টেকনাফ উপজেলার চিংড়ী চাষী ও জেলেদের জীবন জীবিকা নির্বাহের স্বার্থে নাফ নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও চিংড়ি খামারের চিংড়ি চাষী ও শ্রমিকদের যাতায়াতের বাধা দূরীকরণ এবং মাদক পাচার রোধে বিজিবির চৌকি ও টহল বাড়ানোর দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন টেকনাফের ভুক্তভোগীরা।
আজ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এই স্মারকলিপি দেয়া হয়, হোয়াইক্যং নাফ সীমান্ত খামার গ্রুপের পক্ষ থেকে।
জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারক লিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিন আল পারভেজ।
টেকনাফ উপজেলার চিংড়ী চাষী ও জেলেদের (নাফ নদী ও চিংড়ি খামার নির্ভরশীল) জীবন জীবিকার স্বার্থে নাফ নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও চিংড়ী খামারের চিংড়ী চাষী ও শ্রমিকদের যাতায়তের বাধা দূরীকরণের দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর
এই স্মারকলিপি দেয়া হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়,
২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের ১২ লাখের অধিক নির্যাতিত রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। প্রধামন্ত্রী বিশাল এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে অনন্য নজীর স্থাপন করে বিশ্বের দরবারে মানবতার মা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন।
টেকনাফ উপজেলা হোয়াইক্যং ইউনিয়নে সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় ৩ (তিন) হাজার একরের অধিক চিংড়ি চাষের জমি রয়েছে। উক্ত চিংড়ি খামার হতে উৎপাদিত চিংড়ি রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে।
২০১৭ সালের শেষের দিকে সরকারী নিদের্শনায় রোহিঙ্গা শরনার্থী ও মাদক পাচার রোধে নাফনদীতে মাছ শিকার বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি ২০২১ সাল থেকে নাফ নদীর বেড়ীবাঁধ ও চিংড়ী প্রজেক্টের আশপাশে জনচলাচল ও বন্ধ রয়েছে অনেকাংশে।
এতে করে মাছ শিকার ও নাফ নদী সংলগ্ন বাংলাদেশের সীমানার ভিতর শতাধিক চিংড়ী খামারে কর্মরত কয়েক হাজার মালিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। এই সুযোগে এলাকার অসংখ্য বেকার মানুষ মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সাথে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা মিলে মাদক পাচার, গুম, খুনসহ নানান অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে লাখ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ এবং এজেন্টেদের নিকট থেকে দাদন নিয়ে চিংড়ি চাষে বিনিয়োগ রয়েছে। এখন তারা না পারছে সময়মত চিংড়ি চাষ করতে, আর না প্রারছে ব্যাংক ঋণ ও দাদনের টাকা পরিশোধ করতে। একারণে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন সহ টেকনাফের বিশাল জনগোষ্ঠী বেকারত্বে ভোগছে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছে।
এই সমস্যাসমূহ উত্তরণের ভুক্তভোগীরা স্মারকলিপিতে কিছু প্রস্তাবনাও তুলে ধরেন।
তাদের মতে বেকার মৎসচাষী ও মৎস্য আহরণকারী জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য সুনির্দিষ্টি তালিকা করে ক্ষেত্রে বিশেষে তাদের আর্থিক প্রনোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
প্রকৃত চাষি এবং সংশ্লিষ্ট মৎস্য শ্রমিকদের পরিচয় পত্র প্রদান করে মৎস্য চাষ এলাকায় তাদের চলাচল সহজতর করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করার সুযোগ দেওয়ার দাবী জানানো হয়।
এছাড়াও মাদক পাচার ও সন্ত্রাসী প্রতিরোধে নাফনদী ও বেড়ীবাঁধে বিজিবি টহল জোরদার রাখা এবং তাদের আরো চৌকি বৃদ্ধি করার দাবী জানানো হয়।
এদিকে সম্প্রতি হোয়াইক্যং ইউনিয়নে এসব বিষয়ে 'হোয়াইক্যং নাফ সীমান্ত খামার গ্রুপ' ও স্থানীয় পেশাজীবীদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শত শত ভূক্তভোগী জনগণ উপস্থিত হয়ে উপরোক্ত বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন বলে জানা গেছে।
টেকনাফবাসীর এই সমস্যা সমাধানে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন সহ গোটা টেকনাফের চিংড়ি চাষি ও পেশাজীবিরা এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুনজর কামনা করেন।
'হোয়াইক্যং নাফ সীমান্ত খামার গ্রুপ'ও স্থানীয় পেশাজীবীদের পক্ষে
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন,হোয়াইক্যং নাফ সীমান্ত খামার গ্রুপের সভাপতি, অধ্যাপক
গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান
অধ্যক্ষ নুর আহাম্মদ আনোয়ারী,
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ
সভাপতি, হারুনর রশিদ সিকদার, কক্সবাজার জেলা চিংড়ি খামার গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক, নুরুল আমিন,হোয়াইক্যং সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, মোঃ আলমগীর চৌধুরী,নুরুল কবির মেম্বার,
এড.নুরুল হোসাইন নাহিদ এবং আবু ছিদ্দিক আতিক প্রমূখ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য, কমান্ডিং অফিসার বিজিবি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্মারকলিপির অনুলিপি দেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন