জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বয়স জালিয়াতি এবং ভুয়া সনদ দিয়ে নিয়োগের অভিযোগ ১৫ দিনের মধ্যে নিস্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু পাঁচ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশ পালিত হচ্ছে না। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের জন্য অসংখ্য পত্র দেয়। সরকারের সিভিল অডিট অধিদপ্তরের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মাওলানা মিজানুর রহমানের নিয়োগ বাতিল, দায়দায়িত্ব নির্ধারণপূর্বক জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণসহ আপত্তিকৃত অর্থ আদায় করতে বলা হয়। কিন্তু কোনো কিছুই আমলে নিচ্ছেন না ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। উল্টো অভিযুক্ত ব্যক্তির কক্ষে মাঝে-মধ্যেই ভুরি ভোজে মিলিত হন মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ। বিষয়টি বায়তুল মোকাররম সংলগ্ন এলাকায় রসালো আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাওলানা মিজানুর রহমান ২০০৬ সালে তৎকালীন জোট সরকারের শরিকদল ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন মহাসচিবের ভাগ্নে হিসেবে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে পেশ ইমাম পদে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিয়োগ পান। এ সময় তার চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ার পর তিনি ৩ বছর বয়স কমিয়ে আবেদন করেন। তার জন্মসাল ১৯৭৪। তা পরিবর্তন করে ১৯৭৭ সাল করা হয়। এ জাল-জালিয়াতির ঘটনায় বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক তার সহযোগী বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাওলানা মিজানুর রহমানের নিয়োগের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ২০ নম্বর নির্ধারিত ছিল। নম্বর প্রদানের ভিত্তি হিসেবে লেখা ছিল দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল পরীক্ষার প্রত্যেক স্তরের ১ম শ্রেণির জন্য ৫, ২য় শ্রেণির জন্য ৪, তৃতীয় শ্রেণির জন্য ৩। মাওলানা মিজানুর রহমানের এসব কোনো যোগ্যতাই ছিল না। কেবল দাওরায়ে হাদিস পাশ তিনি। অথচ তাকে নিয়োগের উদ্দেশ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ২০ নম্বরের মধ্যে পুরো ২০ নম্বর দেয়া হয়।
ইফার সূত্র মতে, মাওলানা মিজানুর রহমান সাবেক মহাপরিচালক মরহুম সামীম মো. আফজালের সময় জালিয়াতির মাধ্যমে সিনিয়র পেশ ইমাম পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। প্রতিষ্ঠানটির উক্ত পদের জন্য জ্যেষ্ঠ ক্রম তালিকায় মাওলানা মিজানুর রহমানের নাম ছিল না। কেননা সিনিয়র পেশ ইমামের পদ ৫ম গ্রেডভুক্ত। সরকারি বিধি অনুসারে ৫ম গ্রেডে পদোন্নতি হয় ৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত পদ থেকে। মাওলানা মিজানুর রহমান ছিলেন ১০ম গ্রেডভুক্ত পেশ ইমাম। ১০ম গ্রেডভুক্ত পেশ ইমাম হওয়ায় পরও মাওলানা মিজানুর রহমান ৫ম গ্রেডে পদোন্নতি পান। যদিও তালিকায় ৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত পদোন্নতির যোগ্য সিনিয়র ইমাম ছিলেন।
দেশের প্রধান জাতীয় মসজিদের এমন অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক ইতঃপূর্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একাধিক অভিযোগ দেন। সিভিল অডিট অধিদপ্তরের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মাওলানা মিজানুর রহমানের নিয়োগ বাতিল, দায়দায়িত্ব নির্ধারণপূর্বক জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ আপত্তিকৃত অর্থ আদায় করার জন্য বলা হয়।
এসব আবেদন ও আপত্তিতে কোন কাজ না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক ফের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে ৩০ জুন ২০২০ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় পৃথক একটি তদন্ত কমিটি করে। কিন্তু ওই তদন্ত কমিটিও ব্যর্থ হয়। এরপর বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। আদালত গত ১৫ সেপ্টেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করার নির্দেশ দেন। ১৫ দিনের জায়গায় পাঁচ মাস পার হলেও মাওলানা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা আছে- এ অজুহাতে ইফার মহাপরিচালক ড. মুশফিকুর রহমান রহস্যজনকভাবে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে ইফার মহাপরিচালক ড. মুশফিকুর রহমানের সঙ্গে গতকাল একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে দু’টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ইফার ডিজির কাছে পেশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন