বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পেঁয়াজের ঝাঁজে অসহায় ভোক্তা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

হঠাৎ করেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে এক লাফে কেজিতে ১৫ থেকে ২৫ টাকা পযন্ত বেড়ে গেছে। এই দাম বাড়ার পেছনে একে অপরকে দায়ী করছেন। এক সাপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি; তিন দফা বেড়ে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ। তারপরও দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুড়ি কাটা পেঁয়াজ প্রায় শেষ হয়ে আসায় এই দাম বেড়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বিভিন্ন স্থলবন্দরে পেঁয়াজের আটকে থাকায় দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন।

ফরিদপুর, রংপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রতিটি জেলায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে এখন দেশি যে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তা মুড়ি কাটা পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজের সরবরাহ এখন প্রায় শেষের পথে। ফলে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কম। তবে মেহেরপুরের পেঁয়াজ (আকারে বড়) আসতে শুরু করেছে বাজারে। এছাড়া ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে হালি পেঁয়াজও বাজারে আসবে। তখন পেঁয়াজের দাম কমে যাবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বাজারে যখন মুড়ি কাটা পেঁয়াজ ভরপুর ছিল তখন দাম বেশ কম ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে থাকে। ফলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এক দফা পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৬০ টাকা কেজি হয়। অবশ্য তখন এক সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম আবার কমে ৭০ টাকায় উঠে যায়।

গতকাল রাজধানীর ফকিরের পুল, যাত্রাবাড়ি, নিউ মার্কেট, ক্যাপ্তান বাজার ঘুরে দেখা যায় বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ। দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের একসঙ্গে ৫ কেজি ১০ কেজি করে কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন।
মূলত চলতি মাসের শুরুতেই ফের পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। প্রথম দফায় কেজিতে ১৫ টাকার মতো বেড়ে ৬০ টাকা হয়। শুক্রবার পর্যন্ত এ দামেই রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারগুলোতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। তবে গত দুদিনে দাম আরও দুই দফা বাড়ে। এতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ৬৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছেন নিম্নমানের পেঁয়াজ।
খুচরা বাজারের পাশাপাশি পাইকারিতেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিছুদিন আগে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন পাইকারিতে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রমজানের আগে হঠাৎ করে পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ার কারণে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ছে। কোনো কিছুতে নিয়ন্ত্রণ নেই। শুধু পেঁয়াজ নয়, চাল-ডাল, তেল-চিনি সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম। নিত্যপণ্যের এমন অস্বাভাবিক দামের কারণে বেশ কষ্টে রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

যাত্রাবাড়ি আড়তে পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. সলিম উল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছুদিন আগেও পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কিনেছি। এখন পাইকারি বাজারেই ৬৫ টাকার নিচে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। মহল্লার ব্যবসায়ীরা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। কি এমন হয়ে গেল হুট করে পেঁয়াজের এমন দাম বেড়ে গেল? তিনি বলেন, শুধু পেঁয়াজ না, বাজারে সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম। সয়াবিন তেলের কেজি ১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বোতলের তেল মহল্লার দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না। বড় বড় মার্কেটেও এখন বোতলের ৫ লিটার তেল নেই। আসলে যে যেমন পারছে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে। দেশটা যেন মগের মুল্লুক হয়ে গেছে।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে ফকিরাপুলের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছুদিন আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি করেছি। পাইকারিতে দাম বাড়ায় গত শুক্রবার ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। গত দুদিনে পাইকারিতে দাম আরও বেড়েছে। ফলে আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। যে দামে পেঁয়াজ কিনে এনেছি তাতে ৭০ টাকার নিচে বিক্রি করার উপায় নেই।

হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন? এমন প্রশ্নে যাত্রাবাড়ি আড়দের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মুড়ি কাটা পেঁয়াজ প্রায় শেষ, এ কারণে এখন পেঁয়াজের দাম বেশি। আমরা পাইকারিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। তবে কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। কারণ ১০ থেকে ১২ দিন পরই হালি পেঁয়াজ বাজারে আসবে।

এদিকে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ করেছে। আবার ভোক্তা অধিকার পরিষদও গতকাল বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন