বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ইসলাম কায়েমে দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য

প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ওয়ালীউল হক খন্দকার

মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন চিন্তা করার ক্ষমতা, স্বাধীনতা ও অন্য সকল জীবের উপর প্রাধান্য। শক্তি ও ক্ষমতা যার অধিক, দায়-দায়িত্বও তার অধিক। তার ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশও হয় সূক্ষ্ম ও কঠিন। আল্লাহর সৃষ্ট জীবের মধ্যে কেবলমাত্র মানুষ ও জীনকে তাদের কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে হাশরের মাঠে। তবে তার অর্থ এই নয় যে আল্লাহ মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে আছেন। বরঞ্চ প্রকৃত অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি চান ইহকালে ও পরকালে মানুষের মঙ্গল হোক, সে শান্তিতে থাকুক। কিন্তু মানুষ দুনিয়ার চাকচিক্যে মোহভ্রষ্ট হয়ে, ক্ষমতার দাপটে পথভ্রষ্ট হয়ে নিজেই নিজের ক্ষতি করে, শাস্তি ডেকে আনে। ফলে সে যা পায় সেটি তারই কর্মফল।
মানুষের কাম্য দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা। কিন্তু তা পেতে হলে প্রয়োজন সঠিক পথ অনুসরণ। এই পথ হল ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং ইসলামী জীবনধারার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন। প্রথমেই জানা দরকার ইসলাম ধর্ম কি এবং প্রকৃত মুসলমান কে/কাহারা।
১. ইসলাম ধর্ম কি?
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট ভারতীয় ইসলামী চিন্তাবিদ ডা. জাকির নায়েক তাঁর জাকির নায়েক বুক সিরিজ-৫ গ্রন্থে (পৃ: ১৪-১৬) ইসলাম ও মুসলমানের সজ্ঞা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সেখান থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করা হল।
“আল্লাহ ইসলামকে একমাত্র ধর্র্মবিশ্বাস ও জীবনবিধান হিসাবে সৃষ্টির শুরু থেকেই মানব জাতির কাছে প্রেরণ করেছেন। হযরত আদম (আ.) থেকে পরবর্তী সকল নবী রসূলগণ মূলত একটি বিশ্বাস ও বানীই প্রচার করেছেন যার সারমর্ম হচ্ছে তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ), রিসালাত (নবুয়ত) ও আখিরাত (মৃত্যুর পরের জীবন)। আল্লাহর সকল নবী রসূলগণ ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের প্রবর্তক নন। তাঁরা প্রত্যেকেই একই বানী ও বিশ্বাস প্রচার করেছেন। সেই সত্যবানীকে বিভিন্ন যুগের মানুষ বিকৃত করেছে। বাইরের বানী আরোপ করে এবং অন্য কথার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সত্য দ্বীনকে নানা ধর্মে বিভক্ত করেছে। আল্লাহ এসব বাইরের উপাদান নির্মূল করেন এবং মহানবী হযরত মোহাম্মদ (দ:)-এর মাধ্যমে ইসলামকে বিশুদ্ধ ও প্রকৃতরূপে মানব জাতির নিকট প্রেরণ করেন। হযরত মোহাম্মদ (দ:)-এর পর যেহেতু আর কোন নবী আসবেন না তাই তাঁর নিকট প্রেরিত গ্রন্থটির প্রতিটি শব্দ সংরক্ষণ করা হয় যাতে তা সব যুগে হেদায়েত বা পথ নির্দেশিকার উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। সব নবীদের দ্বীনই ছিল - ‘আল্লাহর ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ’ এবং আরবীতে তা বোঝানোর জন্য একটি শব্দই রয়েছে তা হলো ‘ইসলাম’।”
২. প্রকৃত মুসলমান কে?
“সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করে সেই প্রকৃত মুসলমান।” শুধু কলেমা পাঠ ও কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করলেই মুসলমান হওয়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন রয়েছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার অনুসরণ ও বাস্তবায়ন।
মানুষের প্রতি আল্লাহর রহমত
আল্লাহ দয়ালু ও ক্ষমাশীল। মানুষ যাতে পথভ্রষ্ট না হয় এবং ইসলামী জীবনযাপন করে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা পেতে পারে সেজন্য মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের প্রতি অনেক করুণা বর্ষণ করেছেন। কিছু উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হল :
(১) কোরানকে আল্লাহতায়ালা কেয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। অন্য কোন ধর্মগ্রন্থের ক্ষেত্রে এরূপ করেন নাই। ফলে সেইসব ধর্মগ্রন্থ কালক্রমে পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়েছে। কিন্তু কোরান রয়েছে অপরিবর্তিত ও অবিকৃত। নাজিল হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কোরানের একটি লাইনের সমতুল্য অপর একটি লাইন রচনা করতে পারে নাই এবং ভবিষৎতেও পারবে না। কোরানের আদেশ, নিষেধ মানুষের জন্য মঙ্গলজনক। নারীদের পর্দা প্রথা, পুরুষদের বহু বিবাহ, পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ইত্যাদি কোন কোন বিষয়ে ইসলামের বিধি বিধানের সাথে বর্তমান জমানার কারো কারো ধ্যান-ধারণার অমিল থাকলেও গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে ইসলামের বিধি-বিধানই মানুষের জন্য অধিকতর কল্যাণকর।
(২) দুনিয়াতে নবী রসুল প্রেরণ মানুষের প্রতি আল্লাহর করুণার অপর একটি বিশেষ নিদর্শন। হাদিস অনুসারে দুনিয়াতে ১ লক্ষ ২৪ হাজার, ভিন্ন মতে ২ লক্ষ ২৪ হাজার, নবী ও রসুল প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন তিনি দুনিয়ার প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী প্রেরণ করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এই সতর্ককারীগণ উপরোক্ত লক্ষাধিক নবী রসুলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং তাঁরা প্রেরিত হয়েছিলেন দুনিয়ার বিভিন্ন অংশে। অন্যান্য নবী রসুলগণ প্রেরিত হয়েছিলেন নির্দিষ্ট গোত্র বা সম্প্রদায়ের হেদায়েতকারী হিসাবে। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ (দ:) প্রেরিত হয়েছেন দুনিয়ার সকল মানুষের মঙ্গলের জন্য, সকল মানুষের হেদায়েতকারী হিসাবে। তিনি সর্বশেষ নবী এবং তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না। সেজন্যই তাঁর মাধ্যমে প্রচারিত ইসলাম ধর্ম হল আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনের সর্বশেষ সংস্করণ এবং ইসলামের এই বিধি বিধানসমূহ সঠিকভাবে পরিপালন করার মধ্যে নিহিত রয়েছে মানুষের মঙ্গল।
(৩) মুসলমানদের জীবনে শৃঙ্খলা আনয়ন ও রিপুর প্ররোচনা থেকে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত ফরজ করেছেন। ভাল গায়ক হতে হলে প্রতিদিন নিয়মিত রেওয়াজ করতে হয়। ভাল খেলোয়াড় হতে হলে নিয়মিত ঘণ্টার পর ঘণ্টা, মাসের পর মাস নিবিষ্ট মনে অনুশীলন করতে হয়। তবেই আসে দক্ষতা ও সফলতা। একজন খাঁটি মুসলমান হওয়া আরও কঠিন কাজ। এর জন্য প্রয়োজন রয়েছে আরও বেশী সাধনার।
মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্য সেই কঠিন কাজটি অনেক সহজ করে দিয়েছেন নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাতের মাধ্যমে।
(ক) নামাজ
নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। নিবিষ্ট মনে, একান্ত চিত্তে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে মানুষের মন থেকে পঙঙ্কিলতা, কুচিন্তা, অসৎ মনোবাসনা ইত্যাদি দূর হয়ে যায়। তার সব কাজে নিয়মানুবর্তিতা এসে যায়। সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের প্রথম শর্ত হল একাগ্র চিত্তে তা পড়া। কিন্তু অনেক সময় আমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হয় না।
নামাজে দাঁড়ানোর পর একাগ্রতা নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণসমূহ হল
নামাজে দাঁড়ানোর পর মন নামাজের দিকে না থেকে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী ও দৈনন্দিন কার্যাবলীর দিকে চলে যায়।
জরুরি কাজের তাড়নায় তাড়াহুড়া করে নামাজ আদায় করা হয়। এ সময় পার্থিব প্রয়োজন নামাজের চাইতে বেশী গুরুত্ব পেয়ে থাকে।
নারীঘটিত ও অন্যান্য নানা কুচিন্তা মনকে আবিষ্ট করে ফেলে শয়তানের প্ররোচনায়।
পেশাগত ও সাংসারিক নানা সমস্যা মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। সেগুলি নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়। ফলে নামাজের সুরাসমূহ কেবল আওড়ানোই হয় তার প্রতি মনোযোগ থাকে না।
৫. অমনোযোগিতার জন্য কত রাকাত নামাজ পড়া হয়েছে বা কোন সুরা পূর্ববর্তী রাকাতে তেলাওয়াত করা হয়েছে তা মনে থাকে না।
নামাজে দাঁড়ানোর পর নষ্ট হওয়া একাগ্রতা ফিরিয়ে আনার উপায়
১. নামাজের সময় হলে নামাজকে অপেক্ষা করতে না বলে যে কাজে ব্যস্ত আছেন সেই কাজকে অপেক্ষা করতে বলুন। এর ফলে নামাজ কাজা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
২. আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন এই মনোভাব নিয়ে অজু শুরু করুন।
৩. নামাজ শুরুর পূর্বে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট নিজের মনকে নামাজের দিকে টেনে আনতে চেষ্টা করুন। এত নামাজে মনোসংযোগ বৃদ্ধি পাবে।
৪. নিজেকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত মনে করুন।
৫. আল্লাহ আপনাকে দেখছেন। আপনি কি পড়ছেন, কিভাবে পড়ছেন তা তিনি শুনছেন ও অবলোকন করছেন- এই মনোভাব নিয়ে নামাজ পড়া শুরু করুন।
৬. নামাজে ব্যবহৃত সুরাগুলোর এবং রুকু, সেজদার সময় যা পড়া হল সেগুলোর বাংলা অর্থের প্রতি মনোনিবেশ করুন। এর মাধ্যমে নামাজে অধিকতর মনোযোগী হওয়া যাবে। বাংলা অর্থ জানা না থাকলে প্রতিদিন কিছু কিছু করে জেনে নিতে চেষ্টা করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন