বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এবার নৌকার ভরাডুবি

৭ম ধাপের ১৩৭ ইউপি নির্বাচন স্বতন্ত্র প্রার্থী ৮৬টি, আওয়ামী লীগ ৪২টি

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

৭ম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এবার নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। আবারও নৌকাকে পেছনে ফেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি সংখ্যক ইউপিতে জয় পেয়েছেন। ইসি সূত্র জানায়, ৭ম ধাপে ১৩৮টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪২টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ৮৬টি, জাতীয় পার্টি ৩টি (জাপা) ও জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছে। নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে ৪টি ইউপিতে। কয়েকটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১১ জন চেয়ারম্যান হয়েছেন। সঠিক প্রার্থী বাছাই না করা, মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে বলে অভিমত আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের।

নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫ম ও ৭ম ধাপে নৌকার চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি ইউপিতে জয়লাভ করেছেন। আর ৪র্থ ধাপে নৌকার প্রার্থীরা সামান্য এগিয়ে ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়ে। অন্য ধাপের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা বেশি ইউপিতে জয় পেয়েছেন। এবার রংপুরের মিঠাপুকুরের ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি নৌকা পাস করেছে। রাঙামাটিতে ১৭ ইউপিতে ৪টিতে জয় পেয়েছে নৌকা। বাকিগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। কিশোরগঞ্জের ইটনায় ৭ ইউপি ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ৭ ইউপির সবগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছে।

দেবিদ্বারে এমপির কেন্দ্রে নৌকার ভরাডুবি : কুমিল্লার দেবিদ্বারে আওয়ামী লীগের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের কেন্দ্রে নৌকার ভরাডুবি ঘটেছে। গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের ৮ নম্বর কেন্দ্র বনকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী মো. হুমায়ুন কবির পান ১৮২ ভোট। আর বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবদুল হাকিম খান ৬৫৮ ভোট পেয়েছেন। কিছুদিন আগে উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে মাত্র ১৬ ভোট এবং ধানের শীষ পেয়েছিল ৯৮১ ভোট। ইউপি ও উপজেলাতে নিজের পছন্দের প্রার্থী বিজয়ী করতে এমপির নৌকার বিপক্ষে অবস্থান ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নির্বাচনের একদিন আগে অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের দশজন চেয়ারম্যান প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল নৌকার বিরোধিতা করছেন। নিজের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন। ভোট শেষে নৌকার প্রার্থীদের শঙ্কাই সত্যি হয়েছে। ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৪ জন বিজয়ী হয়েছেন নৌকা নিয়ে। ১০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। একটিতে প্রার্থীর মৃত্যুতে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে নৌকার প্রার্থী পেলেন ৯৬ ভোট : খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার চেঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা পেয়েছেন মাত্র ৯৬ ভোট। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনন্দ জয় চাকমা মোটরসাইকেল প্রতীকে এক হাজার ৪৬০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। পানছড়ি উপজেলার চার ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে নৌকার মনোনীত প্রার্থী। বাকি তিন ইউপিতে জয় পেয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী।

মিঠাপুকুরে জামায়াতের জয়, আ. লীগের ভরাডুবি : সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। উপজেলার ১৭ ইউপির মধ্যে ৩ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, দলীয় প্রতীকে উপযুক্ত প্রার্থী দিতে না পারা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের এমন ফল বিপর্যয় হয়েছে। উপজেলার ১৪ ইউপির মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সর্বোচ্চ সাত ইউপিতে জামায়াতের নেতা বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া চার ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং তিনটিতে বিএনপি নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।

দলের এমন ভরাডুবির বিষয়ে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, বিভিন্ন ইউপিতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। তবে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন, তারা তো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া নির্বাচনে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও গাছাড়া ভাব ছিল।

তাহিরপুরে ৭ ইউপির সবক’টিতে নৌকার ভরাডুবি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ইউপি নির্বাচনে দলের বিদ্রোহীদের দাপট ও অযোগ্য ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন দেয়াকেই নৌকার ভরাডুবির বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এলাকায় যোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মনোনয়ন না দিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করে অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে নৌকা প্রতীক দেয়ায় এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে একসঙ্গে নৌকার এমন শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। এ উপজেলার ইউনিয়নগুলোর ইউপি নির্বাচনে এর পূর্বে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের এমন ভরাডুবির ঘটনা ঘটেনি। এবারই প্রথম উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের সব ক’টিতেই নৌকার প্রার্থীদের এক সঙ্গে ভরাডুবির ঘটনা ঘটেছে। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, দলের বিদ্রোহীদের দাপট ও অযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন বাণিজ্য করে নৌকা প্রতীক দেয়ায় প্রার্থীদের এমন পরাজয়ের ঘটনা ঘটেছে।

রাঙামাটিতে ১৭ ইউপিতে ৪টি নৌকা : সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে রাঙামাটির তিন উপজেলার ১৭টি ইউপির মাত্র চারটিতে জয় পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে পাঁচজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এর আগে ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে রাঙামাটির দুই উপজেলায় ১০ ইউপির একটিতে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
এর আগে গত ৩১ জনুয়ারি ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১১৭টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ৯৫টি, জাতীয় পার্টি ৩টি (জাপা) ও জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি দেশের ৭০৭টি ইউপিতে পঞ্চম ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ৬৯২টি ইউপিতে বিজয়ীদের মধ্যে স্বতন্ত্র ৩৪৬ জন, আওয়ামী লীগ মনোনীত ৩৩১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ২ জন, জাতীয় পার্টি ২ জন ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১ জন প্রার্থী রয়েছেন।

গত বছর ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে দেশের ৮৩৬টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৭৯৬টি ইউপির ফলাফলের তথ্য জানায় ইসি। এতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত ৩৯৬ জন প্রার্থী জয় পান। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন ৩৯০ ইউপিতে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন ২, জাকের পার্টি ১, জাতীয় পার্টি (জাপা) ৬ এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (জেপি) ১ জন জয় পান।

গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ৫২৫টিতে, অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছে ৪৪৬টিতে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১৭টি, ১টি করে ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) মনোনীত প্রার্থীরা।

গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮৩৪টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ৪৮৬টিতে। আর ৩৩০টিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ১০টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা ৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পান। জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি), খেলাফত মজলিস ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১টি করে ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছে।
গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০৪টি ইউপির মধ্যে ১৪৮টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয় পান। স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পান ৪৯ জন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ১ ইউপিতে, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও জাতীয় পার্টি (জাপা) ৩টি করে ইউপিতে জয় পায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন