বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভাঙন ঝুঁকিতে বসতবাড়ি

ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট যানবাহন রাজবাড়ীতে অপরিকল্পিত খাল খননে দেবে গেছে ব্রিজ

রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবোগ্রাম ইউনিয়নে অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করায় অন্তত ৮টি গ্রামের সংযোগ সড়কে থাকা পিয়ার আলীর মোড় সড়কে তেনাপচা এলাকায় দেবে গেছে একটি ব্রিজ। এই ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট ছোট যানবাহন। এছাড়াও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে শত শত বসতবাড়ি কবরস্থান, মসজিদ, বিদ্যালয়সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ব্রিজটি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট সব দফতরে পত্র প্রেরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলার দেবোগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামের ছয়েদ আলী মোল্লা ও আছিয়া দম্পতি। জাল বুনে ও পদ্মা নদীতে মাছ ধরে প্রতিদিন আয় করেন ২ থেকে ৩ শত টাকা। যা দিয়ে চলে তাদের সংসার। থাকেন তেনাপচা খালের সাথেই ৪ শতাংশ জমির উপর ছোট্ট একটি টিনের ঘরে। খালটি দুই বছর আগে খনন হওয়ার পর থেকেই দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙতে ভাঙতে বিলিন হয়েছে তার দুই শতাংশ জমি। এখন বাকি জমিটুকু আগামী বর্ষা মৌসুমে টিকবে কিনা সেই চিন্তায় দিন কাটে এই দম্পত্তির।
শুধু ছয়েদ আলী মোল্লা ও আছিয়া দম্পতি নয়, তাদের মতো আরো শত শত দম্পতির একই অবস্থা। অপরিকল্পিতভাবে খাল খননে রক্ষা পায়নি জেলা শহরের সাথে উপজেলা শহরের সংযোগ তেনাপচা ব্রিজটি। ভেঙেছে ব্রিজের রেলিং, মাঝ বরাবর দেবে যাওয়ায় ব্রিজটি পরিত্যক্ষ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ভারী যানবাহন চলাচলে।
গতকাল রোববার সকালে তেনাপচা গ্রামের ওই ব্রিজটিতে গিয়ে দেখা যায়, মাঝ বরাবর দেবে কাত হয়ে আছে। তারপরও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে যাত্রী বোঝাই করে। এসময় অটো চালক হারুন বলেন, তিনমাস আগে ব্রিজে ফাটল ধরেছে আর গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্রিজটি মাঝ বরাবর দেবে গেলেও এখনও মেরামতে কোন পদক্ষেপ নেই কারো। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে পেটের দায়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তেনাপচা গ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল আম্মেদ বলেন, দেবোগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর পর্যন্ত ভেকু দিয়ে খনন কাজ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা কোন পরিকল্পনা ছাড়াই এই খনন কাজ করেছে। যে কারণে ব্রিজ দেবে গেছে, ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে বহু স্থাপনা। তাছাড়া মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু সাঈদ মন্ডল জানান, ২০০২/৩ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এই ব্রিজটি তৈরি করেছিলেন যা আগামী ৫০ বছরেও নষ্ট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খাল খননের ফলে দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকার কয়েক কিলোমিটার খালের পাড় ধসে পড়েছে। সেই সাথে পিয়ার আলী মোড় এলাকার খালের ওপর নির্মিত ব্রিজের নিচের মাটি সড়ে চারপাশে ফাটল দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ীর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, মাটি কাটার জন্য নয়, ব্রিজের ত্রুটির কারণেই দেবে গেছে। তাছাড়া আমরা গত বছরের অক্টোবরে পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট দফতরে একটি পত্র প্রেরণ করেছিলাম। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক খান জানান, ব্রিজ দেবে যাওয়ার খবরে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে পত্র প্রেরণ করেছি। পাশাপাশি উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আমার সাথে ছিলেন তাকেও বলা হয়েছে ওই স্থানে একটি বেইলি ব্রিজ দেওয়ার জন্য।
আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল আমিন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ছোট খাল সংস্কারের আওতায় গোয়ালন্দ উপজেলার দেবোগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকায় ভেকু দিয়ে খনন কাজ করা হয়। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন