শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

প্রবৃত্তির অনুসরণ ও গোনাহের কাজ অন্তর নষ্ট করে

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

প্রবৃত্তির (নফসের) অনুসরণ ও গোনাহের কাজ অন্তরকে নষ্ট করে এবং গোনাহের কাজ তা ধ্বংস ও সর্বনাশের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার প্রভাব এবং এর অনুসরণ করা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে খেতাব করে ইরশাদ করেছেন : ‘(হে রাসূল!) তুমি কি তাকে লক্ষ করেছ, যে তার খেয়াল খুশিকে নিজের মা’বুদ (উপাস্য) বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহপাক জেনেশুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং কর্ণ ও অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর ওপর রেখেছেন আবরণ। সুতরাং আল্লাহর পর কে তাকে সুপথের নির্দেশ দেবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ (সূরা জাসিয়া : ২৩)।

এই আয়াতের অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে বোঝা যায় যে, প্রবৃত্তির অনুসরণ কিভাবে অন্তরের ওপর সিলমোহরের কারণ হয়ে থাকে। তাই, প্রিয় পাঠক! মনোযোগ সহকারে লক্ষ করুন, চিন্তা ও গবেষণা করুন যে, কিভাবে এই সিলমোহরের প্রভাব ও ছাপ অন্তরের সুমস্থন পর্দাকে কলুষিত করে তোলে, শ্রবণেন্দ্রিয়ের সক্রিয়তাকে বিনষ্ট করে ও দৃষ্টিশক্তির আচরণ কেমন করে শরীরের সকল অংশকে সংক্রমিত করে তোলে। এই সংক্রমণের জাল খুবই বিস্তৃত ও মজবুত। এর পরিবেষ্টনীকে ছেদ করা বড়ই কষ্টকর ব্যাপার।

সুতরাং যে ব্যক্তি অন্তরের পরিশুদ্ধি, সজীবতা ও পরিচ্ছন্নতা কামনা করে তার উচিত সাবধানতা অবলম্বন করা এবং প্রবৃত্তির অনুকরণের মাধ্যমে অন্তরকে রোগাক্রান্ত করা হতে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা। অন্যথায় অন্তর ধ্বংসের কাছে পৌঁছে যাবে এতে কোনোই সন্দেহ নেই। এতদ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : কখনো না, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের ওপর মরিচারূপে জমে গেছে। (সূরা মুতাফফিফীন : ১৪)।

এই আয়াতেও আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সতর্ক করে বলেছেন যে, গোনাহ ও পাপকর্ম অন্তরকে অন্ধ ও পথভ্রষ্ট করে দেয়। তাই, গোনাহ থেকে সাবধান হওয়া নেহায়েত দরকার। কারণ এর পরিণতি ও শেষ ফল খুবই মারাত্মক ও ভয়াবহ। জনৈক চারণ কবি কত সুন্দরই না বলেছেন : ‘গোনাহ বা পাপ অন্তরগুলোকে মৃত বস্তুতে পরিণত করতে আমি দেখেছি এবং অন্তরগুলোকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও আশক্তির উত্তরাধিকারী করে দিতে প্রত্যক্ষ করেছি। সুতরাং গোনাহ পরিত্যাগ করা হলো অন্তরের প্রাণশক্তি। অতএব গোনাহের বিরোধিতাকে বেছে নেয়া তোমার জন্য উত্তম ব্যবস্থা’।

হযরত হুযায়ফা বিন আল ইয়ামান (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেছেন : ‘ফিতনাসমূহ (অশান্তি, অস্বস্তি, পাপাচার) মানুষের অন্তরসমূহে এমনভাবে ভিড় জমাবে, যেভাবে মাদুর, বিছানা বা চাটাই বোনার খেজুর পাতাগুলো একটির পর একটি সংলগ্ন হয়ে থাকে। সুতরাং যে অন্তর উক্ত ফিতনার মধ্যে জড়িত হবে, সে ফিতনা তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো নকশা বা দাগ সৃষ্টি করে দিবে। আর সে অন্তর উক্ত ফিতনাকে প্রত্যাখ্যান করবে (এবং তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করবে) তবে তার অন্তরের মধ্যে একটি সাফা (নূরানী) দাগ লেগে যাবে।

এমনিভাবে (কালো ও সাদা দাগ পড়ে অন্তরের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মানুষ) দুই অন্তরের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যাবে। এর একটি হবে শ্বেতপাথরের মতো (ধবধবে) সাদা। যত দিন আকাশ ও ভূমণ্ডল প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তত দিন (অর্থাৎ আজীবন) কোনো ফিতনা তার ক্ষতি করতে পারবে না। আর অপরটি হবে কালিমা মিশ্রিত অত্যন্ত কালো উল্টানো কলসীর ন্যায় যে, (জ্ঞান, বিবেক বুদ্ধি হতে খালি হবে) সে কোনো ভালো কথাকে বুঝবে না। আর না কোনো মন্দ কথাকে মন্দ জ্ঞান করবে। কিন্তু সে উহাই বুঝবে যা তার অন্তরে দৃঢ় হয়ে গেছে। (অর্থাৎ সে ভালো ও মন্দের পার্থক্যকরণ ছাড়া এবং চিন্তা-ভাবনা না করেই নিজ প্রবৃত্তির আনুগত্য করবে)’। (সহীহ মুসলিম : পৃ: ১৪৪)।

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় শামসুল উলামা, আল্লামা সফী উল্লাহ (রহ.) যা বলেছেন, তা খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন : ‘গোনাহ অন্তরকে সব দিক থেকে পরিবেষ্টন করে নেয়। কোনো ব্যক্তি যখন তার প্রবৃত্তি ও কামনার অনুসরণ করে এবং গোনাহের কাজে পরিলিপ্ত হয়, তার অন্তরে প্রতিটি গোনাহের পরিবর্তে অন্ধকার প্রবেশ করে এবং তা অন্ধকারময় করে তোলে।

আর যখন সে গোনাহের কাজে ধারাবাহিকভাবে লেগে থাকে এবং তাওবাহ করতে ভুলে যায়। এভাবে তার অন্তরে ক্রমাগতভাবে অন্ধকারের সৃষ্টি হতে থাকে এবং ক্রমশ তা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং একপর্যায়ে তাকে হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তোলে। আর তার দুর্ভাগ্য আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং সে ধ্বংসের গহ্বরে এমনভাবে পতিত হয় যে, সে তা বুঝতেও পারে না। এভাবে অন্তরের অন্ধকার আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে পাপী ব্যক্তির মুখ পরিচিত হয়ে উঠে এবং তা কালো হয়ে যায় এবং তা প্রত্যেকেই দেখতে পায়।’ সুতরাং এমনটি হওয়া কারো কাম্য হওয়া উচিত নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
জব্বার ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৪৮ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের অন্তরকে হেফাজত করুক
Total Reply(0)
উজ্জল ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:৩৩ এএম says : 0
বহু মানুষ এমন রয়েছে, যারা অন্যদের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত নামাজ পড়ে, দ্বিনদার, ধার্মিক, আলেম কিংবা আল্লাহওয়ালা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। প্রকাশ্যে তাকে পাপ কাজ করতে দেখা যায় না। কিন্তু গোপনে গোপনে তিনি নানা ধরনের গোনাহের কাজে লিপ্ত। অনেকে তো প্রকাশ্যে ভালো মানুষ হলেও গোপনে কবিরা গোনাহ করে। এটি একদিকে মুনাফেকি, অন্যদিকে ধীরে ধীরে তার আমল ও ইবাদত নষ্ট করে দেয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন করো, যারা পাপ করে, অচিরেই তাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হবে। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২০)
Total Reply(0)
রায়হান ইসলাম ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:৩৪ এএম says : 0
প্রকাশ্য গোনাহের চেয়ে গোপনে করা গোনাহ বেশি ভয়াবহ। কেননা যখন কেউ গোপনে গোনাহ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় বিদায় নিয়ে নেয়। ক্রমাগত সে ধ্বংস ও অধঃপতনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অবস্থা কখনো এত ভয়ানক হয় যে তার ঈমান পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায় এবং ঈমানহীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
Total Reply(0)
ইলিয়াস ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:৩৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা যেসব কাজ হারাম করেছেন, তা থেকে বেঁচে থাকা একজন মুমিনের একান্ত কর্তব্য। পাহাড়সম আমল করার পর কেউ যদি একান্ত গোপনে হারাম কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।
Total Reply(0)
তুষার আহমেদ ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:৩৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এমন বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন, যাতে সে সুখে-দুঃখে, উন্নতি-অবনতি সর্বাবস্থায় সমান উৎসাহ উদ্দীপনায় ইবাদত করার হিম্মত পায়। যেন কোনোভাবেই ইবাদত বন্দেগি নষ্ট হয়ে না যায়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন