শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রমজানের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করুন

খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

রাসূল (সা.) রমজান আসার দু’মাস আগে থেকেই রমজান পাওয়ার জন্য দোয়া করতেন এবং বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। মূল্যবৃদ্ধির মানসিকতা পরিহার করে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত পাওয়ার আশায় রমজানের ইবাদতের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পেশ ইমাম গতকাল জুমার বয়ানে এসব কথা বলেন। জুমার নামাজে নগরীর মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব শাইখুল হাদিস মুহাম্মদ মুহিববুল্লাহিল বাকী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, রাসূল (সা.) রমজান আসার দু’মাস আগে থেকেই রমজান পাওয়ার জন্য দোয়া করতেন এবং বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। অথচ তার প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল না। আল্লাহতায়ালা তাকে যে অসংখ্য মর্যাদা দান করেছেন তার শুকর আদায় ও উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। বর্তমান মুসলিম সমাজের দিকে নজর দেয়া হলে দেখা যায় যে রমজানের ইবাদতের কোনো প্রস্তুতি নেই, তবে রমজানে খাওয়া-দাওয়াতে যেন ত্রুটি না হয়, তার জন্য রমজানের আগে থেকে বিভিন্ন আহার্য্য দ্রব্যাদি কিনে জমা ও মজুদ করে রাখা হয়। দুঃখের বিষয় হলো ব্যবসায়ীরা রমজান উপলক্ষে ছাড় দেয়ার পরিবর্তে মূল্যবৃদ্ধি করে। রমজানকে সামনে রেখে অতি মাত্রায় ভোগ ও মূল্যবৃদ্ধির মানসিকতা পরিহার করে রমজানের রহমত, মাগফিরাত, নাজাত পাওয়ার আশায় রমজানের ইবাদতের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের তৌফিক দান করেন- আমিন।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী বয়ানে বলেন, মুসলিম মিল্লাতের নিকট শবেবরাত বা শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত অতিব গুরুত্ববহ ও তৎপর্যপূর্ণ একটি রাত। হাদিস শরীফে উহাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়েছে। এ রাতের মহাত্ম ও ফজিলত সম্পর্কে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আয়শা (রা.) কে সম্বোধন করে বলেন, হে আয়শা! এ রাতে কি হয় জান? হজরত আয়শা (রা.) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ রাতে আগামী বছর যত শিশু জন্ম নিবে এবং যত লোক মৃত্যুবরণ করবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়, মানুষের বিগত বছরের সব আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং মানুষের রিজিক অবতীর্ণ হয়। (মিশকাত শরীফ ১ম খ-পৃ. ১১৫)। খতিব আরও বলেন, শবেবরাত বড় মহিমান্বিত রাত। এ রাত মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট খুবই প্রিয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে ইসলামের নির্দেশনার প্রতি আমল করার তৌফিক দান করেন- আমিন।

গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বয়ানে বলেন, মহিমান্নিত মাস মাহে রমজান আসন্ন। এ মাসেই পবিত্র কোরআন কারিম নাজিল হয়েছে। এ মাসের বহু ফজিলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে, এটি একটি বরকতময় মাস। তোমাদের উপরে আল্লাহতায়ালা অত্র মাসের সওম ফরজ করেছেন। এ মাস আগমনে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ী পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। (সুনানে নাসায়ী : ২১১০)। খতিব বলেন, রমজান মাসের প্রস্তুতির জন্য রাসূল (সা.) মূলত তিন প্রকার কৌশলে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। প্রথমত নফল রোজার মাধ্যমে রমজানের ব্যবহারিক প্রস্তুতি গ্রহণ।

দ্বিতীয়ত রমজানের বরকত হাসিলের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া। তৃতীয়ত চারপাশের সকলকে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাত সম্পর্কে সচেতন করা এবং তা অর্জনের জন্য উৎসাহিত করা, যাতে সকলে তা অর্জনের জন্য অগ্রসর হয়। রমজানের পূর্ববর্তী শাবান মাসে রাসুল (সা.) রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে নফল রোজা রাখতেন। আমরা আল্লাহর রাসূলের অনুকরণে এই তিন প্রক্রিয়ায় নিজেদের রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি।

ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম বলেন, শাবান মাস একটি মোবারক মাস। বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় যে, নবী কারিম (সা.) এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা পালন করতেন। শাবান মাসের রোজা ছিল তার কাছে সবচাইতে প্রিয়। এ মাসের প্রথম থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং কখনো কখনো প্রায় পুরো মাস তিনি নফল রোজা পালন করতেন। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ মাসে আল্লাহতায়ালার কাছে মানুষের আমল উঠানো হয়, আর আমি ভালোবাসি যে, আমার রোজা রাখা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক। (নাসায়ী শরীফ) এ মাসের একটি বিশেষ রাত হল শবে বরাত। নবী কারীম (সা.) বলেন, আল্লাহ সেভাবে তায়ালা নিসফে শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকরী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজা শরিফ) রমজান শরীফের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক এ শাবান মাসে এবং শবেবরাতে নবী করিম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে রোজা নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি মধ্যে কাটাতেন, আল্লাহতায়ালা আমাদেরকেও সেভাবে বিভিন্ন আমলের মধ্যে সময় লাগানোর তৌফিক দান করুন- আমিন।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বয়ানে বলেন, হিজরী বছরের গুরুত্বপূর্ণ মাস শাবান শুরু হয়েছে। মুমিনের কাক্সিক্ষত রমজান মাসের পূর্ববর্তী মাস এটি। ধর্মীয় বিবেচনায় এই মাসটি অনেক ফজিলতপূর্ণ। হাদীস শরীফে এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা শাবানের মধ্য রজনী বলা হয়েছে। আমরা যাকে ‘শবেবরাত’ বলি। এটি ফারসি শব্দ। শব মানে রাত, বারাআত মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। খতিব আরও বলেন, শবে বরাতকে ঘিরে আমাদের সমাজে রয়েছে দ্বিমুখী প্রান্তিকতা। কেউ কেউ শবে বরাতের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে চান, যা একদমই অনূচিত। আশা করি তাদের জন্য উপরোক্ত হাদীসের বিবরণ যথেষ্ট হবে। আর কেউ কেউ এ রাতকে ঘিরে পালন করেন এমনসব রুসুম রেওয়াজ, যা শরীয়ত বিবর্জিত এবং গোনাহের কাজ। বিশেষভাবে তওবা ইস্তেগফার, দোয়া কান্নাকাটি, সালাতুত তাসবিহ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত এবং নফল ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করেন- আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন