শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিমানবন্দরে নিরাপত্তার অভাব

প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গত রোববার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছুরি নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালের সামনে হামলার ওই ঘটনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য নিহত হওয়াসহ আনসার ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের আরো তিন সদস্য আহত হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীরা হামলাকারী যুবককে আহত অবস্থায় আটক করেছে। এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, হামলাকারীকে আটকাতে নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিও ছুড়তে হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একটি বাংলা দৈনিককে জানিয়েছেন, ঘটনার আগে হলুদ গেঞ্জী ও কালো প্যান্ট পরা এক যুবককে ছুরি হাতে ২ নম্বর বহির্গমন টার্মিনালের ড্রাইওয়ের উত্তর প্রান্তের ৬ নম্বর গেইটের সামনে দেখতে পান এপিবিএনের সদস্যরা। তারা তখন চিৎকার করে উঠলে ওই যুবক ড্রাইওয়ে ধরে দক্ষিণ দিকে দৌড় দেয়। ৪ নম্বর গেইটের সামনে এক আনসার সদস্য ধরার চেষ্টা করলে তাকে ওই যুবক ছুরিকাঘাত করে এবং সামনের দিকে এগুতে থাকে। ৩ নম্বর গেইটের সামনে আরেক আনসার সদস্য তাকে আটকানোর চেষ্টা করে। সে সময়ে ওই যুবক অন্যান্য আনসার সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে আহত করে। এরপর রক্তাক্ত ছুরি হাতে যুবকটি ৩ নম্বর গেইট দিয়ে টার্মিনালের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তার পা লক্ষ্য করে গুলি করে এপিবিএনের একসদস্য। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিছু দূর যাবার পর এপিবিএন ও আনসার সদস্যরা তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তখন ওই যুবক এলোপাতাড়ি ছুির চালাতে থাকে। এতে এপিবিএনের দুই সদস্য আহত হয়।
বিমানবন্দরে ছুরি নিয়ে আক্রমণের ঘটনা বিরল। একই সঙ্গে তা উদ্বেগেরও বিষয়। এ যাবৎকাল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিকভাবেও এর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ছুরি নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটল। এই হামলা কেন হয়েছে বা হামলাকারীর উদ্দেশ্যই বা কি ছিল এখনো তা জানা যায়নি। শুধু এটুকু জানা গেছে যে, হামলাকারী ক্লিনারের দায়িত্বে থাকা একে ট্রেডার্সের কর্মীদের মতো পোশাক পরিহিত ছিল। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তারা প্রবেশপথেই বাধা দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বাধা দেয়া সত্ত্বেও সে কিভাবে প্রবেশ করল? অন্যদিকে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, নিরাপত্তাকর্মীর গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হবার কারণেই আহতের সংখ্যা বেড়েছে। বলা যায়, এক ধরনের আক্রমণ ও প্রতিরোধের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাপারটি খুবই স্পর্শকাতর। একজন আক্রমণকারীকে প্রতিহত করতে গিয়ে যদি হতাহতের মতো ঘটনা ঘটে তবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কতটা নাজুক তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অনেকদিন থেকেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে কথা উঠছে। নিরাপত্তা ঘাটতির প্রশ্ন তুলেই চলতি বছর অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ থেকে বিমানে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর বিমানবন্দরের পণ্যও যাত্রী নিরাপত্তা তল্লাশির কাজে ব্রিটিশ একটি নিরাপত্তা কোম্পানীকে নিযুক্ত করা হয়। এছাড়া বছর খানেক ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার প্রেক্ষিতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়। তারপরও এ ধরনের হামলা পুরো বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এধরনের হামলার ঘটনা উৎকণ্ঠার। ঘটনার সাথে সাথেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বিমানবন্দরে থাকা যাত্রীও তাদের স্বজনদের মধ্যে। এ ঘটনা যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ঘটনার তদন্ত হবে। যদিও বিভিন্ন সময়ে তদন্ত নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে। তদন্তের ফলাফল শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে না। আমরা মনে করি, ঘটনাটিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনা করে যথাযথ তদন্ত হবে এবং বন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিমানবন্দরকে বলা হয় একটি দেশের গ্রেটওয়ে। সেখানই যদি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় তাহলে দেশের ভাবমর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? পরিস্থিতি উত্তরণে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রকৃত যোগ্য ও দক্ষদের নিয়োগ দেয়া সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কেবল কথার ফুলঝুরি দিয়ে নয়, বাস্তবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন