বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নির্বিকার পরিবেশ অধিদফতর

বায়ুদূষণ বেড়েছে ১৯ শতাংশ ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন ভালো বাতাস পেয়েছে-ক্যাপস

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকা প্রায়ই ১ নম্বরে জায়গা করে নিচ্ছে। রাজধানীর দূষিত বাতাসে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান যাচাই বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান আট দিনই শীর্ষে ছিল। ২৪দিনই ছিল শীর্ষ ৫ এর মধ্যে। গত ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি টানা চারদিন বায়ুদূষণে বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে ছিল ঢাকা।
তবে বায়ুদূষণ এখন আর শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। গাজীপুর, নারয়ণগঞ্জের বাতাসও এখন চরম অস্বাস্থ্যকর। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলার বাতাসই দূষিত। এর মধ্যে গাজীপুর, ঢাকা এবং নারায়ণগজ্ঞের বাতাস চরম অস্বাস্থ্যকর। ভয়াবহ বায়ুদূষণের কারণে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন এসব শহরের মানুষ। দূষিত বাতাসের ফলে নানা রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, অকালমৃত্যু হচ্ছে অনেকের। বায়ুদূষণের কারণে সারা দেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। তবে রাজধানীবাসীর আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। তবে বায়ুদূষণ রোধে ব্যর্থ পরিবেশ অধিদফতর। উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিলেও পরিবেশ অধিদফরের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বলা যায় এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর নির্বিকার।
পরিবেশবিদরা বলেন, বাতাসে দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি পরিবেশ অধিদফতর। ইটভাটা ও শিল্পকারখানা এবং যানবাহনের কালো ধোঁয়া রোধে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেই পরিবেশ অধিদফতরের। বরং উল্টো আরও পরিবেশ অধিদফতরের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ ইটভাটা এবং পরিবেশ দূষণকারী বিভিন্ন শিল্পকারখানা নির্বিঘ্নে চলছে। উচ্চ আদালত বায়ুদূষণ রোধে বিভিন্ন নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকরে পরিবেশ অধিদফতর উদাসীন। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনও যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ। মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। ফলে রাজধানীর বায়ুদূষণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমান সূচক নিয়ে গবেষণা করেছে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন ভালো বাতাস পেয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে চীনের উহান ও ভারতের নয়াদিল্লিকে পেছনে ফেলে ঢাকা বিশ্বে প্রথম হয়েছে।
২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতর (ডিওই), ঢাকার দুটি সিটি করর্পোরেশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে ছিল বর্জ্য বহনকারী যানবাহন, নির্মাণসামগ্রী ও নির্মাণ কাজের স্থানগুলো ঢেকে রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার রাস্তায় পানি ছিটানো। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি মাঝে মধ্যে ঢাকার কোন কোন এলাকায় পানি ছিটালেও তা খুবই অপ্রতুল। এ ছাড়া ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদফতর ও ভাটার মালিকদের মধ্যে চলে ইঁদুর বেড়াল খেলা। মাঝে মধ্যে ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালিয়ে কিছু জরিমানা করা হয়। তারপর সেই আগের মতোই ইটভাটার কার্যক্রম চলতে থাকে।
১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, বাতাসের মান খারাপ অবস্থায় পৌঁছালে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে গণসতর্কতা জারি করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এমন কোনো সতর্কতা সরকারের পক্ষে এখনো জারি করে হয়নি।
পরিবেশ দূষণরোধে অধিদফতরের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদের ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অধিদফতরের উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, নগরে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটা এবং শিল্প-কারখানার ধোঁয়া। ওই দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে পরিবেশ অধিদফতর। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ঢাকায় বাতাসের মান বেশিরভাগ সময় অস্বাস্থ্যকর থেকে খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় যাচ্ছে। চলতি মাসে (জানুয়ারি) ঢাকার মানুষ একদিনের জন্যও ভালো বাতাস গ্রহণ করতে পারেনি। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের যথাযথ কোনো উদ্যোগ নেই। শুধু পরিবেশ অধিদফতর নয়, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বায়ুদূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে বায়ুদূষণরোধ সম্ভব হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Tuhin ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:৪৪ এএম says : 0
এর জন্যই ঢাকা শহর ছেড়ে দিয়েছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন