শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বইমেলায় প্রতিবন্ধীদের আশার আলো সুইচ ফাউন্ডেশন

রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধা-বনিতা, প্রতিদিন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এসে ভিড় করেন বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলায়। লেখক পাঠকদের পদচারণায় মুখরিত এ প্রাঙ্গণে সংকীর্ণ হয়ে পড়ে প্রতিবন্ধীরা। তবে তাদের জন্য আশার আলো হয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’।

করোনা মহামারীর কারণে দুই সপ্তাহ দেরি করে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় বাঙালির এই প্রাণের মেলা। এরপর থেকে যত দিন যাচ্ছে ততই মেলায় বাড়ছে পাঠক দর্শনার্থীদের ভিড়। বইয়ের ঘ্রাণে ছুটে আসা এ মিছিলে পিছিয়ে নেই প্রতিবন্ধীরাও। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে বা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যারা হাঁটাচলা করতে পারছেন না, তারাও আসছেন বইমেলায়। অদম্য এই বইপ্রেমিদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটাতে আলো হয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে ‘সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’। গ্রন্থমেলায় এসব প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে হুইল চেয়ার সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা।
জানা যায়, বাংলা একাডেমি ও বিকাশের সহযোগিতায় তারা এই সুবিধা দিয়ে আসছেন গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিন থেকে। গ্রন্থমেলায় তাদের সেবার অংশ হিসেবে প্রতিদিন মেলার টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে দুইটি টিমে ১৫টি হুইল চেয়ার থাকে। পাশাপাশি এতে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। প্রতিবন্ধী কিংবা চলাফেরা করতে অক্ষম যে কেউ বিনামূল্যে সেবাটি নিতে পারছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ সরেজমিনে দেখা যায়, স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনিতে বইয়ের নেশায় ছুটে এসেছেন অনেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাদের অনেকে টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উভয় টিমের সাহায্যে ব্রেইল প্রকাশনীতে সানন্দে উপস্থিত হন। তারা এই সুবিধা পেয়ে সুইচ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান। ব্রেইল প্রকাশনীতে পড়তে আসা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাদিমের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এখানে কীভাবে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে প্রায় পড়তে আসি। বাইরে সুইচ ফাউন্ডেশনের হুইল চেয়ার সেবা রয়েছে। তাদের সাহায্যেই অনায়াসে এখানে এসে পড়তে পারি। তাই বরাবরই তাদের প্রতি এবং স্পর্শের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বইমেলার স্বেচ্ছাসেবকদের দলনেতা আকিব জাবেদ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা প্রত্যেক বছরের বইমেলায় নিজেদের বন্ধু বান্ধবদের মধ্য থেকে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ও বাংলা একাডেমির দেওয়া ১৫ টি হুইল চেয়ার নিয়ে উপস্থিত থাকি প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করার জন্য। দৈনিক ৮ থেকে ১০ জন কিংবা কখনো কখনো ২০জন প্রতিবন্ধী গ্রন্থপ্রেমী বইমেলায় আসেন। এছাড়াও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ১৫ জনেরও বেশি মানুষ ঘুরতে আসেন। প্রতিবছর বইমেলাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সাল থেকে হুইল চেয়ার সেবা দিয়ে আসতেছি আমরা।

জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মুইনুল ফয়সালের নেতৃত্বে গঠিত হয় সংগঠনটি। সুইচ নামকরণের মধ্য দিয়ে নতুন উদ্দেশ্য তৈরি করার প্রয়াসে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। কাজের ধারাবাহিকতা হিসেবে এই সংগঠন ময়লা পরিষ্কারের কাজ হিসেবে পুরনো কাপড় সংগ্রহ করে ১০ টাকায় গরিবদের মাঝে বিতরণ, শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে সুইচ বলপেন বিক্রি, ২০১৫ সালে ঢাকা উদ্যানে সুইচ তামিনা বানু বিদ্যানিকেতন ও গাবতলিতে সুইচ বিদ্যানিকেতন নামে দুইটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ‘সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ এটা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা সংগঠন। আমরা যখন প্রথম, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলাম তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক বিশেষ কিছু কাজ আমরা হাতে নেই। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু। তারপর ২০১৫ সাল থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য দুইটা স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করি। এবং ২০১৬ সাল থেকে এই হুইল চেয়ার সার্ভিস শুরু করি। এছাড়াও ১০ টাকায় চাউলসহ বেশ কিছু কাজের মাধ্যমে আমরা সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্য দিয়ে আসছি।

মেলায় হুইল চেয়ার সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে যখন আমরা প্রথম খেয়াল করি যে বইমেলায় দুইদিক থেকে দুইটা গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তখন ভাবলাম বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা কীভাবে মেলায় আসবে! তখন থেকেই তাদের জন্য ভিন্নরকম কিছু করার চিন্তা থেকেই মূলত বাংলা একাডেমির সাহায্যে আমরা এই উদ্যোগটা গ্রহণ করি। তখন থেকেই আমরা ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী ২০টি হুইল চেয়ার নিয়ে মেলায় আগত প্রতিবন্ধীদের সেবা দিয়ে আসছি এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ১৫টি চেয়ার ও ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, প্রতিদিনই ৪ থেকে ৫ জন প্রতিবন্ধীকে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কখনো বা ২০ জনও আসেন সেবা নিতে। তবে মেলা প্রাঙ্গণে জমি অসমতল হওয়ায় অনেকটাই অসুবিধায় পড়তে হয় তাদের নিয়ে। যদি মেলা প্রাঙ্গণ পুরোপুরি সমতল করা যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব এবং সানন্দে আমরা এই সেবা দিয়ে যেতে পারব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন