মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডোপ টেস্ট প্রার্থীদের ভোগান্তি

রাজধানীতে নির্ধারণ নমুনা পরীক্ষায় মাত্র ৬ হাসপাতাল পর্যাপ্ত নয়

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

পেশাদার চালকদের হতে হবে মাদকমুক্ত। মাদকাসক্ত হলে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন না। এজন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নে ডোপ টেস্ট সনদ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। সনদ ছাড়া চালকরা নতুন লাইসেন্স ও পুরোনো লাইসেন্স নবায়ন করতে পারবেন না। এ টেস্টের মাধ্যমে যারা মাদকাসক্ত নন কেবল তারাই পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে এই ডোপ টেস্টের শুরুতেই দেখা দিয়েছে ভোগান্তি। নমুনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে মাত্র ৬টি। এসব হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে চাহিদার তুলনায় কম নমুনা। এমন অবস্থায় অনেক চালক লাইসেন্স নবায়ন ও ইস্যুতে আগ্রহী হচ্ছেন না। চালকরা নির্ধারিত হাসপাতালে গিয়ে ডোপ টেস্ট করতে পড়ছেন বিপাকে।

গতকাল সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অনেক আগে থেকেই ডোপ টেস্টের কথা বলে আসছি। গাড়ি চালানোর আগে চালকদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে এটা চালু করতে যাচ্ছি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা রয়েছে। এবার গাড়ির চালকদেরও এর আওতায় নিয়ে আসছি। যখন বিআরটিএর লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে তখন ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। আমরা শুধু লাইসেন্স দেয়ার সময়ই নয়, গাড়ি যখন চালাবে তখন ডোপ টেস্ট করে চালাবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।
বিআরটিএ বলছে, গত ৩০ জানুয়ারি থেকে বিষয়টি কার্যকর করেছি। পেশাদার চালকদের জন্য ডোপ টেস্ট সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রিপোর্টে মাদক সেবনের আলামত পাওয়া গেলে লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা যাবে না।

জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিআরটিএ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। গত ৩০ জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। পেশাদার মোটরযান চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের সময় আবেদনপত্রের সঙ্গে সরকারি হাসপাতাল কর্তৃক সম্পাদিত ডোপ টেস্ট রিপোর্ট বা সনদ জমা দিতে হবে। কেউ এতে পজিটিভ হলে বা চিকিৎসকের কোনও বিরূপ মন্তব্য থাকলে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা হবে না। দেশে সড়কে বিভিন্ন দুর্ঘটনার জন্য ৬৯ শতাংশ চালকের মাদকাসক্তির জন্য দায়ী। এই প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃপক্ষকে চালকদের মাদক পরীক্ষার আওতায় আনার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা দেয়ার প্রায় দেড় বছর পর বিআরটিএ এটি বাস্তবায়ন শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে বিআরটিএর লাইসেন্সধারী চালক রয়েছেন অন্তত ২০ লাখ।

সারাদেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করানো যাবে। এ জন্য ৯০০ টাকার মতো খরচ হবে। হাসপাতালগুলোতে দিনে ৫০ জনের বেশি নমুনা নেয়া হচ্ছে না। ফলে ছয়টি হাসপাতাল মিলিয়ে পরীক্ষা করা যাবে মাত্র ৩০০ জনের। এর মধ্যে কয়েকটি হাসপাতাল এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয় বলেও জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্ধারিত রাজধানীর হাসপাতালগুলো হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।

সামিউল নামের এক লাইসেন্স আবেদনকারী বলেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য আমার লাইসেন্স করা দরকার। কিন্তু লাইসেন্স করতে হলে ডোপ টেস্ট করাতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে ডোপ টেস্ট করাতে পারিনি। এখন রিপোর্ট ছাড়া কিভাবে লাইসেন্স করবো বুঝতে পারছি না। হাসপাতালের লোকজন বলছে অন্যদিন এসে নমুনা দিতে। তারা নির্ধারিত সংখ্যক লোকের বেশি নমুনা সংগ্রহ করছে না। আবার অনেক হাসপাতালে এখনো নমুনা পরীক্ষাই চালু হয়নি।

আরেক প্রার্থী তারেক বলেন, দিনে ৫০ জনের বেশি জনের ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা নেয়া হচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে ঘুরছি নমুনা দেয়ার জন্য কিন্তু দিতে পারছি না। হাসপাতাল নির্ধারিত হওয়ার কারণে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে চালকদের। টেস্ট করার জন্য হাসপাতালের সংখ্যা না বাড়লে এ ভোগান্তি আরো বাড়বে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, মাদকমুক্ত পেশাদার চালক পেতে ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নেয়া হয়। সব সার্কেল অফিসে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ফরম নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ডোপ টেস্ট ছাড়া কেউ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বা নবায়ন করতে পারবে না। হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। যেহেতু নতুন এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেজন্য প্রথমে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবে দ্রুত এটি সমাধান হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পেশাদার চালকদের লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নেয়ায় ধন্যবাদ জানাই। ডোপ টেস্টের কথা আমরা অনেক আগেই বলে এসেছি। তবে শুধু ডোপ টেস্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। পরিবহন শ্রমিকরা যেন মাদক কোথাও থেকে সংগ্রহ না করতে পারে সে ব্যবস্থাও করা দরকার। এ ছাড়া অপেশাদার চালকদেরও ডোপ টেস্টের আওতায় আনা প্রয়েজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন