সদকা করা বা দান করা, আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম। সদকা দুই প্রকার। (১) সাধারণ সদকা (২) সদকায়ে জারিয়া। সাধারণ সদকা হল- এতিম, গরিব অসহায়কে টাকা পয়সা, বস্ত্র, অন্ন দান করা। আর সাদকায়ে জারিয়া হল- যে দানের সওয়াব স্থায়ী হয়। মৃত্যুর পর কবরেও সওয়াব পেতে থাকে। যেমন- দুনিয়ার মধ্যে হাফেজ আলেম ছাত্র ও নেককার সন্তান রেখে যাওয়া। দ্বীনি বই পুস্তক রচনা করা। মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা। জনসাধারনের জন্য পানির ব্যবস্থা করা, বৃক্ষ রোপন করে যাওয়া।
এক ব্যক্তি অন্যকে যদি দ্বীনি এলেম শিক্ষা দেয়, সে ব্যক্তি অন্যকে পরবর্তীতে কাউকে না কাউকে শিক্ষা দিবে। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এ সৎ কাজের সওয়াব কবরে পৌছতে থাকবে। নবী মুহাম্মদ (সা.) ঐ ব্যক্তিকে সবচেয়ে বড় দানশীল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। যিনি পবিত্র কুরান সুন্নাহর এলেম অন্যদেরকে শিক্ষা দেন। মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা রাস্তা ঘাট ইত্যাদিতে দান করলে অনেক বেশি মানুষ উপকৃত হয় এবং সওয়াব দীর্ঘস্থায়ী হয়। বুখারী শরীফে এসেছে - হজরত আবু হুরায়াহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল পাক (সা.) ইরশাদ করেন, যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমলের সওয়াব কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকে- সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান, ভাল সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।
দানের গুরুত্ব সম্পর্কে সূরা যারিয়াতের ১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “তোমাদের সম্পদে গরীব অসহায়দের অধিকার রয়েছে” অর্থাৎ আমরা যা দান করি, ইসলামের দৃষ্টিতে তা দয়া নয়, তা গরীবদের অধিকার বা হক্কুল ইবাদ। যখন দান করা হয়, তখন সৃষ্টির অধিকারকেই সম্মান করা হয়। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে। ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত ( যারা লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতে না) সকলের হক রয়েছে। দানের গুরুত্ব সম্পর্কে সূরা বাকারার ২৬১ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন’।
হাদীস শরীফেও দান করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে- বুখারী ও মুসলিম শরীফে এসেছে : যারা গোপনে দান করেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাদেরকে আরশের নিচে ছায়া ও শান্তি দান করবেন। নবী সা. বলেন, দান-ছদকা গুনাহ এমনভাবে মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে। দান জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। সুবহানাল্লাহ। তিনি আরো বলেন- দান করলে বিপদ কেটে যায় আর হায়াত বাড়ে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।’
দান করলে বালা মসিবত, এক্সিডেন্ট, পেরেশানী, দূর্ঘটনা, অসুস্থতা দূর হয়ে যায়। তাই দানের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। তবে দান করে খোটা দেয়া জায়েয নেই, এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা দানের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাতের সওয়াব বরবাদ করো না এবং এখলাছের সাথে দান করতে হবে। আল্লাহর রাসূল বলেন- নাজাতের জন্য একাগ্রচিত্তে অল্প আমলই যথেষ্ট। বর্তমান যুগে অনেক মানুষ প্রশংসা নেয়ার জন্য, গর্ব অহংকার প্রকাশ করার জন্য দান করে। অনেকে আবার দুনিয়াবী স্বার্থের জন্যেও দান করে । এটা সম্পূর্ণ নিষেধ। দান যদি মহান আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য না হয়, তা দ্বারা হয়ত দুনিয়াবী কিছু স্বার্থ হাসিল হবে কিন্তু পরকালে এর বিনিময় পাওয়া যাবে না।
রাসূল সা. বলেন- যারা মানুষের প্রশংসা নেয়ার উদ্দেশ্যে দান করবে, তাদের দ্বারাই জাহান্নামের আগুনকে সর্বপ্রথম প্রজ্বলিত করা হবে। (নাউজুবিল্লাহ)। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা সম্পদশালীকে প্রশ্ন করবেন যে, আমার দেয়া সম্পদ তুমি কি করেছ? সে জবাব দিবে, আমি আপনাকে খুশি করার জন্য অনেক অনেক দান করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে দান করেছ যে, তোমাকে বলা হবে, দানবীর, দানশীল , সমাজ সেবক, জনদরদী। সব টাইটেল তো তুমি দুনিয়াতে পেয়ে গেছ। তখন তাকে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তাই দান করে খোটা দেয়া যাবেনা এবং এখলাছের সাথে দান করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাধ্যমত এখলাসের সাথে দান করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন