মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় সাবেক স্বামীকে পুনরায় বিয়ে করতে না চাওয়ায় তার ছুড়ে দেওয়া এসিডে ঝলছে যাওয়ার দীর্ঘ ১২ দিন চিকিৎসা পর জীবনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষ গার্মেন্টস কর্মী সাথী আক্তার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
গার্মেন্টস কর্মী সাথী আক্তার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার বিষয়টি বৃহস্প্রতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিশ্চিত করেছে সাথীর বড় ভাই সোহেল হোসেন বলেন, হাসপাতাল থেকে দুপুরের দিকে সাথীর মরদেহ নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে তারা।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি মা ও বোনকে সঙ্গে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো গামের্ন্টস কর্মী সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কাটাখালী ফেরাজীপাড়া এলাকার আব্দুস সাত্তারের মেয়ে সাথী আক্তার(১৯)। ঘরের ভাঙ্গা জানালা দিয়ে মাঝরাতে গার্মেন্টস কর্মীর সাবেক স্বামী মানিকগঞ্জের বেতুলিয়া গ্রামের নিজামুদ্দিনের ছেলে নাঈম হোসেন (৩০) এসিডে ছুড়ে মারে। এতে সাথীর মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে, সাথীর ছোট বোন ইতি আক্তার (৮) ও মা মোছাঃ জুলেখা বেগম এর শরীরের বিভিন্নস্থানে ঝলসে যায়। সাথী সহ তার পরিবারের লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন এসে সাথীকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। পরবর্তীতে সাথীর অবস্থা অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। সাথী অ্যাসিডে ঝলসানো মুখ ও শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ১২ দিন চিকিৎসাধীন ছিল।
ঘটনার পর ১ এসিড নিক্ষেপ মামলার আসামিকে গ্রেফতার করে র্যাব ৪। ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে র্যাব ৪ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির ম্যাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বিগত আড়াই বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ নাঈম মল্লিকের সাথে সাথী আক্তার (২৫) এর বিবাহ হয়। বিয়ের পর হতে সাথী বুঝতে পারে যে নাঈম প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তখন থেকেই ভিকটিম সাথী আক্তার নাঈমকে ভালভাবে চলাফেরা করার জন্য বলে এবং অনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা প্রদান করে। এর ফলে নাঈম ক্ষিপ্ত হয়ে সাথীর সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে এবং সাথীকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে। গ্রেফতারকৃত আসামী সাথীর ভরণ পোষন বন্ধ করে দেয় যার প্রেক্ষিতে সাথী বাবার বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের মুরুব্বিদের মাধ্যমে একাধিকবার সালিশের আয়োজন করে মিমাংসা করে দেওয়া হলে তারা আবার সংসার শুরু করে। কিন্তু নাঈম মরুব্বিদের দেওয়া শর্ত না মেনে সাথীর সাথে পূর্বের মত একই রকম আচরণ করতে থাকে। এর ফলে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সাথী গত ১০ সেপ্টেম্বর নাঈমকে তালাক নোটিশ প্রেরণ করে। তালাক নোটিশ পাওয়ার পরপরই আসামী নাঈম ক্ষিপ্ত হয়ে সাথীকে বিভিন্ন ভাবে প্রাণনাশসহ নানান রকম ভয় ভীত ও হুমকি প্রদান করতে থাকে। একপর্যায়ে গত ২৯ জানুয়ারি রাতে আসামী নাঈম ভিকটিম সাথীর বাবার বাড়িতে গিয়ে সাথীর শয়ন কক্ষের জানালা দিয়ে এসিড ছুড়ে মারে। নাঈমের ছোড়া এসিড সাথীর মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও সাথীর ছোট বোন এবং মা এর শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে। নাঈম এই ঘটনার পর দৌড়ে পালানোর সময় ভিকটিম সাথীর মা জুলেখা বেগম জালানা দিয়ে নাঈমকে দৌড়ে চলে যেতে দেখে। ঘটনার পরপরই আসামী নাঈম আত্মগোপনে চলে যায়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার এড়াতে সে ছদ্দবেশে সময়ে সময়ে স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। প্রচন্ড শীত থাকায় শীতের পোশাক পরে মাথা ও মুখমন্ডল ঢেকে পরিচয় গোপন করার কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। মানিকগঞ্জ সদর থানাধীন সাকরাইল বাজার এলাকায় র্যাব ৪ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে।
সাটুরিয়া থানার ওসি আশরাফুল আলম জানায়, ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় সাথীর শরীরে এসিড ছুড়ে মারে নাঈম। এ ঘটনায় সাটুরিয়া থানায় এসিড নিক্ষেপের একটি মামলা দায়ের হয়েছে। গার্মেন্টস কর্মী সাথী মারা যাওয়ায় এখন এ মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তর হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন