শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

যেমন ছিলেন খলিফা হারুনুর রশিদ রহ.

হাসান মুরাদ | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৩ এএম

এক.আব্বাসীয় খেলাফতের অনন্য এক খলিফা হারুনুর রশিদ রহ.। পিতা খলিফা মুহাম্মদ আল-মাহদী। দাদা খলিফা মানসুর।জন্ম ১৪৬/৪৭ হিজরীতে। হারুনুর রশিদ তার ভাই খলিফা মুসা-আল-হাদী ইন্তেকালের পর খলিফা হন।মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি খেলাফতের তখতে বসেন। দেখতে ছিলেন শ্বেত বর্ণের।দীর্ঘকায়।স্বাস্থ্যবান। খলিফা হয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সব কাজে মায়ের পরামর্শ নিতেন। তার মা খায়যুরান। তিনি মূলত আল-মাহদীর দাসি ছিলেন। খায়যুরান জগতের এক ভাগ্যবান নারী;যার স্বামী এবং দুই সন্তান খলিফা ছিলেন।খলিফা হারুনুর রশিদ অধিক হজ্ব,যুদ্ধে গমন এবং দান করতে পছন্দ করতেন। হজ্বে যাওয়ার সময় সাথে ১০০ ফকিহ আলিম ও তাদের সন্তানদের সাথে নিয়ে যেতেন। কখনো হজ্বে যেতে না পারলে ৩০০ জনকে নিজ খরচে হজ্ব করাতেন। প্রতিদিন ১হাজার দিরহাম সদকা করতেন। আর সাধারন দানের পরিমাণ ছিল গণনাহীন। দিনে ১০০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। আবু-মুায়াবিয়া নামে একজন অন্ধ মুহাদ্দিস ছিলেন। মাঝেমধ্যে আবু-মুয়াবিয়ার কাছে খলিফা হাদিস শুনতেন। এক রাতে খাবার শেষে বাদশা নিজেই উস্তাদ আবু-মুয়াবিয়ার হাত ধুয়ে দিলেন। উপস্থিত সভাসদেরা এ দৃশ্য দেখে সামনে এগিয়ে এলো। খলিফা তাদের বললেন,আমাকেই করতে দাও।আমি আমার উস্তাদ এবং ইলমের সম্মানে এ কাজ করছি। হারুনুর রশিদ রহ. কবি এবং ফকিহদের খুব ভালোবাসতেন। তাই তিনি ইমাম আবু-ইউসুফ রহ.কে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেন। দুই.ইবনুস সিমাক রহ.(একজন বিখ্যাত ব্যক্তি) একদিন খলিফার গৃহে গেলেন। খলিফা তখন পানি পান করছিলেন। খলিফা ইবনুস সিমাককে দেখে বললেন,আমাকে কিছু নছিহত করুন। ইবনুস সিমাক বললেন, আচ্ছা আমিরুল মু’মিনিন! যদি এ পানি আপনাকে পান করতে দেয়া না হয় তবে আপনি তা কত টাকা দিয়ে খরিদ করবেন? খলিফা বললেন,অর্ধেক রাজত্ব দিয়ে হলেও। ইবুনস সিমাক বললেন পানি পান করুন। পান করা শেষ হলে ইবুনস সিমাক এবার বললেন, আপিনি যে পানি ভেতরে প্রবেশ করালেন তা যদি প্রাকৃতিক ভাবে বের না হয়, তাহলে আপনি কি করবেন? খলিফা উত্তর দিলেন রাজত্বের অর্ধেক দিয়ে হলেও পানি বের করতে চাইব।এবার ইবনুস সিমাক বললেন;যে রাজত্বের অর্ধেকের দাম একবারের পান করা আর অর্ধেকের দাম একবারের পেশোব করা, এমন রাজত্বের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়া উপযোগী। এ নছিহত শুনে হারুনুর রশিদ রহ.খুব কাঁদতে লাগলেন।

একদিন খলিফা উটের গোশত খেতে চাইলেন। বাবুর্চিকে বললেন, খাবারের সাথে উটের গোশতও পরিবশেন করবে।তাই করা হলো। খলিফা গোশতের একটি গ্রাস মুখে দিলেন। এ সময় জাবের বারমাকী হাসতে লাগলেন। খলিফা হাসার কারণ জানতে চাইলেন। কিন্তু বারমাকী কিছুই বললেন না। এতে খলিফা কসম করে বসলেন। তখন বরমাকী বলেন খলিফা! আপনার ধারনাতে উটরে এক লোকমা গোশতের দাম কত? খলিফা বললেন হয়ত ৪ দিরহাম। জাফর বারমাখী বললেন না! বরং এর দাম ৪লাখ দিরহাম। খলিফা অবাক হয়ে জানতে চাইলেন তা কিভাবে? জাফর বলেন খলিফা! আপনি একদিন উটের গোশত খেতে চেয়েছিলেন। সেদিন রান্না ঘরে উটের গোশত ছিলনা। তাই সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিন আপনার জন্য একটি করে উঠ জবেহ করা হত। না জানি আপনি কখন খেতে চান তাই!অবশেষে আজ সে গোশত মুখে দিয়েছেন। বাস্তবে এতোগুলো উটের দাম পড়েছে ৪ লক্ষ দিরহাম। একথা শোনার পর খলিফা প্রচন্ডরুপে কাঁদতে লাগলেন। দস্তর খানা সরাতে আদেশ দিলেন। আর নিজেকে বলতে লাগলেন হারুন তুমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছ। সেদিন খলিফা যোহর থেকে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত এক ভাবে কেঁদেছিলেন। পরে ইমাম আবু-ইউসুফ রহ. খলিফাকে বললেন মন খারাপ করবেন না। কারণ এ গোশত অপচয় হয়নি। মহলের অন্যরা খয়েছেন।

তিন. খলিফা হরুনুর রশিদ রহ. ১৯৩ হিজরিতে ৪৬ বছর বয়সে তুস নগরে ইন্তিকাল করনে।পুত্র সালিহ তার জানাযা নামাজ পড়ান।খলিফা জীবিনকালেই তার কবর খনন করান। তারপর তাতে পূর্ণ এক খতম কোরান খতম করার আদেশ দেন। খলিফা কবরের কাছে আসেলন। তখন তিনি কেঁদে কেঁদে বলছিলেন,হে আদম সন্তান! এখানেই হবে তোমার ঠাঁই। তিনি বুক বরাবর স্থানটি প্রশস্ত ও পায়ের দিকে লম্বা করার আদেশ করেন। এরপর তিনি সুরা লাহাবের এই আয়াতটি পড়তে লাগলেন। অর্থ: আমার সম্পদ আমার প্রয়োজন মিটায়নি:আমার প্রতিপত্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। এসময়ও তিনি কেঁদেই চলছিলেন। এক বর্ণনাতে আছ খলিফা মৃত্যুপূর্ব সময়ে বললেন,আল্লহ! আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন। আমার মন্দ কাজ ক্ষমা করে দিন। খলিফা শ্বাস কষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। তখনি অনুভব করেছিলেন তিনি আর বেশি দিন বাচবেন না।তার খেলাফতের সময়কাল ছিল ২৩ বছর। এ সময় তিনি ইসলামি সম্রাজ্যে অভূতপূর্ব সফলাতা অর্জন করেন। খালিফার হাতে একটি আংটি থাকত। তাতে লাইলাহ ইল্লাল্লাহু লেখা ছিল। চার. মৃত্যুর সময় খলিফা ৪ স্ত্রি,প্রায় ২০ জন ছেলে-মেয়ে এবং ৪ হাজার দাসি রেখে যান। মিরাছ হিসেবে ছিল ১৩ কোটি ৩৫ হাজার দেরহাম। এবং বায়তুল মালে তথা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৭০ কোটি দেরহাম জমা রেখে যান। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে জান্নাত নসিব করুন। আমিন! তথ্যসূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া /১০ম খন্ড

লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Hossain Mohammad Sharif ২৮ মার্চ, ২০২২, ১:০৫ পিএম says : 0
May Allah give him jannat.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন