং’কে উদ্ধৃত করেছেন বরিস জনসন। যারা চলে গেছেন, তাদের বিষয়ে তিনি বলেছেন- পরিবর্তন উত্তম। তিনি বাকি সদস্যদের সঙ্গে নিয়েই সামনের কাজ চালিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন।

বরিস জনসনের মুখপাত্র বলেছেন, কয়েক ঘন্টার মধ্যে আর কেউ পদত্যাগ করবেন না বলে মনে করছে না ১০ ডাউনিং স্ট্রিট। কিন্তু বরিস জনসনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে চিঠি সাবমিট করছেন ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দল বা কনজার্ভেটিভ পার্টির সাবেক একজন মন্ত্রী। তিনি হলেন নিক গিব। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফে নিক গিব লিখেছেন, সরকার প্রধানের দ্বিমুখী নীতির কারণে তার নির্বাচনী এলাকা ক্ষুব্ধ। হাউজ অব কমন্সে বরিস জনসন যে বিবৃতি দিয়েছেন তা ভুল ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

লকডাউন পার্টি নিয়ে এ আগে এ সপ্তাহের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কড়া সমালোচনা করেন এমপি অ্যারোন বেল। তিনি বলেছেন, আইন ভঙ্গের মাধ্যমে আস্থা ভঙ্গ করেছেন তিনি। যেভাবে ওই পার্টি করা হয়েছিল, তা প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে সমর্থন করে না। ওই পার্টির বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মিস গ্রে’র করা একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পরে প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে চারপাশ থেকে যেসব কর্মকর্তা ঘিরে রাখেন, তাদের শীর্ষ পর্যায় থেকে সরে যাওয়ায় জনসনের জন্য এক বিদায়ের ঢেউ নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতেই বিদায় নিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন জ্যাক ডোয়েল, ড্যান রোজেনফিল্ড এবং মার্টিন রেনল্ডস। তাদের বিষয়ে বরিস জনসনের অফিসের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, পারস্পরিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তারা বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু প্রধান নীতি নির্ধারক মুনিরা মির্জা এবং পলিসি বিষয়ক উপদেষ্টা ইলিনা নারোজানস্কির বিদায় পরিকল্পিত ছিল না।

কনজার্ভেটিভ দলের ব্যাকবেঞ্চার হিসেবে পরিচিত এমপি হুয়া মেরিম্যান বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে প্রোগ্রামে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী উচিত সবকিছু ঠিকঠাক করা, না হলে চলে যাওয়া। কিন্তু লেভেলিং আপ সেক্রেটারি মাইকেল গভ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে পদে রাখা হবে দেশের জন্য উত্তম। তিনি আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ডাউনিং স্ট্রিটে পরিবর্তন আনতে চেয়েছেন। যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্টাফ বিদায় নিয়েছেন, তারা এরই অংশ হিসেবে বিদায় নিয়েছেন।

বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ্য নয় বলে এক সময় উল্লেখ করেছিলেন মাইকেল গভ। এখন সরকার কোনো বিশৃংখল অবস্থায় থাকার কথা তিনিই প্রত্যাখ্যান করলেন। শুক্রবার মিটিং করেছেন জনসন। তিনি জানেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জিং টাইম। তবে তিনি ডিজনি’র ছবি ‘দ্য লায়ন কিং’-এর রফিকি’কে উদ্ধৃত করে সহকর্মীদের আশ্বস্ত করেন যে, পরিবর্তনটাই উত্তম। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন