শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কার কথা সঠিক?

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশে অসংখ্য মেগা প্রকল্প হচ্ছে; কিন্তু নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের অর্থনীতিবিদদের বিভিন্ন সময়ের জরিপ, গবেষণা প্রতিবেদনে সে চিত্র উঠে এসেছে। দেশে মাথাপিছু আয় ২৫৯১ মার্কিন ডলার (২ লাখ ২৫ হাজারের বেশি) হয়েছে। এ অবস্থায় মন্ত্রীরা খেয়ালখুশি মতো উন্নয়ন, মেগা প্রকল্প আর মাথাপিছু আয়ের সাফল্যের ডঙ্কা বাজিয়েই চলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে দেশের প্রকৃত চিত্র কেমন?

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রায়ই বলে থাকেন, ‘সরকারের টাকার কোনো অভাব নেই। সরকার কোথাও টাকা খুঁজছে না’। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কে এম আবদুল মোমেন জার্মানির মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমরা অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নিচ্ছি। তবে মানুষ আরো জীবনমান উন্নত করতে চায়; কিন্তু আমাদের টাকা নেই, প্রযুক্তি নেই। উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু দেশগুলোকে বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি’।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রায়ই দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারের অর্থের সঙ্কট নেই। যদি আপনারা কোথাও কোনো ব্যাংকে গিয়ে টাকা না পান, যদি এলসি লেটার অব ক্রেডিট) সেটেলমেন্ট করতে না পারেন, যদি পেমেন্ট না করতে পারেন, তবে আমাকে এসে বলবেন’। গত বছর টিকা ক্রয় সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তিনি বলেছিলেন, টিকা কিনতে টাকার অভাব হবে না। গত ১২ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাজারে দাম ওঠা-নামা করলেও ডলারের রেট খুব বেশি বাড়ার সম্ভবনা নেই। যেহেতু রফতানি বাড়ছে, আমদানিও বাড়ছে। আমদানির জন্য সেখানে ফিন্যান্সিং করা লাগে। তাই মার্কেট ওঠা-নামা করবেই। সেটা অনেক বেশি ওঠা-নামা দেখতে পারব না। আমাদের এখানে ডলারের রেট বেশি বাড়ার সম্ভবনা নেই।’ অথচ ডলারের দাম গত এক মাসে বাংলাদেশে বেড়ে গেছে।

অন্যদিকে গত শনিবার জার্মানির মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে উন্নয়ন করছে। এখানে মানুষের মধ্যে উন্নত জীবনের আকাক্সক্ষা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের জীবনমান উন্নয়নে দরকার আরো অবকাঠামো উন্নয়ন। তবে, আমাদের কাছে অনেক টাকা নেই। আমাদের প্রযুক্তিও নেই। সে কারণে আমরা জনগণের চাহিদা পূরণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে জনগণের প্রত্যাশা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। সে কারণে এখানে আর্থিক তহবিলও প্রয়োজন। উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে আমাদেরও আরো তহবিল দরকার। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহু শর্তের বেড়াজালে এসব ঋণ আসে, যা সামাল দেয়া খুবই কঠিন। আজ আমাদের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আর এডিবি। তবে উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনেক উচ্চগতির হওয়ায় এখন আমরা অন্যদের থেকেও কিছু অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছি। জনগণের জীবনমান উন্নয়নের প্রয়োজনে আমরা আরো বিনিয়োগ প্রত্যাশা করি। সে জন্য আমরা কী করতে পারি। কোনো পথ খোলা আছে কী না। বাংলাদেশের পাশে অনেক দেশই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। বিশেষ করে জাপান বড় আকারে বিনিয়োগ করেছে। ভারতও আমাদের ঋণ দিয়েছে। আমি এই দুই দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আরো বেশি অবকাঠামো উন্নয়নে আমাদের আরো বেশি তহবিল প্রয়োজন। আপনারা বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগ করলে আমরা মানুষের সমস্যা মেটাতে পারি। চীন টাকার ঝুঁড়ি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। চীন যেভাবে সহায়তা দিচ্ছে আলোচনা অংশ নেয়া দেশগুলোর প্রতিনিধিদের তিনি সেভাবে বাংলাদেশে সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানান।

দেশের অর্থনীতির চালচিত্র এবং দেশের মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী কার্যত বিপরীতমুখি বক্তব্য দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো কার কথা সঠিক! মানুষ কার কথা বিশ্বাস করবে?
মিউনিখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেনের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে নেটিজেনেরা নানান মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ মন্ত্রীদের স্ববিরোধী বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। কেউ মন্ত্রীদের লাগামহীন কথাবার্তা না বলার পরামর্শ দেন। তবে নেটিজেনদের বেশির ভাগই মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জার্মানির ওই সেমিনারে দেশের সঠিক চিত্র তুলে ধরেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাইরাল হওয়া ওই বক্তব্য শেষে উপস্থাপককে বলতে শোনা যায় ‘আপনি কার উদ্দেশে এই বক্তব্য দিলেন?’ সেখানে মঞ্চে বসা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে বেশ বিব্রত ও উদগ্রীব দেখা যায়।

এদিকে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন যেভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটগুলো তেমনটা দিতে পারবে কি-না; বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের এমন প্রশ্নের জবাবে কড়া সুরে একথা বলেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এসময় তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের অনেক দেশের ওপর আমরা এখন দেনার বোঝা চাপিয়ে দিতে দেখছি। যে এয়ারপোর্টে একটি বিমানও অবতরণ করবে না, বা যে বন্দরে একটি জাহাজও আসবে না, বাণিজ্যিকভাবেও টেকসই নয় এমন সব প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা দেশগুলোকেই নিজ স্বার্থে সচেতন থাকতে হবে। কারণ অটেকসই অবকাঠামো প্রকল্পের প্রভাব সুদুরপ্রসারী, তার হাত ধরে সৃষ্টি হয় দেনার সম্পদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৩৭ এএম says : 0
কিছু দিন আগে আমি আমার মাথা পিছু আয় এবং আমার পরিবারের সদস্যদের আয় গুলি এই বসর আমাদের দেওয়ার জন্য দৈনিক ইনকিলাব এর মাধ্যমে বলেছিলাম,আমার পরিবারে 15জন সদস্য,প্রতি জন=2591 ডলার 15×2591=38865,000ডলার প্রতি ডলার=86 টাকা=38865×86=3342390,000টাকা হয় এর অর্ধেক আমাদের দিলে আরামে পূরে বসর খেতে পারি,কিন্তু উঃ পাই না,এখন আপনাদের কলমে যাহা লিখছেন দেখা যাচ্ছে আসলেই....................... কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রী সত্যি সত্য বলেছেন মনে হয়,কিন্তু যদি অর্থ মন্ত্রীর কথা সত্য হয় আমার অর্ধেক দরকার নেই,অন্তত তিন ভাগের এক ভাগ দিন,তাতেই আমরা পূরে এক বসর খেতে পারমু এবং ঘর বাড়ি ও করতে পারমু,বাকী দুই ভাগের চালায় দেশের উন্নয়ন করবেন,দেশ হয়ে যাবে সোনার বাংলাদেশ থেকে কোহিনুর বাংলাদেশ নয় তো জায়গায় ডায়মন্ড বাংলাদেশ।
Total Reply(0)
Shibly Mahmood ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৪৭ এএম says : 0
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা নেই। বাজারে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি। টাকা ওয়ালাদের কোন চিন্তা নেই। জনগণের প্রতি দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। রাজনৈতিক দেশপ্রেমিক মানবপ্রেমিক নেতৃত্বের বিকল্প কিছু নেই তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প কিছু নেই। জনগণের কল্যাণে কাজ করলে জনগণ অবশ্যই তাদের চাইবেন।
Total Reply(0)
নিয়ামুল ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:০১ এএম says : 0
সত্য বললে সমস্যায় পরতে পারি তাই মন্ত্রীরা যা বলছেন সেটা ঠিক
Total Reply(0)
বিদ্যুৎ মিয়া ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:০২ এএম says : 0
মন্ত্রীরা ভুল এমন কথা অন্তত বর্তমান সময় বলার সুযোগ আদৌ আছে?
Total Reply(0)
লিয়াকত আলী ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:০৪ এএম says : 0
দায়িত্বশীলদের কথা বলার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া উচিত
Total Reply(0)
জব্বার ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:০৫ এএম says : 0
অর্থের বিষয় হলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সাহেবের কথাই সঠিক
Total Reply(0)
হামিদ,হামিম ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০০ এএম says : 0
আমি মনে করি দেশের প্রত্যেকটা চেয়ারে অযোগ্যরা বসা,ভারত কেন দিবে তারাতো চিনের ধিকে থাকিয়ে আছে,কিন্তু চিন তো ভারতের চেয়েও ভয়ংকর দেশকো এমন ভাবে ফেলে রেখে যাবে এসরকার যা বাংলাদেশের জন্য খুব কঠিন হবে,দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে, যারা দুর্নীতি বন্ধ করতে চাই তাদেরকে ঘুম করার পরিকল্পনা করা হয়েছে
Total Reply(0)
shahadat ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:৩৭ এএম says : 0
আমি অনুমান করি উভয়ই সঠিক কারণ, আপনার যদি উন্নয়নের প্রয়োজন হয় তবে আপনাকে অবশ্যই সীমাহীন অর্থের প্রয়োজন হবে, আমি বলতে চাইছি সরকার দরিদ্র জনগণের জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে যাতে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বহন করতে সক্ষম হয় যাতে তারা তাদের পরিবার পরিচালনা করতে প্রতিটি ক্ষেত্রে খুশি হয়। আরামদায়ক ভাবে জীবনযাপন করতে পারে তাহলে, তাদের কোনো অভিযোগ নেই অশান্তি ও নেই সরকারের বিরুদ্ধে!!
Total Reply(0)
Saytan ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:৪৩ এএম says : 0
False news ,,,,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন