বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশজুড়ে বসন্ত উদযাপিত

প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৮ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : ফাল্গুনের প্রথম দিন আগমন ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের। প্রকৃতি তার রূপের পসরা সাজিয়ে বসে নানা রঙে। শীতের জীর্ণতা, দীনতা কাটিয়ে ফুলে ফুলে সাজে চারপাশ। গতকাল (শনিবার) ছিল বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। তাই গতকাল দেশজুড়ে প্রকৃতির এই রঙিন সাজে সেজেছিল গোট দেশ। বিশেষ করে ঢাকার নানা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হয় বাসন্তী র‌্যালি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বুয়েট, ইডেন কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যদের মাথায় মাথায় ছিল ফুলের মুকুট, হাতভর্তি ফুলের মালা আর পরনে বাসন্তী কিংবা হলুদ শাড়ি। পুরুষদের গায়ে ছিল রংবাহারি পাঞ্জাবি। তবে সবচেয়ে সুন্দর সাজ ছিল শিশুদের।
গতকাল সকাল থেকেই ‘আজি এ বসন্তে...’ গান দিয়েই বসন্তবরণ শুরু হয়। এরপর ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় লেগেছে যে প্রাণসহ অনেক গানের ভেলায় বসন্ত যেন ভাসতে থাকে হাসিমুখে। তরুণ প্রাণের এক অপূর্ব মিলনমেলায় পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা চত্বর। বয়সে প্রবীণরাও সাজসজ্জা ও প্রাণের দিক থেকে কিছুক্ষণের জন্য হয়ে উঠেছিলেন তরুণ।
কেউবা আসে মায়ের সাথে কেউবা আবার মেয়ের সাথে। এমনই একজন আছমা ইসলাম (৫০)। পেশায় শিক্ষিকা। তিনি বললেন, আমাদের সময় এতটা ঘটা করে বসন্ত উৎসব হতো না। কিন্তু এখন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বসন্তকে বরণ করা হয়। আমার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মেয়ের সঙ্গেই এখানে এসেছি।
নিজের ছোট্ট শিশুটিকে কোলে নিয়েই মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন নওরিন জাহান। মেয়ে সেতুর বয়স মাত্র তিন বছর। পড়েছে বাসন্তী রঙের জামা। মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েরও বাদ যায়নি মাথার ফুল। বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানে দেখা মেলে ভিনদেশিদেরও। তারাও এসেছেন বাঙালিয়ানা সাজে। গানের পাশাপাশি চলছে নৃত্য অনুষ্ঠানও। নূপুরের ঝংকার জানান দিয়ে যাচ্ছে বসন্তের আগমনের কথা। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা পরিবেশন করে একাধিক নৃত্য। তাদের উপস্থাপনা মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখেন দর্শকরা। গান-নাচের পাশাপাশি আয়োজন করা হয় আবৃত্তির। দেশের প্রথিতযশা আবৃত্তি শিল্পী গোলাম সারোয়ারের আবৃত্তিতে মুগ্ধ সবাই। অনেকেই নিয়ে আসেন প্রেমের কবিতা।
অনুষ্ঠানে নবদম্পতিদেরও দেখা যায়। স্ত্রীদের বাসন্তী আর লাল রঙের শাড়ির সাথে মিলিয়ে স্বামীরা পরে এসেছেন লাল পাঞ্জাবি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড় বাড়তে থাকে।
মেয়েদের সাজ যেন শেষ হতেই চায় না। তবে তা নিয়ে চিন্তাও নেই। বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানে এসে হাতের কাছেই মিলে যাচ্ছে ফুল। তাতে বেড়েছে ফুলের খুচরা বিক্রি। কেউবা বিক্রি করছেন ফুলের তৈরি মাথার ব্যান্ড, কেউবা বিক্রি করছেন হাত আর গলার মালা। দাম নিয়ে মাথাব্যথা নেই ক্রেতা বিক্রেতা কারোরই।
বিক্রেতারা চেষ্টা করছেন দুটি পয়সা আয় করতে। ক্রেতারও বসন্তের শুভক্ষণে এসে কার্পন্যের ধার ধারছেন না। ফুলের তৈরি মাথার ব্যান্ড বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে। কোনো কোনো বিক্রেতা আবার তার দাম হাকাচ্ছেন ১০০ টাকা। হাতের মালার দাম নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। অনেক বিক্রেতা আবার বিক্রি করছেন খুচরো ফুল। কেউবা বিক্রি করছেন গোলাপ, কেউবা আবার আবার বেলী। এসব ফুলের দাম পড়ছে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা।
তবে এবারের বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে দেখা মেলে ছবি তোলার অন্যরকমের এক কারিগরের। সাধারণত কক্সবাজার, পতেঙ্গা এলাকায় ভাড়াটে ফটোগ্রাফারদের দেখা মেলে। যারা পর্যটকদের ছবি তুলে আয়ের উৎস খুঁজে নেন। কিন্তু এবারের বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানে চারুকলা অনুষদের আঙিনায় দেখা মেলে এমনই সব ফটোগ্রাফারদের। বন্ধু বা পরিবারের সবার ছবি তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন অনুষ্ঠানে আগতদের কাছে। কিন্তু এতে খুব একটা আগ্রহী নন বসন্ত বরণকারীরা।
সকাল যখন ১০টা ছুঁই ছুঁই তখন মঞ্চ থেকে ঘোষণা আসে যে, বাসন্তী র‌্যালি হবে। সবাইকে র‌্যালিতে অংশ নেয়ার আহ্বান। সবাই যেন একটু নড়েচড়েই র‌্যালিতে অংশ নেয়ার চেষ্টা করলেন। ১০টায় র‌্যালি শুরু হলো চারুকলা অনুষদ থেকে। শত শত মানুষ। সবার পোশাকই বাসন্তি রঙের ছোঁয়া। মাথায় ফুল। হাতে ফুল। গলায় ফুল। বাসন্তি র‌্যালীটি টিএসসি চত্ত্বর ঘুরে আবার আসে চারুকলা অনুষদেই। সকালের অনুষ্ঠানের এখানেই ইতি। কিন্তু পুরো দিনের অনুষ্ঠানের ইতি নয়। বিকালেও রয়েছে অনুষ্ঠান। এত তাড়াতাড়ি বসন্তবরণ কি শেষ হয়! বিকালের অনুষ্ঠানেও ছিল গান, নাচ, কবিতা, আবৃত্তি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Shohel Sinan ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১০ পিএম says : 0
অনেক ঘুরেছি । কিন্তু গাছে ফুল দেখিনাই। সব ফুল যেন মেয়েদের মাথায় ফুটেছে ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন