শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

মস্কোয় ইমরান খানের সাথে পুতিনের বৈঠক

ইউক্রেন সঙ্কট সত্ত্বেও উষ্ণ অভ্যর্থনা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে দু’দিনের সরকারি সফরে গত বুধবার মস্কোয় পৌঁছালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে লাল গালিচায় স্বাগত জানানো হয়। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী ও তার প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগর মরগুলভ এবং পাকিস্তান দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনারও দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফেডারেল মন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি, ফাওয়াদ চৌধুরী, আসাদ উমর, হাম্মাদ আজহার, বাণিজ্য উপদেষ্টা রাজ্জাক দাউদ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুইদ ইউসুফ এবং জাতীয় পরিষদের সদস্য আমির মাহমুদ কিয়ানিসহ একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল রয়েছেন।

দু’দশকেরও বেশি সময়ে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীর এটাই প্রথম সফর। এই সফর বহুমুখী পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্ককে আরো গভীর করতে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ইউক্রেনে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে অতি ব্যস্ত সময় পার করলেও সফররত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকে মিলিত হলেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, তাদের আলোচনায় স্থান পায় ইসলামোফোবিয়া, আফগানিস্তান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতিসহ প্রধান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু।

প্রধানমন্ত্রীর এ সফর বহুমুখী পাকিস্তান-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো গভীর করতে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। গত দুই দশকে পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্ক চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি করেছে। দু’পক্ষের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের পাশাপাশি কর্ম পর্যায়েও নিয়মিত মতবিনিময় হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট, ১৪ সেপ্টেম্বর এবং গত ১৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে তিনবার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট পুতিনকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে, রাশিয়ার রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রাক্তন শত্রæদের মধ্যে সম্পর্কের একটি নতুন যুগের সূচনা করে- বিশেষ করে গত বছর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর আকস্মিক প্রত্যাহারের পর।
‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এতটা ভালো ছিল না। যদিও সামনে একটি দীর্ঘ পথ রয়েছে, রাশিয়া এবং পাকিস্তান এত অল্প সময়ের মধ্যে যে অগ্রগতি করেছে তা চিত্তাকর্ষক’- বলেছেন মস্কো-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু কোরিবকো।

কোরিবকো ইমেল মাধ্যমে বলেন, ‘এটি বিশেষভাবে প্রতীকী যে, এ প্রাক্তন শীতল যুদ্ধ-যুগের প্রতিদ্ব›দ্বীরা আফগানিস্তান থেকে উদ্ভ‚ত হুমকির বিষয়ে শেয়ার করা উদ্বেগের কারণে একত্রিত হয়েছিল - বিবেচনা করে যে, তারা সেখানে একবার প্রক্সি যুদ্ধ করেছিল’। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ২০১৪ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে - যখন মস্কো তার সন্ত্রাসবিরোধী সক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করার জন্য ইসলামাবাদের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

‘আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএস-কে) এর প্রবেশপথ ছিল একটি গেম-চেঞ্জার যা তাদের ইতোমধ্যে দ্রæত চলমান স¤প্রীতিকে ত্বরান্বিত করেছে’, তিনি যোগ করেছেন।
কোরিবকো, যিনি আফ্রো-ইউরেশিয়া, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এ মার্কিন কৌশলের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, উল্লেখ করেছেন যে, মস্কোর সাথে ইসলামাবাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সা¤প্রতিক বছরগুলোতে সোভিয়েত যুগের শত্রæতা অতিক্রম করেছে।

‘রাশিয়া ও পাকিস্তান বার্ষিক যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী মহড়া চালিয়ে আসছে। এটি তাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের স্থায়ী আমলাতন্ত্রের মধ্যে আরো বিস্তৃতভাবে আস্থা বাড়াতে সাহায্য করেছে’।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় - বিশেষ করে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের পর, ইসলামাবাদ নিজেকে ওয়াশিংটনের সাথে সংযুক্ত করে। এটি মস্কোর নেতৃত্বকে বিরক্ত করেছিল। অতি স¤প্রতি, ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের পর, পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আবার তলিয়ে যায়, কারণ ইসলামাবাদকে ওয়াশিংটন প্রধান নন-ন্যাটো মিত্রের মর্যাদা দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের সা¤প্রতিক পরিবর্তনের ফলে দেশটিকে রাশিয়ার সঙ্গে আরো ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করেছে। ২০২১ সালে মার্কিন সৈন্যরা আফগানিস্তান ত্যাগ করার পরপরই দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
কোরিবকো বলেন, বিশ্বব্যাপী নীতিনির্ধারকরা পুরোপুরি সচেতন যে, পাকিস্তানের সমর্থন ছাড়া আফগানিস্তানে কোনো গুরুতর খেলোয়াড় অর্থপূর্ণ কিছু অর্জন করতে পারবে না। ‘বিপরীতভাবে দাবি করা তথ্য যুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই নয় যা সেই দেশ সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণাগুলোকে হেরফের করার উদ্দেশ্যে। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা জানেন যে, এ ধরনের বর্ণনার বাস্তবে কোনো ভিত্তি নেই’।

বিশেষজ্ঞ বলেছেন, রাশিয়া এবং পাকিস্তান আফগানিস্তানের বাস্তবিক তালেবান-নেতৃত্বাধীন সরকারের পাশাপাশি সেই দেশের আসন্ন মানবিক সঙ্কটের সমাধানের জন্য তাদের ক‚টনৈতিক পদ্ধতির সমন্বয় অব্যাহত রাখবে। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Prof.Dr.Syed Shamsuddin Ahmed Plastic Surgery ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৯ এএম says : 0
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি সারা পৃথিবীর জন্য খারাপ খবর। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর সারা পৃথিবীতে যে সময়টিতে রিকভারি করার সুযোগ এসেছে, তখন এই যুদ্ধ অবশ্যই ক্ষতির কারণ। প্রত্যেক দেশই সাফার করবে। জিওপলিটিক্যাল টেনশন বাড়বে। অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেবে। বিশেষত, সাপ্লাই চেন আবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তেল, এনার্জি প্রাইস প্রভাবিত করবে। সবকিছুতেই এটা খারাপ প্রভাব ফেলবে।
Total Reply(0)
আব্দুল আল হেলালী ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৯ এএম says : 0
বাংলাদেশ কি করছে
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৫২ এএম says : 0
Imran Khan need to maintain good and balanced relation with Russia.
Total Reply(0)
Md Ayoub Ahmed Ahmed ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৫২ এএম says : 0
সাবাস পাকিস্তান
Total Reply(0)
Abdul Mabud ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৩ এএম says : 0
অনেক সুন্দর রাজনৈতিক খেলা শুরু করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।।।।চিন পাকিস্তান তুরস্ক কে নিয়ে,,,, শুরু করতে যাচ্ছেন,,,, শেষ আমেরিকা ব্রিটেন ইসরাইল।।।।
Total Reply(0)
Avijit Chakraborty ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৩ এএম says : 0
Pak প্রেসিডেন্ট কে নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাশিয়া ভারত কে চাপে রাখতে চাইছে।
Total Reply(0)
Md Mamun ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৩ এএম says : 0
পাকিস্তানের উচিত রাশিয়ার সাথে সম্পক করা
Total Reply(0)
Osman Gani ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৪ এএম says : 0
চীন পাকিস্তান রাশিয়া সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ তিনটি দেশ সব কিছুতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন